পায়ের গোড়ালিতে মনিটর
অবৈধ অভিবাসীদের ওপর নজরদারি জোরদার করলো ট্রাম্প প্রশাসন

নিউইয়র্ক প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১১ মে ২০২৫, ১২:৩৯

যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন ও শুল্ক প্রয়োগ সংস্থা (আইসিই) অভিবাসীদের ওপর নজরদারি বহুগুণে বাড়িয়ে দিচ্ছে। অভ্যন্তরীণ সূত্রগুলো জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসননীতি পুনরায় জোরদার করার লক্ষ্যে চলমান এই কার্যক্রমে প্রায় ৪৫ লাখ অভিবাসীকে পর্যবেক্ষণে রাখা হচ্ছে।
নতুন এই ব্যবস্থায় আইসিই অফিসে নিয়মিত চেক-ইনের জন্য হাজির হওয়া অভিবাসীদের এখন অনেককেই পায়ে নজরদারির ডিভাইস পরিয়ে ছাড়া হচ্ছে। কেউ কেউ হাতে ডিভাইস অথবা স্মার্টফোন অ্যাপেও নজরদারির আওতায় থাকছেন।
আইসিই সূত্র জানায়, যারা অবৈধভাবে সীমান্ত পার হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছেন, তাদের নিয়মিত চেক-ইন প্রক্রিয়ায় অনীহা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এক কর্মকর্তা বলেন, ‘এখন নতুন শেরিফ এসেছে। সংস্থা আগের মতো নরম নয়, বরং অভিবাসীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতেই এসব পদক্ষেপ।’
যদিও এসব অভিবাসীর বিরুদ্ধে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে বহিষ্কারের আদেশ জারি হয়নি, তবুও কর্তৃপক্ষের ধারণা, অভিবাসন আদালতের শুনানির অপেক্ষায় থাকা এসব ব্যক্তি যেকোনো সময় যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেওয়া হতে পারেন।
আইসিইর লক্ষ্য, অভিবাসীরা যেন নিয়মিতভাবে আদালতে উপস্থিত হন এবং অপরাধে না জড়ান। নতুন নজরদারি ব্যবস্থায় যদি কেউ ডিভাইস খুলে ফেলেন বা চেক-ইনে ব্যর্থ হন, তবে দ্রুত তাদের খুঁজে বের করে গ্রেপ্তার করার নির্দেশ জারি থাকবে। সেইসঙ্গে ফৌজদারি মামলার মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
এক কর্মকর্তা মন্তব্য করেন, ‘বাইডেন প্রশাসনের সময় পালিয়ে যাওয়া অভিবাসীদের নিয়ে তেমন কড়াকড়ি ছিল না। কিন্তু এখন সেই নীতি বদলেছে।’
সূত্র মতে, ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে 'হাজার হাজার' নজরদারি ডিভাইস পাঠানো হয়েছে। ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত হচ্ছে ‘ইনটেনসিভ সুপারভিশন অ্যাপিয়ারেন্স প্রোগ্রাম’— যা বাইডেন আমলে ধীরে ধীরে সীমিত করা হয়েছিল।
গত মাসের তথ্যে দেখা গেছে, আইসিই বর্তমানে ১ লাখ ৮৩ হাজার অভিবাসীকে ট্র্যাক করছে। এর মধ্যে প্রায় ১৮ হাজার জন পায়ে নজরদারি ডিভাইস পরে আছেন। বাকিদের ট্র্যাক করা হচ্ছে হাতঘড়ির মতো যন্ত্র বা ফোন অ্যাপের মাধ্যমে।
এই ব্যবস্থায় একজন অভিবাসীর পেছনে নজরদারির গড় দৈনিক খরচ ২.৭৫ ডলার, যেখানে তাকে আটক রাখার খরচ দাঁড়ায় প্রায় ১৫২ ডলার। তাই আইসিই চাইছে আরও বেশি অভিবাসীকে এই তুলনামূলক সাশ্রয়ী ট্র্যাকিং প্রযুক্তির আওতায় আনতে।
নতুন পদ্ধতিতে অভিবাসীদের চার, আট বা বারো সপ্তাহ অন্তর রিপোর্ট করতে বলা হচ্ছে। এক আইসিই কর্মকর্তা বলেন, ‘অভিবাসীরা এখন পালিয়ে যাচ্ছেন এবং রিপোর্ট করতে অনীহা দেখাচ্ছেন। তাই এই ব্যবস্থা তাদের নিয়ন্ত্রণে আনতেই জরুরি হয়ে পড়েছে।’
এই উদ্যোগে সহযোগিতা করছে বিআই ইনক. নামের একটি সরকার অনুমোদিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান, যারা প্রয়োজনে অভিবাসীদের স্বদেশে ফেরার কাগজপত্র সংগ্রহেও সহায়তা করবে।
যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতিতে এ ধরনের কঠোর নজরদারি ভবিষ্যতে আরও জোরদার হতে পারে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকেরা।
এমএইচএস