
কানাডার নতুন প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি তার মন্ত্রিসভার নাম ঘোষণা করে শপথ নিয়েছেন। এবারের মন্ত্রিসভায় নতুন পুরাতনের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নির মন্ত্রিসভার মূল উদ্দেশ্যে "বিল্ড বেবী বিল্ড" বা শক্তিশালী কানাডা গঠন এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে ট্যারিফ যুদ্ধের মোকাবেলা করা।
এবারের মার্ক কার্নি'র মন্ত্রিসভায় তিনি নিজেসহ মোট মন্ত্রিসভার সদস্যসংখ্যা ২৯ জন। এছাড়াও "সেক্রেটারি অফ স্টেট" নামে আরো দশজন কে তিনি নিয়োগ দিয়েছেন। তার মন্ত্রিসভায় ২৮ জনের মধ্যে ২৪ জনই নতুন মুখ। এরমধ্যে ১৩ জন প্রথমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হয়েছেন।
অন্যদিকে মার্ক কার্নি মন্ত্রিসভায় গুরুত্বপূর্ণ পদে অভিজ্ঞদের পাশাপাশি নতুনদের ও রেখেছেন। তিনি মনে করেন, কানাডার চ্যালেঞ্জের এই মুহূর্তে অভিজ্ঞদের খুব দরকার। এরমধ্যে ফ্রান্সোইস-ফিলিপি চামপেন অর্থমন্ত্রী, মিলানী জলি শিল্প মন্ত্রী, অনিতা আনান্দ পররাষ্ট্র মন্ত্রী এবং ডমিনিক লি ব্লানক ইন্টার গভর্নমেন্টাল অ্যাফেয়ার্স মন্ত্রী। এই চার মন্ত্রণালয়ে তিনি অভিজ্ঞদের রেখেছেন। যারা জাস্টিন ট্রুডো'এর সরকারের মন্ত্রীসভায়ও ছিলেন।
এছাড়াও আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ অভিবাসী মন্ত্রী হিসেবে তিনি নোভাসকোশিয়ার নতুন এমপি লিনা দিয়াব কে দায়িত্ব দিয়েছেন। ফেডারেল পার্লামেন্টে তিনি নতুন হলেও এর আগে তিনি প্রভিন্সিয়াল পার্লামেন্টে ছিলেন।
কানাডার বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে অভিবাসন মন্ত্রী পদটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি পদ। সাবেক প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো'এর মন্ত্রিসভায় দেখা গেছে অভিবাসন মন্ত্রীরা দুই বছরের বেশি মেয়াদ উত্তীর্ণ করতে পারেনি। বিভিন্ন কারণে তাঁরা থাকতে পারে নি। অন্যদিকে"সেক্রেটারি অফ স্টেট" পদে যারা থাকবেন তাদের বিশেষ কিছু দায়িত্ব দেয়া হবে।
উল্লেখ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো' ও মার্ক কার্নির প্রথম মন্ত্রিসভায় মন্ত্রী ছিলেন এমন অনেক গুরুত্বপূর্ণ হেভি ওয়েটের মন্ত্রী নতুন মন্ত্রিসভায় বাদ পড়েছে। এরমধ্যে বাঙালি অধ্যুষিত এলাকার বিল ব্লেয়ার ও নাথানিয়াল দুজন মন্ত্রীর সাথেই বাঙালি কমিউনিটির খুবই ভালো সম্পর্ক ছিল। তাঁরা মার্ক কার্নির নতুন মন্ত্রিসভায় স্থান পায়নি।
এদিকে মার্ক কার্নির নতুন মন্ত্রিসভার বেশিরভাগ সদস্যই নতুন মুখ হওয়ায় অনেকেই বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য করছেন। তবে মার্ক কার্নি বলেছেন, নতুন এই মন্ত্রিসভার প্রথম এবং প্রধান কাজ হবে কানাডার বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থাকে উন্নয়নের দিকে নিয়ে যাওয়া। "বিল্ড বেবী বিল্ড" বা শক্তিশালী কানাডার উন্নয়নে তার যে থিওরি তা বাস্তবায়নের জন্যই তিনি নতুন মুখ নিয়ে মন্ত্রিসভা গঠন করেছেন এবং তাদেরকে নিয়েই তিনি কানাডার জনগণের উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির উন্নয়নে কাজ করবেন। এবং এছাড়াও তিনি নতুন মুখের
মন্ত্রিসভা নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে ট্যারিফ যুদ্ধের মোকাবেলা করতে চান। তিনি মনে করেন, এই মন্ত্রিসভাই পারফেক্ট বা যথোপযুক্ত যা অর্থনৈতিক উন্নয়নে ও নতুন কানাডার জন্য কাজ করবে।
অন্যদিকে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, অভিজ্ঞতা কম বা বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়, কতটা তারা কাজ করবে সেটাই এখন কানাডার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
মন্ত্রিসভার শপথ গ্রহণের পর কনজারভেটিভ পার্টির বিরোধী দলীয় নেতা পিয়েরে পয়লিয়েভ নতুন মন্ত্রিসভা কে অভিনন্দন জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ভালো কাজে আমার ও আমার দলের সমর্থন থাকবে, ভালো না হলে কঠোর সমালোচনা করবো।
উল্লেখ্য লিবারেল পার্টি গত ২৮ এপ্রিলের নির্বাচনে এখন পর্যন্ত ১৭০টি আসন পেয়েছে যেখানে ১৭২ টি আসন হলে তাঁরা নিজেরাই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেত। কিন্তু মাত্র দুটি আসনের জন্য এখন তাদের যে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ব্যাপারে অন্য দলের উপর নির্ভর করতে হবে।
তবে মার্ক কার্নি স্পষ্ট করে বলেছেন, যে যাকেই ভোট দিক না কেন, তিনি কানাডার জনগণের প্রধানমন্ত্রী। কোন দলের নয়। আর এই মানসিকতা নিয়েই তিনি কাজ করবেন। অন্যদিকে বিশ্লেষকরা বলছেন, পুরো কানাডা তাকিয়ে আছে মার্ক কার্নির দিকে --দেখা যাক, এখন শুধু অপেক্ষার পালা!!
লায়লা নুসরাত/এমআই