Logo

স্বাস্থ্য

শিশুদের বিনামূল্যে টিকা, টাইফয়েড মোকাবিলায় বড় উদ্যোগ

সাহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া

সাহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া

প্রকাশ: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২০:৪২

শিশুদের বিনামূল্যে টিকা, টাইফয়েড মোকাবিলায় বড় উদ্যোগ

বাংলাদেশে টাইফয়েড জ্বরের ভয়াবহ প্রাদুর্ভাব রোধে আগামী ১২ অক্টোবর থেকে দেশব্যাপী টিকাদান ক্যাম্পেইন শুরু করতে যাচ্ছে সরকার। সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) আওতায় পরিচালিত এ উদ্যোগে ৯ মাস থেকে ১৫ বছর বয়সী ৪ কোটি ৯০ লাখ শিশুদের বিনামূল্যে টাইফয়েড টিকা দেওয়া হবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই টিকা সাধারণ টাইফয়েড প্রতিরোধের পাশাপাশি দিন দিন বেড়ে চলা ওষুধ প্রতিরোধী টাইফয়েডের বিস্তার রোধেও কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, প্রতিবছর বিশ্বে প্রায় ৯০ লাখ মানুষ টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে মৃত্যু ঘটে প্রায় এক লাখ ১০ হাজার মানুষের। আক্রান্ত ও মারা যাওয়ার বেশির ভাগই দক্ষিণ এশিয়া এবং সাব-সাহারান আফ্রিকার মানুষ। উন্নত দেশগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় টাইফয়েডের প্রাদুর্ভাব অনেকাংশেই কমেছে। তবে বাংলাদেশসহ অনেক উন্নয়নশীল দেশে এই সংক্রামক রোগ এখনো অন্যতম জনস্বাস্থ্য সমস্যা।

দ্য গ্লোবাল বারডেন অব ডিজিজের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রায় ৪ লাখ ৭৮ হাজার মানুষ টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে প্রায় ৮ হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটে। ভয়াবহ বিষয় হলো, মৃতদের ৬৮ শতাংশই শিশু। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ বাস্তবতা বাংলাদেশে শিশু স্বাস্থ্য সুরক্ষায় টাইফয়েড টিকার গুরুত্ব আরও বাড়িয়ে দেয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টাইফয়েড জীবাণু স্যালমোনেলা টাইফি দ্বারা সৃষ্ট। এটি মূলত দূষিত পানি ও খাবারের মাধ্যমে ছড়ায়। ঝুঁকি বেশি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা, বস্তি, নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠী এবং যেখানে নিরাপদ পানি ও স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশনের অভাব রয়েছে। আক্রান্ত হলে শুধু শারীরিক জটিলতাই নয়, অর্থনৈতিক ক্ষতিও হয় এবং অনেক ক্ষেত্রে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

এছাড়াও আশঙ্কাজনক বিষয় হলো, টাইফয়েড চিকিৎসায় ব্যবহৃত বহু অ্যান্টিবায়োটিক আর কার্যকর হচ্ছে না। জীবাণু অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলছে, ফলে ওষুধ প্রতিরোধী টাইফয়েড ক্রমশ বাড়ছে। এই অবস্থায় টিকা গ্রহণই সবচেয়ে নিরাপদ সমাধান বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, টিকাদান কর্মসূচির মাধ্যমে আগামী কয়েক বছরে টাইফয়েড রোগীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমে আসবে। একদিকে ওষুধ প্রতিরোধী টাইফয়েডের ঝুঁকি হ্রাস পাবে, অন্যদিকে পরিবার ও সমাজের ওপর অর্থনৈতিক চাপও কমবে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, একবার টাইফয়েডে আক্রান্ত হলে শুধু চিকিৎসা খরচই নয়, দীর্ঘ সময় কর্মক্ষমতা হারাতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি হয়ে জীবন ঝুঁকির মুখে পড়ে। তাই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে টিকা গ্রহণের বিকল্প নেই।

সরকার আশা করছে, দেশব্যাপী এই টিকাদান কর্মসূচি সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশে টাইফয়েডজনিত মৃত্যু অনেকাংশে কমে আসবে। একই সঙ্গে শিশুদের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়াতে এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন জীবনধারা গড়ে তুলতে জনসচেতনতা কার্যক্রমও চালানো হবে।

শিশুদের বিনামূল্যে টাইফয়েড টিকার কর্মসূচির বিষয়ে স্বাস্থ্য মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর বলেন, ‘টাইফয়েড জ্বর একটি প্রতিরোধযোগ্য সংক্রামক রোগ। শিশুদের সুরক্ষায় সরকার বিনামূল্যে টাইফয়েড টিকা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদিত এই টিকা নিরাপদ ও কার্যকর। সরকারের এই ক্যাম্পেইন শুধু শিশুদের জীবন রক্ষা নয়, দীর্ঘমেয়াদে টাইফয়েডজনিত অসুস্থতা ও মৃত্যুহার কমাতেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।’

এসআইবি/এমএইচএস

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর