Logo

ফিচার

স্বপ্নডানায় ওড়া এক তরুণের গল্প!

Icon

সাইফুল ইসলাম

প্রকাশ: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:৩৪

স্বপ্নডানায় ওড়া এক তরুণের গল্প!

যারা স্বপ্ন দেখে এবং চেষ্টা করে, তারাই পৃথিবী বদলায়। স্বপ্ন কোনো জাদু নয়, কোনো রূপকথার আলো নয়। এটি অর্জন করতে হয় ধৈর্য, সংগ্রাম আর অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে। কুমিল্লার দেবিদ্বারের এক ছোট্ট গ্রাম গোপালনগর। সেখানেই ২০০১ সালের ৭ মার্চ জন্ম নেন এক ছেলে— যার চোখে ছিল স্বপ্নের ঝিলিক, আর ভেতরে ছিল অদম্য কৌতূহল। তার নাম মেহেদি হাসান রাফি। আজ তিনি একাধিক ক্ষেত্রে কর্মরত—কনটেন্ট ক্রিয়েটর, ফটোগ্রাফার, ভিডিও এডিটর, ওয়েব ডিজাইনার, ইন্সট্রাকটর, প্রেজেন্টার, পাবলিক স্পিকার, ডিজিটাল মার্কেটার, গ্রাফিক ডিজাইনার, উদ্যোক্তা এবং শেফ। কিন্তু তার যাত্রাপথ সহজ ছিল না।

শৈশবে পড়ালেখায় মন বসতো না তার। খাতার পাতায় নয়, কল্পনার জগতে খুঁজে পেতেন নিজের আনন্দ। পরীক্ষার আগে মায়ের বকুনিতে বই হাতে নিলেও, পড়াশোনার চেয়ে বেশি টানতো নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ। তবুও প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের পাবলিক পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ-৫ অর্জন করেছিলেন, শুধুমাত্র বাবা-মায়ের হাসি দেখার জন্য।

খেলার মাঠ তার কাছে খুব একটা গুরুত্ব পেতো না। বরং মোবাইল আর কম্পিউটার গেমস নিয়েই ছিল তার শৈশব। অষ্টম শ্রেণিতে বাবাকে শর্ত দিয়ে বলেছিলেন— গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেলে ল্যাপটপ চাই। ফলাফলে সফল হন, আর হাতে পান কম্পিউটার। কিন্তু সেই শক্তি তিনি কাজে লাগাননি শেখার জন্য, বরং হারিয়ে যান গেমের আসক্তিতে।

পরিবারের ইচ্ছা ছিল ডাক্তার হওয়া। কিন্তু কলেজে ওঠার পর মেহেদি বুঝলেন, সেই পথ তার জন্য নয়। তখন মাথায় আসতে শুরু করে অসংখ্য প্রশ্ন— আমি কী হতে চাই? আমার ভবিষ্যৎ কেমন হবে? এই প্রশ্নের উত্তর তিনি খুঁজতে থাকেন ইউটিউবে।

সেখানেই পরিচয় ঘটে বিশ্ববিখ্যাত কিছু বইয়ের সাথে— Think and Grow Rich, The Psychology of Money, Atomic Habits, Rich Dad Poor Dad। বিশেষ করে রবার্ট কিয়োসাকির Rich Dad Poor Dad তার চিন্তাধারায় আমূল পরিবর্তন আনে। তিনি উপলব্ধি করেন, ‘শিক্ষা মানে শুধু চাকরির প্রস্তুতি নয়, শিক্ষা মানে সুযোগ তৈরি করা।’

২০২০ সালের লকডাউন তার জীবনে বড় মোড় ঘুরিয়ে দেয়। প্রচুর অবসর সময় কাজে লাগিয়ে তিনি শিখতে শুরু করেন ব্লগিং, SEO, তারপর ওয়েব ডিজাইন। ইউটিউব হয়ে ওঠে তার বিশ্ববিদ্যালয়, আর ছোট্ট রুম হয়ে ওঠে ল্যাবরেটরি। সেখানেই তিনি তৈরি করেন নিজের প্রথম টিউটোরিয়াল ভিডিও। ধীরে ধীরে তিনি উপলব্ধি করেন— ডিগ্রির চেয়ে বেশি মূল্যবান হলো দক্ষতা।

একদিন বন্ধু মিরাজকে নিয়ে মজা করে বললেন, ‘আমরা যদি নিজেরাই একটা প্ল্যাটফর্ম বানাই?’ টাকা ছিল না, কিন্তু ছিল দৃঢ় ইচ্ছা আর দক্ষতা। সেখান থেকেই জন্ম নেয় Mexemy.com

শুরু হয় মাত্র ৬০ হাজার টাকা দিয়ে। প্রথম কোর্স চালু করলেন নিজেই মেন্টর হয়ে। তিন মাসের মাথায় ৫০০ শিক্ষার্থী। ধীরে ধীরে তৈরি হলো একটি বড় পরিবার। টানা দুই বছর তিনি কোনো লাভ নেননি, যা আয় হতো সব বিনিয়োগ করতেন প্ল্যাটফর্মের উন্নতিতে। এক বছরের মাথায় তারা নিতে পারলেন প্রথম অফিস। আজ Mexemy.com-এর শিক্ষার্থী সংখ্যা ২০ হাজারের বেশি। রয়েছে ২০+ মেন্টর, ২৩টি কোর্স, আর গুগলে ৪.৮ স্টার রেটিং। মেহেদি নিজেই তিন হাজারের বেশি শিক্ষার্থীকে সরাসরি প্রশিক্ষণ দিয়েছেন, যেখানে শেখার বিষয় ওয়েব ডিজাইন থেকে শুরু করে এআই, ই-কমার্স ও কনটেন্ট ক্রিয়েশন।

তার ইউটিউব চ্যানেলেও রয়েছে প্রায় ১৫ হাজার মানুষের সক্রিয় কমিউনিটি। ৫ লাখের বেশি মানুষ তার ভিডিও থেকে জ্ঞান ও অনুপ্রেরণা পেয়েছে। অনেক শিক্ষার্থী এখন চাকরিজীবী, কেউ উদ্যোক্তা, কেউ সফল ফ্রিল্যান্সার।

মেহেদির দর্শন, ‘পরিবর্তন চাইলে টাকা বা সুযোগ নয়, সবচেয়ে বড় বাধা হলো নিজের কমফোর্ট জোন।’

তিনি বিশ্বাস করেন, সাফল্যের সূত্র খুব সহজ—

১. যা করতে চাই, সেটি এখনই শুরু করব।
২. ব্যর্থ হলেও, শেখাটা কখনো বিফলে যায় না।

২৪ বছর বয়সী মেহেদির আগামী দিনের স্বপ্ন, তিনি এখানে থামতে চান না। তিনি আগামী ১০ বছরে একটি বার্তা দেশের প্রতিটি মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে চান : ‘সার্টিফিকেট নয়, স্কিলে বিশ্বাসী হও।’ 

এমএইচএস

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর