Logo

স্বাস্থ্য

ডেঙ্গু আক্রান্ত বাড়ছে তিন গুণ হারে, টানা বৃষ্টি বাড়াচ্ছে শঙ্কা

সাহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া

সাহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া

প্রকাশ: ০২ আগস্ট ২০২৫, ১৮:১৭

ডেঙ্গু আক্রান্ত বাড়ছে তিন গুণ হারে, টানা বৃষ্টি বাড়াচ্ছে শঙ্কা

প্রতীকী ছবি (এআই দিয়ে তৈরি)

দেশজুড়ে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। চলতি বছর আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় তিনগুণ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, গত বছর জুলাই পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৬ হাজার ৫৯৭ জন এবং মৃত্যু হয়েছিল ৫৮ জনের। অথচ চলতি বছর এই সময়ের মধ্যেই আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২১ হাজার ৩২৭ জনে, মৃত্যু হয়েছে ৮৪ জনের।

বিশেষ করে জুলাই মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১০ হাজার ৬৮৪ জন এবং মারা গেছেন ৪১ জন— যা এ বছরের মোট আক্রান্ত ও মৃত্যুর প্রায় অর্ধেক। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে।

ডেঙ্গুর বিস্তারে প্রধান কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা দায়ী করছেন এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতাকে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় উঠে এসেছে উদ্বেগজনক চিত্র। গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের প্রতিটি জেলায় এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব নির্দেশক ‘ব্রেটো ইনডেক্স’ ২০-এর ওপরে, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত নিরাপদ সীমার চেয়ে বেশি। গবেষণায় বলা হয়েছে, বরগুনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, কক্সবাজার, গাজীপুর, পিরোজপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, চাঁদপুর ও মাদারীপুর জেলায় ডেঙ্গুর প্রকোপ আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।

গবেষণার প্রধান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন এখন এডিস মশার বিস্তারকে আরও ত্বরান্বিত করছে। অল্প সময়ের বৃষ্টিতে যেসব স্থানে পানি জমে, তা দ্রুত মশার প্রজননস্থলে পরিণত হয়। ফলে ডেঙ্গু এখন আর মৌসুমি রোগ নয়, এটি জলবায়ু, পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের এক সম্মিলিত সংকটে পরিণত হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কেবল ফগিং বা কীটনাশক ছিটানো যথেষ্ট নয়। দরকার একটি সমন্বিত ও বিজ্ঞানভিত্তিক কৌশল— যা মূলত মশার প্রজননচক্র ধ্বংসের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠবে।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, ‘ডেঙ্গু ভাইরাস মানুষের শরীরে ১৫ থেকে ২০ দিন পর্যন্ত থাকে। এ সময় ভাইরাস বহনকারী কাউকে মশা কামড়ালে এবং সেই মশা আরেকজনকে কামড়ালে নতুন আক্রান্ত তৈরি হয়। এখন যেহেতু দেশে টানা বৃষ্টি হচ্ছে, পানি জমে যাওয়ায় মশার প্রজননের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের মশা নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতিগুলো কার্যকর নয়। ফলে এখন সবকিছু প্রকৃতিনির্ভর হয়ে গেছে। প্রাকৃতিকভাবে কমলে তবেই পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসবে।’

জনস্বাস্থ্যবিদেরা বলছেন, এখনই সমন্বিত উদ্যোগ না নিলে দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। পরিস্থিতির ভয়াবহতা অনুধাবন করে স্থানীয় সরকার, স্বাস্থ্য বিভাগ ও পরিবেশ অধিদপ্তরকে একসাথে সমন্বিত ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিতে হবে। না হলে সামনে অপেক্ষা করছে আরও বড় বিপর্যয়।

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

ডেঙ্গু ভাইরাস

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর