‘আমার হাজবেন্ড সালমান শাহকে খুন করাইছে আমার ভাইরে দিয়া’
বিনোদন ডেস্ক
প্রকাশ: ১৬ নভেম্বর ২০২৫, ১৪:০৪
ঢাকাই চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি নায়ক সালমান শাহের মৃত্যু নিয়ে নতুন করে চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে তাঁর একসময়ের ঘনিষ্ঠ পরিচিত রাবেয়া সুলতানা রুবির বক্তব্যে। তিনি প্রকাশ্যে দাবি করেছেন, সালমান শাহকে খুন করা হয়েছিল এবং এতে জড়িত তাঁর স্ত্রী সামিরা হক ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন।
১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর সালমান শাহর রহস্যজনক মৃত্যু হয়। শুরু থেকেই সালমানের পরিবার বলছে, এটি আত্মহত্যা নয়—হত্যা। অপমৃত্যুর মামলা দিয়েই বিষয়টি শুরু হলেও ২১ বছর পেরিয়ে গেলেও প্রমাণিত হয়নি তিনি আত্মহত্যা করেছেন নাকি খুন হয়েছেন।
সালমান শাহ হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে রেজভী আহমেদ ওরফে ফরহাদ নামে এক তরুণ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। সেই জবানবন্দির ওপর ভিত্তি করে সালমান শাহের মা নিলুফার চৌধুরী একটি নালিশি মামলা করেন। মামলায় তিনি মোট ১১ জনকে আসামি করেন।
এই ১১ জন আসামি হলেন: সামিরা হক (সালমান শাহের স্ত্রী), লতিফা হক লুসি (শাশুড়ি) ধনাঢ্য ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ, রেজভী আহমেদ ফরহাদ, চলচ্চিত্রের খল অভিনেতা আশরাফুল হক ডন, নজরুল শেখ, ডেভিড, রাবেয়া সুলতানা রুবি, মোস্তাক ওয়াইদ, গৃহকর্মী আবুল হোসেন খান।
রেজভী আহমেদের দেওয়া আদালতের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলা হয়, সালমান শাহকে হত্যার রাতে আশরাফুল হক ডনের নেতৃত্বে তারা সালমানের বাসায় যান। বাসার নিচতলায় একটি দরজা খুলে দেন রাবেয়া সুলতানা রুবি। পরে রুবির ঘর থেকে বের হয়ে আজিজ মোহাম্মদ ভাইও ওই হত্যাকাণ্ডে তাদের সঙ্গে যোগ দেন। রুবি ইস্কাটনে যে ভবনে সালমান থাকতেন, সেই ভবনের সামনেই ‘মে ফেয়ার’ নামে একটি বিউটি পারলার চালাতেন। তার স্বামী ছিলেন চীনা রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী।
২০১৭ সালে ইউটিউবে ছাড়া ভিডিওতে রুবি বলেছেন, সালমানকে খুন করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এই খুনের বিষয়ে আমি সব জানি। যেভাবেই হোক আবার যেন মামলা তদন্তের ব্যবস্থা করা হয়। আমি যেমন করেই হোক আদালতে সাক্ষ্য দেব।’ ভিডিওতে সালমানের মাকে উদ্দেশ করে তিনি বারবার বলেছেন, ‘ইমন আত্মহত্যা করে নাই, তাকে খুন করা হইছে।
নীলা ভাবি, প্লিজ, কিছু একটা করেন, কিছু একটা করেন।...আমার হাজব্যান্ড এইটা করাইছে আমার ভাইরে দিয়ে।...সামিরার ফ্যামিলি করাইছে...। আমার ছোট ভাই রুমিরে দিয়া খুন করানো হইছে। রুমিরেও খুন করা হইছে। আমি জানি না রুমির কবর কোথায় আছে। রুমির লাশ যদি কবর থেকে তুলে ঠিকমতো আবার পোস্টমর্টেম করে, তাহলে দেখা যাবে যে ওরা গলা টিপে মাইরা ফেলছে।...ওরা আমারেও খুন করার চেষ্টা করছে। এই কেস যেন না শেষ হয়।’
সেসময়ে মামলাটির তদন্ত সংস্থা পিবিআইর বিশেষ পুলিশ সুপার আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘সালমান শাহের বিউটিশিয়ান হিসেবে ছিলেন রুবি। সালমানের বাসায় প্রায়ই যেতেন। ঘটনার আগে-পরে ওই বাসাতেই তার অবস্থান ছিল। সালমান মারা যাওয়ার পরে রুবি যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। আমরা তাকে খোঁজার ব্যাপক চেষ্টা করেছি। অনেক দিন পরে তাকে পেলাম ইউটিউবে। তবে তার কথাগুলো যাচাই করে দেখতে হবে তা কতটা সত্য আর কতটা মিথ্যা। আবার এমনও হতে পারে কেউ তাকে দিয়ে বলাচ্ছে। এসবই তদন্তের বিষয়।’
যোগাযোগ করা হলে লন্ডনে অবস্থানরত সালমান শাহর মা নিলুফার চৌধুরী বলেছিলেন, ‘তার এ বক্তব্যের পরে বলার আর কোনো অপেক্ষা রাখে না যে আমার ছেলেকে খুন করা হয়েছিল। আমি জানতাম এই দিনটা আমার আসবে। রুবি এখন যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়ায় আছে। তাকে নিরাপত্তা দিয়ে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনা হোক। আর রুবি যাদের নাম বলেছে, তাদের এখনই গ্রেপ্তার করা হোক।’ তিনি বলেন, ‘আমি বিচার চাই। এত বছর আমি হতাশায় ভুগছি। দেশে আমারও নিরাপত্তা নেই। যার কারণে আমি লন্ডনে আছি।’
ডিআর/এনএ

