বনানীর প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট উঠিয়ে দেওয়ার পাঁয়তারার অভিযোগ

বাংলাদেশের প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০ এপ্রিল ২০২৫, ২১:৫৩

ভাড়াটিয়ার সঙ্গে জমির মালিকের চারটি মামলা চলমান থাকলেও রাজধানীর বনানীর প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট লিমিটেড উঠিয়ে দেওয়ার পাঁয়তারা চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
বিএনপিপন্থী ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের প্রতিষ্ঠান ওয়ান প্রোপার্টিজ লিমিটেড জায়গাটি কিনেছে। এরপর থেকে তিনি প্রতিনিয়ত প্রেসক্রিপশন পয়েন্টে যাচ্ছেন এবং উচ্ছেদের হুমকি-ধমকি ও ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন বলে অভিযোগ। এতে সুনামের সঙ্গে স্বল্পমূল্যে রোগ নির্ণয়, পরামর্শ ও স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া এই প্রতিষ্ঠানের ভবিতব্য কী- তা নিয়ে উৎকণ্ঠায় সেখানে কর্মরত চিকিৎসক-নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও মালিকপক্ষ।
এদিকে বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী আব্দুস সামাদ প্রেসক্রিপশন পয়েন্টের হয়ে ওয়ান প্রপার্টিজ লিমিটেডকে আইনি নোটিশ দিয়েছেন।
জানা গেছে, দীর্ঘ দেড়যুগ ধরে বনানী ই-ব্লকের ১২ নম্বর রোডের ১০৫ নম্বর প্লটের পাঁচ কাঠা জমির ওপর গড়ে ওঠা ছয়তলা বাড়িটিতে স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে আসছে প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট লিমিটেড। যার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু আশফাক।
অভিযোগ আছে, স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানটির ওপর প্রথম নজর পড়েছিল আওয়ামী লীগের সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ছেলে রাহাত মালেকের। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে ব্যবহার করে অনিয়মের মাধ্যমে প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট সিলগালা করে দেওয়া হয়। সরকার পতনের পর প্রতিষ্ঠানটি তাদের স্বাস্থ্য সেবা চালু করলে তাতে নতুন করে নজর পড়ে গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের। তিনি পাঁচ কাঠা জমির ওপর ছয়তলা বাড়িটি মাত্র সাড়ে ৯ কোটি টাকায় কিনেছেন বলে জানা গেছে। যা আওয়ামী লীগ আমলে এনডিইর (ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার’স) চেয়ারম্যান ইমরান মুস্তাফিজের কিনেছিলেন ৬ কোটি টাকায়। তার কাছ থেকেই ভবনসহ জমিটি কাগজে-কলমে কিনেছেন গিয়াস। এরপরেই ওই ব্যবসায়ী প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট দখল নিতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। গিয়াস উদ্দিন নিজে সরাসরি সেখানে যাচ্ছেন, এরইমধ্যে ভবনে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দিয়েছেন।
প্রেসক্রিপশন পয়েন্টের মালিক আবু আশফাক বলেন, ‘আমরা ভাড়া নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি শুরুর পর সুনামের সঙ্গে স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে আসছি। ২০২৩ সালে হঠাৎ জানতে পারি দুর্নীতিবাজ মন্ত্রী জাহিদ মালেকের ছেলে রাহাত মালেক এবং তার বন্ধু ইমরান মুস্তাফিজ জমিটি কিনে নিয়েছেন। তারাই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে ব্যবহার করে প্রতিষ্ঠানটি সিলগালা করে দেয়। এ সময় বহু কর্মী বেকার হয়ে পড়েন।’
