Logo

প্রবাস

নিউইয়র্কের সাহসী পুলিশ অফিসার বাংলাদেশের রানা

Icon

মিলু মাহমুদ

প্রকাশ: ২২ জুলাই ২০২৫, ২১:১৩

নিউইয়র্কের সাহসী পুলিশ অফিসার বাংলাদেশের রানা

আবু ইউসুফ রানা

সফলতা কখনো হঠাৎ করে ধরা দেয় না। এটি গড়ে তুলতে হয় কঠোর পরিশ্রম, অধ্যবসায় আর অটল লক্ষ্য নিয়ে। জীবনের পথে যিনি নিজের ভেতরের আলো জ্বালিয়ে রাখতে পারেন, তিনিই একদিন হয়ে ওঠেন সমাজের প্রেরণার বাতিঘর। এমনই এক মানুষ শরীয়তপুরের কীর্তিনগরের সন্তান আবু ইউসুফ রানা। বাংলাদেশের গণ্ডি পেরিয়ে আজ তিনি নিউইয়র্ক সিটি পুলিশ ডিপার্টমেন্টের (এনওয়াইপিডি) একজন সম্মানিত পুলিশ অফিসার। প্রবাসের ব্যস্ত রাস্তায় তার ডিউটির দৃশ্য যেন হাজার মাইল দূরে থাকা বাংলাদেশিদের মনে বয়ে আনে গর্বের উচ্ছ্বাস।

ঢাকার মধ্য বাড্ডায় বেড়ে ওঠা ইউসুফ ছিলেন পরিবারের সবচেয়ে ছোট সদস্য। শৈশব থেকেই আর্থিক সীমাবদ্ধতা তাকে তাড়া করলেও তিনি হার মানেননি। বরং সেই বাস্তবতাই হয়ে উঠেছিল তার মনের জেদ আর স্বপ্নকে তীব্র করার রসদ। সমাজের জন্য কিছু করার প্রবল আকাঙ্ক্ষা তাকে নিয়ে গেছে বহু দূর— যেখানে তিনি এখন আইনশৃঙ্খলার রক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

২০১৪ সালে উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। নিউইয়র্ক সিটি কলেজ অব টেকনোলজিতে ভর্তি হয়ে তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে পড়াশোনা করেন। একদিকে পড়াশোনা, অন্যদিকে রেস্তোরাঁয় কাজ, ট্যাক্সি চালানো— প্রবাসের কঠিন বাস্তবতা তাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। বরং প্রতিটি চ্যালেঞ্জই তাকে আরও দৃঢ় করেছে। ২০২১ সালে তিনি সাফল্যের সঙ্গে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেন। 

২০১৮ সালে এনওয়াইপিডিতে যোগ দেন ক্যাডেট হিসেবে। এরপর দীর্ঘ প্রশিক্ষণ, পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং মাঠপর্যায়ের অভিজ্ঞতা অর্জনের পর ২০২৫ সালের মে মাসে পূর্ণাঙ্গ পুলিশ অফিসার হিসেবে শপথ নেন। তার এই অর্জন শুধু তার নয়, বরং বাংলাদেশি কমিউনিটির জন্যও এক অসীম গর্বের বিষয়।

ইউসুফের বড় ভাই জুয়েল রানা ইতোমধ্যেই এনওয়াইপিডিতে কর্মরত আছেন। দুই ভাই এখন একসাথে নিউইয়র্কবাসীর নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন। জুয়েল বলেন, ‘ইউসুফের এই অর্জন আমাদের পরিবারের জন্য শুধু আনন্দ নয়, এটি আমাদের মাতৃভূমির জন্যও গর্বের। আইনশৃঙ্খলার এই কঠিন পেশায় তার সততা ও নিষ্ঠা আমাকে অনুপ্রাণিত করে।’ 

ইউসুফ রানা মনে করেন, প্রবাসে থেকেও দেশের প্রতি ভালোবাসা কখনো ফিকে হয় না। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সন্তান হিসেবে আমি গর্ব বোধ করি। নিউইয়র্কের রাস্তায় দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমার সবসময়  মনে রাখি, আমি দুই দেশের মানুষের জন্যই কাজ করছি। আমার পেশা শুধু একটি চাকরি নয়, এটি মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সুযোগ।’ 

তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়েও তার আলাদা দক্ষতা রয়েছে। সফটওয়্যার টেস্টিং, জাভা প্রোগ্রামিংয়ের মতো বিষয়েও পারদর্শী তিনি। অবসরে ভ্রমণ, ফটোগ্রাফি ও নতুন কিছু শেখার প্রতি রয়েছে তার গভীর টান। ইউসুফের স্বপ্ন, একদিন আকাশ থেকে পৃথিবীকে দেখবেন— যেখানে থাকবে কৌতূহল, মুক্তি আর এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি। 

আজ ইউসুফ রানা বাংলাদেশের প্রবাসী সমাজের কাছে এক অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব। তার সংগ্রামী জীবনের গল্প শেখায়, সৎ উদ্দেশ্য আর কঠোর পরিশ্রম থাকলে স্বপ্ন বাস্তব হয়। যেখানে প্রতিদিন হাজারো মানুষ প্রবাসে স্থির জীবনের খোঁজে লড়াই করছে, সেখানে ইউসুফ রানা প্রমাণ করেছেন— অদম্য মনোভাব আর নিষ্ঠা থাকলে সাফল্যের শিখর স্পর্শ করা সম্ভব।

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর