Logo

প্রবাস

কানাডায় ইমিগ্রেশন ব্যবস্থায় পরিবর্তন, চ্যালেঞ্জের মুখে অভিবাসীরা

Icon

লায়লা নুসরাত, কানাডা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৬ নভেম্বর ২০২৫, ১৫:৪৫

কানাডায় ইমিগ্রেশন ব্যবস্থায় পরিবর্তন, চ্যালেঞ্জের মুখে অভিবাসীরা

ফাইল ছবি (সংগৃহীত)

কানাডার ফেডারেল বাজেট ২০২৫ ঘোষণা করেছে দেশটির সরকার। বাজেটে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী, ওয়ার্কার পারমিট, পার্মানেন্ট এবং নতুন আসা অভিবাসীদের ক্ষেত্রে বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে।

উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন দেখা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য সামনের দিনগুলো দুঃসংবাদ বয়ে এনেছে। ফেডারেল বাজেট ২০২৫-এর ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৬ সালের জন্য নতুন আন্তর্জাতিক স্টাডি পারমিটের লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ৪৯ শতাংশ কমিয়ে মাত্র ১,৫৫,০০০ নির্ধারণ করা হয়েছে। আবাসন সংকট এবং নাগরিক পরিষেবার ওপর চাপ কমাতেই সরকারের এই কঠোর পদক্ষেপ।

ফলে কানাডার উচ্চশিক্ষা খাত, যা এতদিন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি-র ওপর নির্ভর করত, সেখানে বড় ধরনের আর্থিক ধাক্কা লাগার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ২০২৫ সালের লক্ষ্যমাত্রা ৪,৩৭,০০০ থেকে কমে ২০২৬-এ ১,৫৫,০০০, ২০২৭-এ ১,৫০,০০০ এবং ২০২৮-এ ১,৫০,০০০। ফলে শিক্ষাক্ষেত্রে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিলিয়ন ডলারের বেশি ঘাটতির ঝুঁকি রয়েছে।

কানাডার ফেডারেল বাজেট ২০২৫-এ স্থায়ী অভিবাসনের (পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি) লক্ষ্যমাত্রা স্থিতিশীল রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও, দেশের অভিবাসন নীতিতে বড় ধরনের কৌশলগত পরিবর্তন এসেছে। সরকার এখন থেকে পরিমাণ নয়, দক্ষতার ওপর জোর দিচ্ছে।

অন্যদিকে, স্থায়ী অভিবাসী সংখ্যা স্থিতিশীল হলেও নিম্নগামী। দেশটির সরকার ২০২৫ সালের লক্ষ্যমাত্রা ৩,৯৫,০০০ থেকে কমিয়ে ২০২৬ থেকে ২০২৮ সাল পর্যন্ত বছরে ৩,৮০,০০০ স্থায়ী অভিবাসী আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে জনসংখ্যা ও আবাসন সংকটের ওপর চাপ কমাতে অভিবাসীর সংখ্যা স্থিতিশীল রেখে একটি সংযত হার বজায় রাখা হচ্ছে। মোট সংখ্যার মধ্যে অর্থনৈতিক অভিবাসীদের সংখ্যা ৬৫ শতাংশ করার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। ফলে দেশটির শ্রমবাজারে, বিশেষ করে স্বাস্থ্যসেবা এবং প্রযুক্তি খাতের ঘাটতি পূরণে যারা দক্ষ, তাদেরই এখন স্থায়ী বসবাসের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

ফেডারেল বাজেট ২০২৫-এর সবচেয়ে ইতিবাচক দিকগুলির মধ্যে একটি হলো, যেসব অস্থায়ী কর্মী বর্তমানে কানাডায় অবস্থান করছেন, তাদের জন্য স্থায়ী বাসিন্দা (পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি) হওয়ার প্রক্রিয়াকে দ্রুত করার বিশেষ উদ্যোগ। ২০২৬ সালে প্রায় ৩৩,০০০ ওয়ার্ক পারমিট হোল্ডারকে দ্রুত স্থায়ী বাসিন্দা স্ট্যাটাসে উন্নীত করার জন্য একটি 'লক্ষ্যযুক্ত, এককালীন উদ্যোগ' নেওয়া হয়েছে। এটি অভিবাসন লক্ষ্যমাত্রার নিয়মিত কোটার অতিরিক্ত। সরকার স্বীকার করছে যে অস্থায়ী কর্মীরা, বিশেষ করে স্বাস্থ্যসেবা এবং অন্যান্য শ্রম ঘাটতি থাকা খাতগুলোতে যারা কাজ করছেন, তারা কানাডার অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন।

কানাডার ইউনিভার্সিটি অব ক্যালগেরিতে মাস্টার্সে অধ্যয়ন শেষ করে বর্তমানে চাকুরীরত বাংলাদেশি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী নাঈম উল হাসান মিডিয়াকে বলেন, সম্প্রতি আবাসন সংকট, জীবনযাত্রার মান ও টিউশন ফি বৃদ্ধির কারণে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে গেছে। এর মধ্যে কানাডিয়ান সরকারের এমন সিদ্ধান্ত নতুন শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে আগ্রহ কমাতে পারে।

কানাডার রেগুলেটেড কানাডিয়ান ইমিগ্রেশন কনসালট্যান্ট সিদ্দিকুর রহমান মিডিয়াকে বলেন, ‘কানাডার ইমিগ্রেশন ভেঙ্গে পড়েনি, সরকার ইমিগ্রেশন ব্যবস্থা বন্ধও করেনি। তবে তারা যেটি করেছে তা হলো ইমিগ্রেশন ব্যবস্থাকে বিগত দিনের চেয়ে আরও শক্ত ও মজবুত করেছে। যারা কানাডায় আসতে চান, তাদের পরামর্শ, ইমিগ্রেশন সংক্রান্ত যেকোনো বিষয়ের তথ্য আগে সঠিকভাবে জেনে তারপর যাত্রা শুরু করুন। তাহলেই কেবল আশা করা যায় এই যাত্রায় সফল হবেন, আর না হলেও অন্তত বিপদগ্রস্ত হবেন না।’

অন্যদিকে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, কানাডা এখন ‘গুণমানের দিকে ঝুঁকছে, ভিড় কমাচ্ছে’। শিক্ষার্থীদের জন্য দেশটি আর আগের মতো সহজে সবার জন্য প্রবেশযোগ্য গন্তব্য থাকবে না; এখন শুধু প্রকৃত যোগ্যরাই কানাডায় আসতে পারবে।

এমএইচএস

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

কানাডা

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর