Logo

স্বাস্থ্য

বাস-ট্রেন-লঞ্চ কোথাও মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি

Icon

নুর মোহাম্মদ মিঠু

প্রকাশ: ১১ জুন ২০২৫, ২২:০৯

বাস-ট্রেন-লঞ্চ কোথাও মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি

ছবি : সংগৃহীত

দেশে প্রায় ৫ বছর পর ফের বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ১০ জন। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও গত ২৪ ঘণ্টায় ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। প্রাণঘাতী সংক্রামক এ ভাইরাসের এমন উল্লম্ফনে সতর্কবার্তাও জারি করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এরই মধ্যে ঈদুল আজহার ছুটিও প্রায় শেষের দিকে।

বুধবার ছিল ঈদের ফিরতি যাত্রার দ্বিতীয় দিন। সারাদেশ থেকে গাদাগাদি করে ঢাকায় ফিরতেও শুরু করেছে মানুষ। এতে লঞ্চ, ট্রেনসহ সকল গণপরিবহনে বাড়ছে ভিড়, বাঁধছে জটলা। যদিও করোনা সংক্রমণের বিষয়ে যাত্রী ছাড়াও সংশ্লিষ্ট সকলকেই দেখা গেছে উদাসীন। বাস, লঞ্চ, ট্রেন কোথাও স্বাস্থ্যবিধি মানার ন্যূনতম বালাই নেই। নেই কোনো রকম গুরুত্বও।

বুধবার (১১ জুলাই) রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, ধোলাইপাড়, সদরঘাট, কমলাপুর, গুলিস্তানসহ বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখা গেছে, যাত্রী, চালক, হেলপার, টার্মিনাল কিংবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য কারও মুখেই নেই মাস্ক। বরং সংশ্লিষ্টদের কেউই যাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি মানাতে সচেতনতায় উৎসাহিত করছে না।

যদিও আগের বারে ২০২০ এর মার্চের পর থেকে ২০২১–২২ সাল পর্যন্ত মাঠে-ঘাটে, পথে-প্রান্তরে বিভিন্ন সময়ে মাইকিং করে নির্দেশনা জারির পাশাপাশি সচেতনতায় করা হতো উৎসাহ। একটা সময় লকডাউন বাস্তবায়নে আইনের প্রয়োগও করতে হয়েছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। অথচ এবার করোনা নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এখন পর্যন্ত যতটুকু ঘোষণা আর নির্দেশনা দিচ্ছে, তাতেও যেন কেউ কোনো রকম গুরুত্বই দিতে চাইছে না।

কমলাপুরে গিয়ে দেখা যায়, ট্রেন যাত্রীদের কারও মুখেই মাস্ক নেই। যাত্রীরা এতটাই উদাসীন যে ময়লার গন্ধেও মুখে মাস্ক নিচ্ছে না।

জানতে চাইলে চুয়াডাঙ্গা থেকে আসা যাত্রী তানজীম হুদা বাংলাদেশের খবরকে বলেন, স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে রেল কর্তৃপক্ষের কেউ যাত্রীদের কিছুই বলেনি। বরং স্ট্যান্ডিং টিকিটও বিক্রি করেছে রেল। যাত্রীদের কেউই স্বাস্থ্যবিধি মানেনি। এমনকি তিনি নিজেও করোনা সংক্রমণ বাড়ার বিষয়টি গুরুত্ব দেননি, যে কারণে স্বাস্থ্যবিধিও মানেননি।

রাজশাহী থেকে পরিবার নিয়ে ঢাকায় এসেছেন নুরুল হুদা। তিনি বলেন, রেল কর্তৃপক্ষ নিজেই তো সচেতন না। আমরা আর কী গুরুত্ব দেব! স্টেশনে থাকা রেলপুলিশ, আনসারদের দেখিয়ে তিনি বলেন, ট্রেনের ভেতরে দায়িত্ব পালন করা টিটিরাও তো মাস্ক পরেনি। কিংবা করোনা সংক্রমণ বিষয়ে যাত্রীদেরও কিছুই বলা হয়নি।

