দেড় কোটি অভিবাসী গ্রেপ্তারের লক্ষ্যমাত্রা ট্রাম্পের

নিউইয়র্ক প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৭ জুন ২০২৫, ১৫:৫৩

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি : সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় গণবহিষ্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচনী প্রচার চালিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এখন পর্যন্ত তিনি যা বাস্তবায়ন করেছেন, তা হলো অভিবাসন ও শুল্ক প্রয়োগ সংস্থা (আইসিই) দ্বারা যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত অভিবাসীদের ব্যাপকহারে গ্রেপ্তারের এক নাটকীয় উল্লম্ফন।
তথ্য অনুযায়ী, ট্রাম্পের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে অভ্যন্তরীণ অভিযান দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে, যার ফলে দেশের বিভিন্ন স্থানে ইমিগ্রেশন আটক কেন্দ্রগুলো ভর্তি হয়ে গেছে। কর্মস্থল, আদালত ও বাসাবাড়িতে আইসিই এজেন্টদের তৎপরতা বেড়ে যাওয়ায় গত সপ্তাহে লস অ্যাঞ্জেলেসে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ শুরু হয়। রাজ্য ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষের আপত্তি উপেক্ষা করে ট্রাম্প ক্যালিফোর্নিয়ায় ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করলে এই বিক্ষোভ আরও উত্তপ্ত হয় এবং সহিংসতায় রূপ নেয়।
ট্রাম্প প্রশাসনের ত্বরান্বিত আইসিই গ্রেপ্তারের ফলে এখন বহিষ্কারের সংখ্যাও দ্রুত বাড়ছে বলে মনে করা হচ্ছে। বাইডেন আমলে যেখানে বহিষ্কারের মোট সংখ্যা ছিল স্থিতিশীল, এখন সেই সংখ্যা হঠাৎ করেই বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ট্রাম্প আমলে আইসিই গ্রেপ্তারে ব্যাপক বৃদ্ধি
ট্রাম্পের প্রথম ছয় মাসে দক্ষিণ সীমান্তে গ্রেপ্তারের সংখ্যা হ্রাস পায়। এর পরিবর্তে, ইমিগ্রেশন আটক কেন্দ্রে এখন যারা রয়েছেন, তাদের বেশিরভাগই আইসিই কর্তৃক গ্রেপ্তার হওয়া অভিবাসী। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ট্রাম্পের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে আটক ব্যক্তির সংখ্যা ২৫ শতাংশ বেড়েছে।
এই প্রবণতা বাইডেন প্রশাসনের বিপরীত। বাইডেন আমলে অধিকাংশ আটককৃত ব্যক্তি ছিলেন সীমান্ত পেরিয়ে আসা, যাদের কাস্টমস ও বর্ডার প্রোটেকশন (সিবিপি) গ্রেপ্তার করেছিল। এর মাধ্যমে দ্রুত বিচার ও ফেরত পাঠানোর পথ তৈরি হয়েছিল। তবে বর্তমানে সীমান্ত অতিক্রমকারীর সংখ্যা কমে যাওয়ায় এই পরিবর্তন ঘটেছে।
ট্রাম্পের সীমান্ত উপদেষ্টা টম হোম্যান সম্প্রতি টাইমকে বলেন, তিনি চান আইসিই-এর বন্দী রাখার স্থান ৫০,০০০ থেকে দ্বিগুণ করে ১ লাখ করা হোক, যাতে গ্রেপ্তার ও বহিষ্কারের গতি আরও বাড়ানো যায়।
বহিষ্কারের হার এখন ঊর্ধ্বমুখী
ট্রাম্প টাইমকে বলেছিলেন, তিনি ১.৫ কোটি অভিবাসীকে বহিষ্কারের লক্ষ্য নিয়েছেন এবং প্রয়োজনে সেনাবাহিনী ব্যবহার করতেও রাজি, যদিও পোস কমিটিটাস আইন অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরে সেনাবাহিনীর ব্যবহার সীমিত।
অক্টোবরে শেষ হওয়া ২০২৪ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্র ২৭১,৪৮৪ জনকে বহিষ্কার করেছে। এপ্রিলের শেষ নাগাদ, প্রশাসনের মতে ১,৩৯,০০০ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছিল, যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কম। তবে জুনে আপডেট দেওয়া তথ্যে দেখা যায়, এই সংখ্যা ২,০৭,০০০ ছাড়িয়ে গেছে-যা বহিষ্কারের গতিতে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি নির্দেশ করে।
মে মাসে আইসিই বহিষ্কারের ফ্লাইটের সংখ্যা বাড়িয়েছে, যা আরও ত্বরান্বিত বহিষ্কারের ইঙ্গিত দেয়। ট্রাম্প প্রশাসন কংগ্রেসে নতুন আইন 'বিগ বিউটিফুল বিল'- এর জন্য চাপ দিচ্ছে, যেখানে অভিবাসন ও সীমান্ত নিরাপত্তার জন্য ১৬৮ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে-যা বর্তমান বরাদ্দ ৩৩ বিলিয়ন ডলারের তুলনায় পাঁচ গুণ বেশি।
বহিষ্কারের পথে বাধা ও বিতর্ক
বহিষ্কৃতদের পাঠানোর দেশ খুঁজে পাওয়াও বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। ট্রাম্প প্রশাসন বিতর্কিতভাবে এল সালভাদরের বেরুচটিগেট একটি কারাগার ও গুয়ানতানামো বেসামরিক ঘাঁটিতে অভিবাসীদের পাঠাচ্ছে এবং কিছু ক্ষেত্রে পানামা ও দক্ষিণ সুদানের ফ্লাইটেও তাদের তুলে দিচ্ছে। হোম্যান জানিয়েছেন, প্রশাসন আরও তিনটি দেশের সঙ্গে আলোচনা করছে।
যেহেতু বহিষ্কারের গতি আশানুরূপ নয়, তাই আইসিই ও অন্যান্য সংস্থার ওপর আরও গ্রেপ্তার বাড়ানোর চাপ তৈরি করা হয়েছে।
এছাড়াও, ট্রাম্প ‘স্বেচ্ছা বহিষ্কার’ প্রচার চালাচ্ছেন, যেখানে অভিবাসীদের ১,০০০ ডলার নগদ এবং ফ্রি ফ্লাইট অফার করা হচ্ছে, যদি তারা নিজের ইচ্ছায় ফিরে যান। কিন্তু এত প্রলোভনেও ট্রাম্প যেভাবে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, সেই হারে মানুষ দেশ ছাড়ছে না।
মাইগ্রেশন পলিসি ইনস্টিটিউটের সিনিয়র ফেলো মুজাফ্ফর চিশতী বলেন, এই ‘স্বেচ্ছা বহিষ্কার’ প্রচার আমেরিকার ইতিহাসে নজিরবিহীন।
তিনি বলেন, ‘যখন তারা বুঝতে পারল যে দ্রুত বহিষ্কার এত সহজ নয়, তখনই তারা বিপুল পরিসরে স্বেচ্ছা বহিষ্কারের ধারণা বিক্রি করতে শুরু করল-যেটা সম্ভবত অতীতে কখনো ঘটেনি।’
কৌশলী ইমা/এমআই