তিনি আরও বলেন, ‘গত ২৮ আগস্ট প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট পুনরায় পরিচালনার অনুমতি দেয় সরকার। এখন আবার শুনছি বিতর্কিত ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত গিয়াস উদ্দিন আল মামুন জমিটি কিনে নিয়েছেন। উনি আমাদের উচ্ছেদে বারবার প্রতিষ্ঠানে আসছেন। প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে সরে যেতে হুমকি দিচ্ছেন। কিন্তু মালিকপক্ষের সঙ্গে আমাদের ভাড়া চুক্তি এখনও বলবৎ রয়েছে। আমরা আইনভঙ্গ করে কিছু করিনি।’
আবু আশফাক বলেন, ‘প্রতিষ্ঠান শুরুর পর থেকে ভাড়া নিয়ে কখনও মালিকপক্ষের সঙ্গে আমাদের বিরোধ হয়নি। তবে উচ্ছেদ করতে যখন ষড়যন্ত্র শুরু হয় তখন আদালতে একটি মামলা হয়। এই উচ্ছেদ মামলার শুনানি আগামী ৫ অক্টোবর। তবে শুনানির আগেই আমাদের সরিয়ে দিতে ক্ষমতার অপব্যবহার চলছে। একইসঙ্গে বাড়িভাড়া আইনেও মামলার নিষ্পত্তি হয়নি।’
আওয়ামী লীগ আমলে প্রতিষ্ঠান বন্ধের চেষ্টা হলেও আইনি লড়াই চালিয়ে গেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সরকার বদলের পর আশা করেছিলাম ভালো করে প্রতিষ্ঠানটি চালাতে পারব। কিন্তু এখন আমি বেশি নির্যাতনের শিকার হচ্ছি। একটি বিতর্কিত ব্যবসায়ী গোষ্ঠী যারা বিগত বিএনপি সরকারের আমলেও বিতর্কিত ছিল, এখন তারা নতুন করে পূর্ণ উদ্যমে লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করতে চায়। আদালতে যেই ইস্যুতে মামলা চলমান সেই সম্পত্তি গোপনে হস্তান্তর করে বড় ধরনের অপরাধ করেছে বলে আমি মনে করি। এই সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয়ের সময় আমাকে কোনো রকম অবহিত করা হয়নি।’
এদিকে শর্ত ভেঙে উচ্ছেদ ঠেকাতে আদালতের শরণাপন্ন হয়েছে প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট কর্তৃপক্ষ। তারা ‘বাড়ি ভাড়া আইনে’ একটি মামলা করেছেন। এছাড়া ক্ষমতার অপব্যহার করে প্রতিষ্ঠান সিলগালার অভিযোগ তৎকালীন ডিজি হেলথের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। আদালতের আদেশ না আসা পর্যন্ত ভবন হস্তান্তরে রাজউক থেকে রেজিস্ট্রেশন দলিল যাতে না হয় তার জন্য একটি স্টে অর্ডার আছে। যার মেয়াদ এখনও শেষ হয়নি।
আইনজীবী আব্দুস সামাদ বলেন, ‘যেহেতু এই ঘটনায় আদালতে একাধিক মামলা রয়েছে- এগুলো নিষ্পত্তি হবার পর এটির দখল বুঝে নিতে পারবেন। তার আগে আইনত নয়।’
বনানীর ওই ভবনটিতে দীর্ঘ দেড়যুগ ধরে সুনামের সঙ্গে স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে আসছে প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট। আওয়ামী লীগ সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের ছেলে রাহাত মালেক এবং তার বন্ধু এনডিইর (ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার’স) চেয়ারম্যান ইমরান মুস্তাফিজের কালো থাবা পড়েছিল তাদের ওপর। ২০২৩ সালে আকস্মিকভাবে চালানো অভিযানের নামে তড়িঘড়ি করে সন্ত্রাসী কায়দায় প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট বন্ধ করে সিলগালা করে দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে ২৮ আগস্ট প্রেসক্রিপশন পয়েন্টকে পুনরায় পরিচালনার অনুমতি দেয় সরকার। বনানীতে স্বল্পমূল্যে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার সুনাম রয়েছে প্রেসক্রিপশন পয়েন্টের।
তবে এসব বিষয় নিয়ে ওয়ান প্রোপার্টিজ লিমিটেডের অফিসে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। এছাড়া গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের বক্তব্য জানতে তার সঙ্গে যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি।