• বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ২ জৈষ্ঠ ১৪২৯
দেশের মর্যাদা রক্ষায় নৌকায় ভোট দিন

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

ছবি :

সরকার

সিলেটের জনসভায় শেখ হাসিনা

দেশের মর্যাদা রক্ষায় নৌকায় ভোট দিন

  • আবু তাহের চৌধুরী, সিলেট
  • প্রকাশিত ২৩ ডিসেম্বর ২০১৮

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশের উন্নয়ন ও জনগণের কল্যাণ হয়। আওয়ামী লীগই জনগণের অধিকারের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। আমরা ক্ষমতায় আসার পর থেকে দেশে উন্নয়নের জোয়ার বইছে। সরকার বাংলাদেশকে বিশ্বে একটি উচ্চ মর্যাদার আসনে নিয়ে গেছে। এ মর্যাদা ধরে রাখতে আবারো নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে জয়ী করুন।’

গতকাল শনিবার বিকালে সিলেটের চৌহাট্টায় সরকারি আলিয়া মাদরাসা মাঠে স্থানীয় আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আয়োজিত জনসভায় দেওয়া প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি আরো বলেন, ‘গত জানুয়ারি মাসে সিলেট থেকে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছিলাম। আবারো হাজির হয়েছি। বিজয়ের মাসে আপনাদের সামনে এসেছি। আগামী নির্বাচনে আমরা যে প্রার্থী দিয়েছি, তাদের জন্য নৌকা প্রতীকে ভোট চাইতে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি।’ এ সময় সিলেট বিভাগের ১৯টি সংসদীয় আসনে মহাজোটের সব প্রার্থীকে পরিচয় করিয়ে দেন শেখ হাসিনা।  জঙ্গিবাদমুক্ত ও উন্নত বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণা দিয়ে সিলেট বিভাগের চার জেলার সব আসনের আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের প্রার্থীদের জন্য সর্বস্তরের মানুষের কাছে ভোট চান তিনি।

তিনি বলেন, ‘সরকারের উন্নয়নের জোয়ার সিলেটেও লেগেছে। আমরা সিলেট বিভাগে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল করেছি। প্রতিটি এলাকায় বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি। আমরা ১৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ নিয়ে শুরু করেছিলাম। এখন ২০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করতে পেরেছি। আজ মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে, ভাগ্য পরিবর্তন হচ্ছে। সিলেটে শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চল করে দিচ্ছি। এখানে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ হবে। প্রবাসী যারা আছেন, তারাও বিনিয়োগ করতে পারবেন। সবার বিনিয়োগের সুযোগ করে দিচ্ছি, যেখানে কর্মসংস্থান হবে।’

তিনি বলেন, ‘২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এসে বাংলাদেশকে দুর্নীতিবাজ, জঙ্গিবাদী ও সন্ত্রাসী দেশ হিসেবে পরিচয় করিয়েছে। দেশের মানুষের মান ইজ্জত সব শেষ করে দিয়েছে। তাদের অরাজকতার কারণে দেশে জরুরি অবস্থা জারি হয়েছিল।’

‘বিএনপি-জামায়াত জোট বাঙালি জাতির মানসম্মান ভূলুণ্ঠিত করেছিল’ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘হত্যা, দুর্নীতি এগুলো ছিল তাদের নীতি। নির্বাচনে তারা একেক আসনে চার-পাঁচজনকে নমিনেশন দিয়েছে। পরে অকশনে দিয়েছে। যে বেশি টাকা দিয়েছে, তাকে মনোনয়ন দিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আগামীতে যদি ক্ষমতায় আসতে পারি, তাহলে দারিদ্র্য বলে কিছু থাকবে না। সারা দেশের মতো সিলেট বিভাগের চার জেলা- সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জের উন্নয়নের জন্য অনেকগুলো প্রকল্প নিয়েছি। তরুণ প্রজন্মের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করছি।’

তিনি বলেন, ‘আগে চায়ের নিলাম শুধু চট্টগ্রামে হতো। আমরা সেই নিলাম সিলেটে যাতে হয়, তার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। চা শ্রমিকদের সন্তানদের জন্য স্কুলের ব্যবস্থা করেছি, চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। আমরা সারা দেশে কমিউনিটি ক্লিনিক করে দিয়েছি। মা-বোনেরা এখন বাড়ির পাশে চিকিৎসা নিতে পারেন।’

