ঢাকার মতিঝিল। রাজধানীর অন্যতম ব্যস্ততম এলাকা। চারপাশে অফিসপাড়া, ব্যস্ত মানুষ, গাড়ির শব্দ আর জীবনের ক্লান্ত ছাপ। এর মাঝেই ফুটপাতের এক কোণে দাঁড়িয়ে রয়েছে ছোট্ট একটি দোকান, যেখানে নেই ঝাঁ-চকচকে সাইনবোর্ড, নেই আলোর ঝলকানি। তবু মানুষের ভিড় লেগেই থাকে। 

এই দোকানের নাম নেই, নেই কোনো আধুনিকতা, কিন্তু রয়েছে ৪২ বছরের ইতিহাস আর অগণিত মানুষের ভালোবাসা। শরীয়তপুর থেকে প্রতিদিন ঢাকায় আনা হয় মিষ্টির উপকরণ। তার নির্মল স্বাদের সঞ্চার হয় প্রতি টুকরো মিষ্টিতে।

রসমালাই, মালাই চপ, ছানার জিলাপি, দই– কী নেই এই ছোট্ট দোকানটিতে! দাম শুরু মাত্র ৩০ টাকা থেকে। অথচ স্বাদের দিক থেকে তা হার মানায় নামি-দামি ব্র্যান্ডকেও।

দোকানটির সূচনা হয়েছিল প্রায় ১৯৮৩ সালে, তারা মিয়ার হাত ধরে। এখন সেই মিষ্টির ব্যবসার হাল ধরেছেন পরিবারের সদস্যরা। বর্তমানে সেখানে মিষ্টি বিক্রির দায়িত্বে রয়েছেন শান্তি ঘোষ। তিনি বলেন, ‘আমরা সবসময় সততার সঙ্গে ব্যবসা করে এসেছি। তাই মানুষ আমাদের বিশ্বাস করে, ভালোবাসে।’

প্রতিদিন অফিস শেষে বাড়ি ফেরার পথে একঝাঁক মানুষ থেমে যান এই দোকানের সামনে। মিষ্টিপ্রেমী একজন নিয়মিত ক্রেতা হেসে বলেন, ‘৫ টাকা দিয়ে শুরু করেছিলাম, এখন ৩০ টাকা দিই, কিন্তু স্বাদের কোনো পরিবর্তন হয়নি।’ আরেকজন জানান, ‘প্রায়ই দেখি এখানে ভিড় লেগে থাকে, আজ নিজেই স্বাদ নিতে এলাম।’

প্রতিদিন অফিস শেষে বাড়ি ফেরার পথে অনেকেই এখানে থামেন প্রিয় একটি মিষ্টির খোঁজে। কেউ খেয়ে যান, কেউ বা নিয়ে যান ঘরে। অনেকের জন্য এটি কেবল একটি দোকান নয়, বরং পুরোনো দিনের একটা অভ্যাস, খানিকটা প্রশান্তি।

আজকের দিনে যেখানে খাবারের দোকান মানেই বিলাসিতা, সেখানে এই ফুটপাতের দোকানটি সাদামাটা অকৃত্রিম প্রেম যেন। কোনো প্রচার নেই, তবুও ক্রেতা আছেন শত শত। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত লেগে থাকে ভিড়।

এভাবেই শহরের কোলাহলে নিঃশব্দে চলতে থাকা এই দোকানটি প্রমাণ করে, মন ছুঁয়ে যাওয়া খাবারের জন্য দামি পরিবেশ নয়, প্রয়োজন শুধু সততা, নিষ্ঠা আর ভালোবাসার স্পর্শ।