Logo

প্রবাস

ইসরায়েল-ইরান ইস্যুতে ট্রাম্পের ‘দ্বৈত অবস্থান’ নিয়ে প্রশ্ন

Icon

নিউইয়র্ক প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৫ জুন ২০২৫, ০৯:৫৩

ইসরায়েল-ইরান ইস্যুতে ট্রাম্পের ‘দ্বৈত অবস্থান’ নিয়ে প্রশ্ন

ছবি : সংগৃহীত

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের 'উভয় পক্ষের খেলা' বা দ্বৈত অবস্থানের কৌশল নিয়ে এখন প্রশ্ন উঠেছে, কারণ তিনি একদিকে যেমন ইসরায়েল ও ইরানের চলমান লড়াইয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন, তেমনি অন্যদিকে শান্তির আহ্বানও জানিয়ে চলেছেন।

মঙ্গলবার (২৪ জুন) সকালে ন্যাটো সম্মেলনের পথে হোয়াইট হাউসের লনে সাংবাদিকদের সামনে হঠাৎ রাগান্বিত হয়ে ট্রাম্প এমন ভাষা ব্যবহার করেন যা স্বভাবতই প্রেসিডেন্টদের কাছ থেকে শোনা যায় না। তিনি বলেন, ‘এই দুই পক্ষ জানেই না তারা কী … করছে।

এরপর ট্রাম্প বলেন, তিনি মূলত দুই পক্ষের প্রতিই সমালোচনামূলক মনোভাব পোষণ করছেন এবং শান্তির উদ্দেশ্যেই কাজ করছেন: ‘আমি শুধু দুই পক্ষেরই খেলা খেলি।’

এই কৌশল আদৌ সফল হবে কি না, তা নির্ভর করছে ইসরায়েল ও ইরান ট্রাম্পের আহ্বানে দীর্ঘমেয়াদে সাড়া দেয় কি না তার ওপর। তবে অনেক পররাষ্ট্র বিশ্লেষকের মতে, এ সংঘাত থামাতে আরও সংযত এবং কৌশলগত কূটনীতি দরকার।

ট্রাম্প প্রশাসনের প্রথম মেয়াদে ইরানবিষয়ক মার্কিন বিশেষ প্রতিনিধি এলিয়ট অ্যাব্রামস বলেন, যদি ট্রাম্প বা পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ইসরায়েলকে আগে থেকেই সংযত থাকতে বলতেন এবং প্রতিশোধমূলক হামলা থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করতেন, তাহলে ট্রাম্পের এই প্রকাশ্য ক্ষোভের প্রয়োজন হতো না।

তিনি বলেন, ‘যদি বলা হতো ‘তোমরা কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেবে জানাও, তবে তেহরান উড়িয়ে দিও না- কিছু সংযত করো,’ তাহলে সেটি কাজ করত।’

অ্যাব্রামস মনে করেন, ট্রাম্পের প্রকাশ্য ক্ষোভ পরিস্থিতির জন্য সহায়ক হয়নি এবং এটি আংশিক ‘পারফরম্যান্স’ হলেও অপ্রয়োজনীয় ছিল।

ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠদের মতে, প্রেসিডেন্টের নমনীয়তা এবং দ্রুত কৌশল পাল্টাতে পারার ক্ষমতা তাঁর বিদেশনীতি কৌশলে সুবিধা এনে দেয়। যদিও সমালোচকরা বলেন ট্রাম্পের অবস্থান অস্পষ্ট এবং তিনি মিত্রদের প্রতি অনড় নন, তাঁর সমর্থকরা বলেন, এটি তাঁর কৌশলগত নমনীয়তা।

হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা বলেছেন, ‘শুধুমাত্র ট্রাম্পই এই পরিস্থিতিতে ইরান থেকে এমন ফল বের করতে পেরেছেন।’ এই ব্যতিক্রমধর্মী পন্থা পরিস্থিতি অনুযায়ী ঘণ্টায় ঘণ্টায়ও বদলাতে পারে।