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘সিলেটের উন্নয়নের জন্য স্কুল, রাস্তাঘাট করে দিয়েছি। সিলেটে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করে দিয়েছি। সিলেট বিভাগের সব জেলায় সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয় করতে উদ্যোগ নিচ্ছি। সিলেট-ঢাকা চারলেন সড়ক দ্রুত শুরু হবে।’

তিনি বলেন, ‘২০০১ সালে গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়ে বিএনপি ক্ষমতায় এসেছিল। আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়াকে হত্যা করা হলো। সেই বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন কিবরিয়ার ছেলে (রেজা কিবরিয়া)। এটা অত্যন্ত লজ্জার ও পরিতাপের বিষয়।’

তিনি বলেন, ‘২০১৪ সালে নির্বাচন ঠেকানোর নামে জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছিল বিএনপি-জামায়াত। তারা মানুষ পোড়ানো, অস্ত্রবাজি, দুর্নীতি করা ছাড়া আর কিছু জানে না। এতিমের টাকা আত্মসাৎ করেছিল। খালেদা জিয়ার প্রিয় ব্যক্তিরাই তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা ১৯৯৬ সালে মোবাইল ফোন বেসরকারি খাতে উন্মুক্ত করে দেই। সারা দেশে ইন্টারনেট চালু করেছি। বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছি। মোবাইল ফোন এখন সবার হাতে। আমরা টু জি থেকে থ্রিজি, থ্রিজি থেকে ফোরজিতে চলে এসেছি। আগামীতে আমরা ফাইভজি চালু করব।’

দীর্ঘ বক্তব্যে শেখ হাসিনা আরো বলেন, ‘আমরা হাওরাঞ্চলের সার্বিক উন্নয়নের ব্যবস্থা নিচ্ছি। শুধু মাছ চাষই নয়, হাওরাঞ্চলে যাতে শিল্প গড়ে ওঠে, সে ব্যবস্থা গ্রহণ করছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির অভিযোগ করেছিল। আমি চ্যালেঞ্জ করেছিলাম। আমি দুর্নীতি করতে আসিনি। আমি বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য গড়তে এসেছি। যে অভিযোগ উঠেছিল, তা বানোয়াট ছিল প্রমাণ হয়ে গেছে। চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলাম, নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু করব। আমরা তা করছি।’

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ইনাম আহমদ চৌধুরী আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়ায় তাকে স্বাগত জানান শেখ হাসিনা। লন্ডনে থাকা সাজাপ্রাপ্ত তারেক রহমানকে দেশে এনে বিচারের রায় কার্যকর করা হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

তিন মাজার জিয়ারত : গতকাল বেলা পৌনে ১১টায় বাংলাদেশ বিমানের নিয়মিত ফ্লাইটে সিলেট পৌঁছান শেখ হাসিনা। বিমানবন্দরে তাকে অভ্যর্থনা জানান জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি বদরুদ্দিন আহমেদ কামরান ও সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরীসহ দলীয় নেতাকর্মীরা। এরপর আওয়ামী লীগ সভাপতি হযরত শাহজালাল (র.), হযরত শাহ পরান (র.) ও হযরত গাজী বোরহানউদ্দিন (র.) এর মাজার জিয়ারত করেন। তিনটি মাজার জিয়ারতে যাওয়ার সময় রাস্তার দু’ধারে দণ্ডায়মান হাজার হাজার জনতা প্রধানমন্ত্রীকে নানা স্লোগান ও করতালির মাধ্যমে শুভেচ্ছা জানান।

আজ রংপুর যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী : নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে আজ রোববার রংপুর যাচ্ছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। রংপুর সফরকালে তিনি জেলার দুটি জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে ভাষণ দেবেন। শেখ হাসিনা সকাল ১০টায় উপজেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আয়োজিত তারাগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ মাঠে এবং দুপুর দুটায় উপজেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আয়োজিত পীরগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে নির্বাচনী জনসভায় ভাষণ দেবেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads