
শেকড়ের মতো মায়ের প্রতি টান আমাদের জন্মগত। মায়ের ভাষায় প্রথম কথা, মায়ের কোলে প্রথম শান্তি। জীবনের যতো ব্যস্ততা থাকুক, দিনশেষে আমরা মায়ের মুখটাই খোঁজি। তার সঙ্গে দুঃখ ভাগ করে নিতে পারলেই যেন হালকা লাগে মন।
সময় বদলায়, আমরাও বড় হই—কিন্তু মা? তিনি ধীরে ধীরে বয়সের ভারে নুয়ে পড়েন। যে মা একদিন আমাদের হাত ধরে চলতে শিখিয়েছেন, আজ কি আমরা তার হাতে ভালোবাসার ছায়া দিতে পারি না? মা তো শুধু একটা সম্পর্ক নয়, মা হলেন আত্মার ঠিকানা।
বিশ্ব মা দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশের খবরের সঙ্গে কথা বলেছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। মতামত তুলে ধরেছেন তানজিল কাজী—
সৃষ্টির শ্রেষ্ঠতম উপহার
মানবজাতির মধ্যে স্রষ্টার সবচেয়ে সুন্দর সৃষ্টি মা। শিশুর কাছে যেমন এই পৃথিবীটা নতুন, তেমনি নবজাতকের মা হওয়াও প্রতিটি নারীর জীবনের নতুন অধ্যায়। শিক্ষিত বা অশিক্ষিত, মা হওয়া মানেই সন্তানের প্রতি নিঃশর্ত দায়িত্ব ও ভালোবাসা।
প্রথমদিকে অনভিজ্ঞতা, পারিবারিক চাপ, স্বাস্থ্যগত জটিলতা কিংবা মানসিক উদ্বেগ—সব মিলিয়ে একজন নতুন মায়ের পথটা সহজ নয়। বিশেষ করে কর্মজীবী মায়েরা একক পরিবারে থেকে বহু গ্লানির মুখোমুখি হন। সন্তান অসুস্থ হলে পরিবার থেকে সহানুভূতির বদলে উপদেশ শুনতে হয়, ‘তুমি তাহলে মা হলে কেন?’
এই সমাজে এখনো অনেকে বোঝে না—নতুন মায়ের দরকার সহানুভূতি, সাহায্য আর সময়। সে গৃহিণী হোক বা চাকরিজীবী, সবারই maternité পেরোনোটা কঠিন এক যুদ্ধ। মা দিবসে আসুন আমরা প্রতিজ্ঞা করি, নতুন মায়ের পাশে থাকব, তাকে বুঝব, তাকে ভালোবাসব। সকল মা যেন পান নিরাপদ, শান্তিময় মাতৃত্ব—এটাই হোক আমাদের কামনা।
তানজিলা সুলতানা
শিক্ষার্থী, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
নিঃস্বার্থ ভালোবাসার প্রতীক
মা—এই শব্দটি উচ্চারণেই হৃদয়ে বেজে ওঠে স্নেহ, মমতা আর নিরন্তর ত্যাগের সুর। জীবনের প্রথম নিঃশ্বাস থেকে শেষ অবধি একজন মায়ের অবদান অতুলনীয়। মা শুধু জন্মদাত্রী নন, তিনিই আমাদের প্রথম আশ্রয়, প্রথম শিক্ষক এবং আজীবনের প্রেরণা।
প্রতি বছর মে মাসের দ্বিতীয় রোববার বিশ্বব্যাপী পালিত হয় মা দিবস—মায়ের প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা প্রকাশের এটি একটি বিশেষ দিন। ব্যস্ত জীবনের মাঝে এই দিনটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় সেই মানুষটির কথা, যিনি নিঃশব্দে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন সন্তানের জন্য। তার প্রতি ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ আমাদের একান্ত দায়িত্ব।
এই দিনে আমরা বিভিন্নভাবে মাকে শুভেচ্ছা জানাই—উপহার, চিঠি কিংবা কিছু সময় দিই। তবে মনে রাখতে হবে, মা দিবসের এই ভালোবাসাগুলো যেন কেবল একটি দিনে সীমাবদ্ধ না হয়। প্রতিদিনের কর্মে, প্রতিটি আচরণে মায়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসার প্রকাশ হোক আমাদের অভ্যাস।
মো. হিমেল খান
শিক্ষার্থী, রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ, চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
বিপদের সঙ্গী মা
মা—পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর শব্দ। এই একটি শব্দেই লুকিয়ে আছে শান্তি, আশ্রয় আর নিঃস্বার্থ ভালোবাসা। আমরা সবাই বলি, ‘মাকে খুব ভালোবাসি’। কিন্তু সেই ভালোবাসাটা কি আমরা প্রতিদিন অনুভব করি?
মা তো চুপচাপ ভালোবেসে যান—ক্লান্ত শরীরে রান্না করেন, অসুস্থ হয়েও আমাদের খোঁজ রাখেন। আমরা রাগ করি, কথা কম বলি, অথচ মা কাঁদেন না—হেসে আমাদের আগলে রাখেন। এই নিঃস্বার্থ ভালোবাসার মূল্য কি আমরা কোনোদিন দিতে পারব?
কখনো কখনো মায়ের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে ফেলি। পরক্ষণেই বুকটা কেঁপে ওঠে— যদি জড়িয়ে ধরে বলতে পারতাম, ‘মা, কষ্ট দিতে চাইনি!’
আজ মা দিবস। কেউ উপহার দেবে, কেউ ছবি পোস্ট করবে। কিন্তু মা শুধু একটু সময়, ভালোবাসা আর সঙ্গ চায়। চলো, আজ মাকে জড়িয়ে ধরি। বলি, ‘মা, তোমাকে অনেক ভালোবাসি। সব সময় ভালোবাসব।’ মা হারিয়ে যান না—তিনি থাকেন আমাদের নিঃশ্বাসে, স্মৃতিতে, ভালোবাসায়।
কাওছার আহম্মেদ কায়েস
শিক্ষার্থী, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইন্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
শুভ মা দিবস
মা—পৃথিবীর সবচেয়ে মধুর ও শ্রেষ্ঠ শব্দ। তিনি সেই মানুষ, যিনি আমাদের প্রথম কান্নায় হাসেন এবং সারাজীবন আমাদের সুখের জন্য নিজের সব কষ্ট চেপে রাখেন। তার মায়ায় গড়ে ওঠে জীবনের প্রতিটি আনন্দময় অধ্যায়। মা ছাড়া জীবন যেন অচেনা পথ—অন্ধকার, অনির্দেশ্য। শিশু থেকে বড় হওয়ার প্রতিটি ধাপে আমরা মায়ের হাত ধরে হেঁটেছি, তার চোখে আশীর্বাদ খুঁজেছি, ভালোবাসায় নিজেকে সঁপে দিয়েছি।
মা আমাদের প্রথম শিক্ষক, প্রথম বন্ধু, প্রথম আশ্রয়। কেবল একটি দিবসেই তার ভালোবাসা বিনিময় করা সম্ভব না। তবু বলি, পৃথিবীর সব মায়ের হাসি অমলিন হোক। তাদের ছায়া আমাদের মাথার ওপর আশীর্বাদ হয়ে থাকুক এপারে-ওপারে।
এসএম জুবায়ের আহমেদ
শিক্ষার্থী, সিএসসি ডিপার্টমেন্ট, ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্স
- এটিআর