আমেরিকা ফার্স্ট পলিসি ইনস্টিটিউটের ফ্রেড ফ্লাইটজ বলেন, ট্রাম্প ও নেতানিয়াহুর মধ্যে মতবিরোধ থাকা স্বাভাবিক, তবে ট্রাম্প বরাবরই ইসরায়েলের পক্ষে থেকেছেন।

তিনি বলেন, ‘নেতানিয়াহু ট্রাম্পের পুতুল নন। তাকে তার দেশের স্বার্থ দেখতে হয়, ট্রাম্প যা বলেন সব কিছু অন্ধভাবে মানতে পারেন না। এতে মাঝেমধ্যে সংঘাত তৈরি হতেই পারে।’

ট্রাম্প ইরান–ইসরায়েল ইস্যুতে এই “উভয় পক্ষ” কৌশল আগেও ব্যবহার করেছেন বলে একজন ট্রাম্পঘনিষ্ঠ নেতা জানান। যেমন ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়েও তিনি প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির প্রতি সমালোচনামূলক মন্তব্য করেছেন আবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনকে নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

মঙ্গলবার ট্রাম্প যখন ন্যাটো সম্মেলনে যোগ দিতে নেদারল্যান্ডস যাচ্ছিলেন, তখন তিনি ট্রুথ সোশালে একের পর এক পোস্ট দিতে থাকেন। হোয়াইট হাউস ত্যাগের সময় তিনি ক্ষুব্ধ ছিলেন, কিন্তু এরপর তার পোস্টগুলোতে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার আভাস পাওয়া যায়।

এয়ার ফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের বলেন, ‘যুদ্ধবিরতি খুব কার্যকরভাবে চলছে এবং আমি মনে করি আমরা এটি অনেকদিন ধরে রাখতে পারব।’

তিনি বলেন, ‘আমি বলেছিলাম, ‘তোমাদের প্লেন ফিরিয়ে আনতে হবে।’ ইসরায়েল মঙ্গলবার সকালে পাল্টা আঘাত করতে যাচ্ছিল, আমি বলেছিলাম, ‘এটাই যথেষ্ট, ফিরে যাও।’ তারা ফিরে গেছে, যা আমি অত্যন্ত শ্রদ্ধা করি।’

মঙ্গলবার রাতে পর্যন্ত যুদ্ধবিরতি মোটামুটি বজায় ছিল, এবং ইরানের দিক থেকে নতুন করে আক্রমণের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। ট্রাম্প বলেন, যুদ্ধবিরতির শুরুর আগের রাতে যে সংঘর্ষ হয়েছে। সে কারণে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না।

রিপাবলিকান সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম ফক্স নিউজে বলেন, ট্রাম্পের হতাশা তিনি বুঝতে পারেন, তবে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে কোনো নৈতিক সমতা নেই। “ইসরায়েল আমাদের বন্ধু, আর ইরান আমাদের শত্রু,” তিনি বলেন।

যুক্তরাষ্ট্র গত শনিবার তিনটি ইরানি পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা হামলা চালিয়ে ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে সরাসরি জড়িয়ে পড়ে। জবাবে ইরান কাতারে একটি মার্কিন ঘাঁটির ওপর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়, যদিও আগে থেকেই সতর্কতা জানানোয় কোনও হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

ট্রাম্প পরে যুদ্ধবিরতির কাঠামো ঘোষণা করেন, কিন্তু সোমবার রাতেও দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ চলতে থাকে — যা নিয়ে মঙ্গলবার সকালে ট্রাম্প আবার অসন্তোষ প্রকাশ করেন।

এলিয়ট অ্যাব্রামস বলেন, ট্রাম্প ইসরায়েল ও ইরানের ওপর রেগে গিয়েছেন এতে তিনি অবাক হয়েছেন, তবে যোগ করেন, “তার মন্তব্যের পেছনে কী তথ্য ছিল তা বলা কঠিন।”

তিনি বলেন, ‘কে জানে ফোনে কেউ তাকে কী বলেছে, বা কী টুইট পড়ে তিনি ক্ষেপে গেছেন। হতে পারে তিনি পরিস্থিতিটাই পুরোপুরি বোঝেননি।’
কৌশলী ইমা/এমআই

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ ডোনাল্ড ট্রাম্প

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর