উপজেলা হাসপাতাল
চাহিদার অর্ধেক চিকিৎসক, প্রান্তিক সেবা বিপর্যস্ত
প্রকাশ: ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ১৫:৪০
-680dfb8993ab0.jpg)
দেশের উপজেলা সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসক সংকট তীব্র হয়ে উঠেছে। এতে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা। বাড়তি রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন কর্তব্যরত চিকিৎসকরা। বেশির ভাগ উপজেলা হাসপাতালে চাহিদার অর্ধেক চিকিৎসক নিয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। চিকিৎসক সংকটের কারণে পাবনা ও বরগুনার দুটি উপজেলা হাসপাতাল ঘোষণা দিয়ে বন্ধ রাখার ঘটনাও ঘটেছে। উপজেলা পর্যায়ে চিকিৎসক নিয়োগের পর তাদের আবার জেলা সদর ও মেডিকেল কলেজে সংযুক্তির ফলে বর্তমানে উপজেলা পর্যায়ে ৬৫ ভাগের বেশি চিকিৎসকের পদ ফাঁকা। এমন বাস্তবতায় ভেঙে পড়ছে প্রান্তিক চিকিৎসা সেবা।
উপজেলায় চিকিৎসকের বর্তমান চিত্র
দেশে উপজেলা পর্যায়ে ৫০,৩১ ও ২০ শয্যার তিন ধরনের সরকারি হাসপাতাল রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের জন্য চিকিৎসকের পদ ২১টি,৩১ শয্যা হাসপাতালের জন্য চিকিৎসক পদ ৯টি ও ২০ শয্যা হাসপাতালের জন্য চিকিৎসক পদ ৬ টি। কিন্তু সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালে পর্যবেক্ষণ তথ্য বলছে, চাহিদার তুলনায় অর্ধেকের কম চিকিৎসক দিয়ে চলছে এসব হাসপাতাল। দেশে উপজেলা হাসপাতালে চিকিৎসকের পদ ৭ হাজার ৩১৭টি, যার বিপরীতে কর্মরত আছেন ৩ হাজার ৮৪৫ জন চিকিৎসক। অর্থাৎ প্রায় অর্ধেক চিকিৎসক পদ খালি রয়েছে। উপজেলা ভেদে অনেক হাসপাতালে প্রায় ৬৫ শতাংশ পদ খালি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে ২২ জেলার উপজেলা পর্যায়ে চিকিৎসকের তীব্র সংকটের চিত্র পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ভোলা ও পটুয়াখালী জেলায় চিকিৎসকদের শূন্য পদ ৬৯ শতাংশ।
পিরোজপুরে ৬৭ শতাংশ, ঝিনাইদহ ও লালমনিরহাটে ৬৪ শতাংশ করে, ঝালকাঠি ও মেহেরপুরে ৬২ শতাংশ করে, বান্দরবান, জয়পুরহাট ও নওগাঁয় ৬০ শতাংশ করে, সুনামগঞ্জে ৫৮, রাজবাড়ী ও দিনাজপুরে ৫৭ শতাংশ করে, মাগুরায় ৫৬, গাইবান্ধায় ৫৫, জামালপুরে ৫৪, পাবনায় ৫৩, বরিশাল ও নীলফামারীতে ৫২ শতাংশ করে, রাঙ্গামাটি ও হবিগঞ্জে ৫১ শতাংশ করে, নেত্রকোনায় ৫০ শতাংশ পদ শূন্য।
এদিকে চিকিৎসক ছাড়াও বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতে জনবল সংকটের বিষয়টি উঠে এসেছে বিশ্ব ব্যাংকের সহায়তায় তৈরি করা বাংলাদেশের স্বাস্থ্য জনবল কৌশলপত্রে। যেখানে দেখা যায় ব্যাপক জনবল সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে স্বাস্থ্যখাত। কৌশলপত্রে বলা হয়, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কেন্দ্র থেকে মাঠ পর্যায়ে মোট ৩৩ শ্রেণির পদ রয়েছে। এর মধ্যে খালি রয়েছে ৩২ শতাংশ পদ। এসব শ্রেণিতে মোট পদের সংখ্যা দুই লাখ ৪৪ হাজার ৭১১টি। এর মধ্যে এক লাখ ৬৬ হাজার ৮৩৪ পদে জনবল আছে। আর পদ খালি আছে ৭৭ হাজার ৮৭৭টি। খালি থাকা পদের মধ্যে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি শ্রেণিতে শূন্য পদের হার ৬২ শতাংশ। চিকিৎসকদের পদ খালি ৪০ শতাংশ। এ ছাড়া ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত ৪০ শতাংশ পদে জনবল নেই।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ড অনুযায়ী, প্রতি ১০ হাজার মানুষের জন্য চিকিৎসক, নার্স ও মিডওয়াইফ মিলে মোট ৪৯ জন স্বাস্থ্যকর্মীর একটি দল প্রয়োজন। কিন্তু বাংলাদেশে প্রতি ১০ হাজার মানুষের জন্য আছেন মাত্র ১৩ জন চিকিৎসক, নার্স ও মিডওয়াইফ।
শূন্য পদ পূরণে সরকার যা করতে চায়
প্রান্তিক পর্যায়ে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতের দাবিতে দীর্ঘদিন আন্দোলন করে আসছেন জনস্বাস্থ্য সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ডা. ফয়জুল হাকিম।তিনি বাংলাদেশের খবরকে বলেন, দেশে যতগুলো সরকার এসেছে কেউ জনগণের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ হয়ে চিকিৎসা সেবার উন্নয়নে কাজ করেনি।প্রান্তিক পর্যায়ে চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দিতে কোনো সরকারের কর্মপরিকল্পনা আমরা দেখিনি।দেশের চিকিৎসা সেবা বেসরকারিকরণ হচ্ছে। বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে জনবল সংকটের কারণে চিকিৎসা দিতে পারছে না।এতে প্রাইভেট হাসপাতালে মানুষ ছুটে যাচ্ছে। যাদের অর্থ আছে তারা চিকিৎসা পাচ্ছে।যাদের অর্থ নেই বিনাচিকিৎসায় মারা যাচ্ছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার স্বল্প সময়ের জন্য এসেছে।তারা স্বাস্থ্য খাত সংস্কারে কমিশন করেছে।আমরা চাই দেশের স্বাস্থ্য খাতে সকল ধরনের নৈরাজ্য বন্ধ হউক।সংস্কার কমিশনে দেশের স্বাস্থ্য খাতের সকল সংকটকে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করতে হবে।
স্বাস্থ্যখাতে জনবল সংকট পূরণ করতে সরকার নানামুখী পদক্ষেপের কথা জানালেও মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু জাফর বাংলাদেশের খবরকে বলেন, চিকিৎসক সংকট নিরসনে আগামী সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে বিশেষ বিসিএসের মাধ্যমে দুই হাজার চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হবে। দুই হাজার চিকিৎসক নিয়োগ শেষে আরও চার হাজার চিকিৎসক নিয়োগের উদ্যোগ নেওয়া হবে। এছাড়াও নার্সের শূন্য পদে দুই হাজার ৩০০ নার্স নিয়োগের ভাইভা চলমান রয়েছে। এদের নিয়োগ শেষ হলে আরও সাড়ে তিন হাজার নার্স নিয়োগ দেওয়া হবে। আশা করি নিয়োগগুলো সম্পন্ন হলে উপজেলা হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসক ও নার্স সংকট অনেকটা পূরণ হবে। স্বাস্থ্য খাতে জনবল সংকট নিরসনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আন্তরিকতার সাথে কাজ করছে।
এসআইবি/এমএইচএস