ডেঙ্গু-করোনা আতঙ্কের মাঝে ভাইরাল জ্বর, হাসপাতালে বাড়ছে রোগীর ভিড়
প্রকাশ: ০৭ জুলাই ২০২৫, ১৭:৪৬
-686bb38ca15c8.jpg)
ছবি : বাংলাদেশের খবর
সাত বছর বয়সী শিশু রাইদা রহমান চারদিন ধরে জ্বরে ভুগছে। জ্বর হওয়ার দ্বিতীয় দিনেই তাকে ভর্তি করা হয় বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে। রাইদার মা জামিয়া আরা জানান, তার বড় ছেলের এক সপ্তাহ আগে জ্বর হয়েছিল। বাসার পাশের ফার্মেসি থেকে সাধারণ ওষুধ এনে তা সেরে ওঠে। বড় ছেলের জ্বর ভালো হওয়ার পরদিনই মেয়ের কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে। ফার্মেসি থেকে ওষুধ খাওয়ালেও কোনো উন্নতি না হওয়ায় চিকিৎসকের পরামর্শে রাইদাকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসকরা জানান, রাইদা মৌসুমি ফ্লু থেকে সৃষ্ট ভাইরাল জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে।
রাজধানীর ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুরুষ ওয়ার্ডে স্যালাইন নিয়ে শুয়ে আছেন বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া সাদী হোসেন। তিন দিন আগে জ্বর, ঠান্ডা ও কাশি নিয়ে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন। তার ভাষ্যমতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের এক রুমমেটের জ্বর হওয়ার দুই দিন পর তিনিও আক্রান্ত হন। ডেঙ্গু হতে পারে ভেবে টেস্ট করান, কিন্তু রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। পরে চিকিৎসকের পরামর্শে হাসপাতালে ভর্তি হন। তিনি জানান, ‘জ্বর ছেড়ে ছেড়ে আসে, কখনো ভালো লাগে, আবার কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে। খাওয়া-দাওয়াও ঠিকভাবে করতে পারছি না।’
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ, শিশু হাসপাতাল ও মুগদা হাসপাতালের বহির্বিভাগ ও জরুরি বিভাগে সর্দি-কাশি ও জ্বর নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। চিকিৎসকরা বলছেন, ঋতু পরিবর্তনের এই সময়ে শরীর সহজে মানিয়ে নিতে পারে না বলেই ভাইরাল ইনফেকশন বেড়ে যায়। ভাইরাসজনিত এই জ্বরকে সাধারণভাবে মৌসুমি ফ্লু বলা হয়।
ভাইরাল জ্বরের লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে— হাঁচি-কাশি, নাক দিয়ে পানি পড়া, চোখ লাল হওয়া, সারা শরীরে ব্যথা, মাথা ভার লাগা, খাওয়া-দাওয়ায় অরুচি ও মুখে তিতাভাব।
সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত হাসপাতাল ছাড়াও বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতেও রোগীর ভিড় বেড়েছে। রাজধানীর পান্থপথের একটি বেসরকারি হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে বিভিন্ন বয়সী রোগীরা চিকিৎসা নিতে এসেছেন। বিশেষ করে মেডিসিন বিশেষজ্ঞদের কক্ষের সামনে রোগীদের ভিড় চোখে পড়ার মতো। তেমনই একজন রোগী জাবের রহমান বলেন, ‘চারদিন ধরে জ্বরে একদম কাহিল হয়ে গেছি। সাধারণ ওষুধে কাজ হচ্ছে না, তাই আজ ডাক্তার দেখাতে এসেছি। ডাক্তার কয়েকটি রক্ত পরীক্ষা দিয়েছেন।’
এই প্রসঙ্গে ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক ডা. মিনহাজ আবদুল্লাহ বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘প্রতি বছরই এই সময়টায় জ্বর, সর্দি-কাশি বাড়ে। তবে ডেঙ্গু ও করোনার কারণে মানুষ বেশি আতঙ্কিত হচ্ছেন। অনেকে জ্বর হলে দুশ্চিন্তায় পড়ে যাচ্ছেন। অথচ চিকিৎসকের পরামর্শ নিলে অধিকাংশ রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন।’
বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘শিশুরা এই সময়ে বেশি আক্রান্ত হয়। তবে এবছর রোগীর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কিছুটা বেশি। ডেঙ্গু নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর চেয়ে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ বেশি জ্বর-কাশি নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসছেন।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, ‘বর্তমানে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, মৌসুমি ফ্লু এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা আক্রান্ত রোগী দেখা যাচ্ছে। ইনফ্লুয়েঞ্জা আক্রান্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে শ্বাসনালীর মারাত্মক সংক্রমণ হতে পারে, যা শিশু, বৃদ্ধ এবং অন্য গুরুতর অসুস্থদের জন্য বেশ ঝুঁকিপূর্ণ।’
তিনি আরও বলেন, ‘এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়কাল মৌসুমি ফ্লু ও ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের জন্য উপযুক্ত। একজন ব্যক্তি আক্রান্ত হলে পরিবারের অন্য সদস্যদের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। তাই আক্রান্ত ব্যক্তিকে ঘরে আইসোলেশনে রাখা এবং চিকিৎসকের পরামর্শে চিকিৎসা নেওয়াই সবচেয়ে নিরাপদ। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সাধারণ ফ্লু থেকে এক সপ্তাহে রোগী সুস্থ হয়ে ওঠে। তবে শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য এ সময় বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি।’
এমএইচএস