জানতে চাইলে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের মাস্টার আনোয়ার হোসেন বাংলাদেশের খবরকে বলেন, যাত্রীদের দেওয়ার মতো কোনো নির্দেশনা আমরা এখনো পাইনি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আর রেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশ পেলেই আমরা যাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে কঠোর হবো।

এদিকে সদরঘাটেও একই অবস্থা দেখা গেছে। যাত্রীদের কারও মুখেই মাস্ক নেই, নেই করোনা ভীতি। নৌ পুলিশ, ঘাট কর্তৃপক্ষের কাউকে করোনা নিয়ে যাত্রীদের সচেতন করতেও দেখা যায়নি। যাত্রীরাও বলছেন, করোনা সংক্রমণ নিয়ে আগের মতো কেউই কিছু বলেনি।

বরিশাল থেকে লঞ্চে ঢাকায় এসেছেন মো. ফিরোজ মিয়া। তিনি বাংলাদেশের খবরকে বলেন, মানুষ এখন আর করোনা ভয় পায় না। বিষয়টিকে যেন কেউই পাত্তা দিতে চাইছে না। কারণ লঞ্চে এসব নিয়ে যাত্রীদের মধ্যে কথা উঠেছিল। তারা করোনা বিষয়টিকে ২০২০–২১ সালে গুরুত্ব দিলেও এখন হালকাভাবে দেখছে। সরকারের পক্ষ থেকে যতক্ষণ সচেতনতামূলক প্রচারণা শুরু না হবে, ততক্ষণ মানুষ স্বাস্থ্য সচেতন হবে না।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) জনসংযোগ কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন বাংলাদেশের খবরকে বলেন, আমাদের সার্বিক কার্যক্রম চলছে। মাইকিং করা হচ্ছে। যাত্রীদের মাস্ক দেওয়া হচ্ছে। দূরত্ব বজায় রাখার জন্য বলা হচ্ছে। মোট কথা ২০২০–২১ সালে যা যা করা হয়েছিল তার সবই আমরা শুরু করেছি। তবে হ্যান্ড স্যানিটাইজিং কার্যক্রম এখনো শুরু করতে পারিনি আমরা।

তবে সার্বিক বিষয়ে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক বাংলাদেশের খবরকে বলেন, এবার ঈদুল আজহার ছুটির মধ্যেই করোনা সংক্রমণ বেড়েছে। এখন সারাদেশ থেকে মানুষ ঢাকায় ফিরছে। ফলে গাদাগাদি হবেই। উৎসব যেমন দরকার, তেমনি জীবন রক্ষায় স্বাস্থ্যবিধিও মানা দরকার। সে কারণে আমি বলবো, স্বাস্থ্য সতর্কতা জারি করলেই হবে না, জনসমাগম হয় এমন স্পটগুলোতে প্রচারণা বাড়াতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মানাতে পদক্ষেপ নিতে হবে। এবার মাঠে সেনাবাহিনী আছে। প্রয়োজনে সেনাবাহিনীকেও এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে।

জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইন ডিরেক্টর (সিডিসি) অধ্যাপক ডা. হালিমুর রশীদ বাংলাদেশের খবরকে বলেন, করোনা সংক্রমণের ভয়াবহতার মাত্রা অনুমান করেই এবার আমরা আগে থেকেই সতর্কতা জারি করেছি। তবে ফিরতি ঈদযাত্রায় বাস, লঞ্চ, ট্রেন কিংবা অন্যান্য স্পটগুলোতেও জনসমাগম ও গাদাগাদি ঠেকাতে এখনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কোনো নির্দেশনা দেইনি। তবে অবস্থা বুঝে আমরা নির্দেশনা জারি করবো। এবার করোনা মোকাবিলায় আমরা আমাদের সকল প্রস্তুতি আগে থেকেই নিচ্ছি। সে আলোকে আমাদের কাজ চলছে। তবে এখনই হার্ডলাইনে যাওয়া পরিস্থিতি হয়নি।

এনএমএম/এমবি 

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

করোনাভাইরাস

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর