Logo

স্বাস্থ্য

কুমেকে ৪ লাখ টাকার ওষুধ ৫১ লাখে ক্রয় নিয়ে বাংলাদেশের খবরকে যা জানাল মন্ত্রণালয়

নুর মোহাম্মদ মিঠু

নুর মোহাম্মদ মিঠু

প্রকাশ: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২২:৪৬

কুমেকে ৪ লাখ টাকার ওষুধ ৫১ লাখে ক্রয় নিয়ে বাংলাদেশের খবরকে যা জানাল মন্ত্রণালয়
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালে ওষুধ ক্রয়ে ভয়াবহ দুর্নীতি ও অনিয়মের চিত্র প্রকাশ্যে এসেছে। বাজারে সর্বোচ্চ ৪ লাখ টাকার ওষুধ কিনতে গিয়ে কুমেক কর্তৃপক্ষ বিল দেখিয়েছে ৫১ লাখ ৯৬ হাজার টাকা। শুধু তাই নয়, এমন কিছু ওষুধ কেনা হয়েছে, যা আগামী ১৫-২০ বছরেও ব্যবহার করে শেষ করা সম্ভব হবে না। চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, এটি সরকারি অর্থের সরাসরি লুটপাট। এ ঘটনায় গত মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) ‘কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ওষুধ ক্রয়ে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করে বাংলাদেশের খবর। প্রতিবেদন প্রকাশের পরপরই একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

অভিযোগ অনুযায়ী, ইনজেকশন পেনটোথাল সোডিয়াম (১ গ্রাম, ৪০০০ ভায়েল) কেনার ক্ষেত্রে বাজারদর সর্বোচ্চ ৪ লাখ টাকা হলেও কুমেকের ক্রয় বিল দেখানো হয়েছে ৫১ লাখ ৯৬ হাজার টাকা। অর্থাৎ শুধু এই একটি ওষুধেই ৪৮ লাখ টাকার অতিরিক্ত ব্যয় দেখানো হয়েছে।  চিকিৎসকদের ভাষায়, এটি ‘অর্থ লুটপাটের জঘন্য উদাহরণ।’ 

একইভাবে, অ্যারোভাসটাটিন ২০ এমজি ট্যাবলেট কেনা হয়েছে ১ কোটি ৭৯ লাখ টাকায়— প্রায় ৯০ লাখ ট্যাবলেট। অথচ কুমেকে এত পরিমাণ ট্যাবলেটের চাহিদাই নেই। চিকিৎসকরা বলছেন, এই ওষুধের স্টক আগামী ১৫-২০ বছরেও শেষ হবে না এবং এর অধিকাংশ মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে নষ্ট হয়ে যাবে।

চিকিৎসক ও স্টাফদের অভিযোগ, এই অনিয়মের মূল নেপথ্যকারি প্রধান সহকারী দেলোয়ার হোসেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি কুমেকের টেন্ডার ও কেনাকাটার নিয়ন্ত্রণ হাতে রেখেছেন। সাবেক এমপি বাহারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে বিগত ১৫ বছর তিনি দাপটের সঙ্গে অনিয়ম চালিয়ে গেছেন। অভিযোগ রয়েছে, এই সময়ে তিনি এমপি বাহার ও আওয়ামী লীগ নেতা শহীদকেও সুবিধা পাইয়ে দিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে পদোন্নতিতে জালিয়াতি, ঢুলিপাড়ায় ফ্ল্যাট ক্রয়সহ অস্বাভাবিক সম্পদ অর্জনেরও অভিযোগ রয়েছে।

তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এমএসআর ওষুধসহ বিভিন্ন মালামাল কেনার জন্য কুমেকে ১৩টি টেন্ডারের মাধ্যমে ২২ কোটি ৮৪ লাখ টাকার কেনাকাটা হয়। এসব টেন্ডারে বাজারদরের তুলনায় ৮-১০ গুণ বেশি দামে ওষুধ কেনা হয়েছে। একই সঙ্গে প্রয়োজনের অতিরিক্ত বিপুল পরিমাণ ওষুধ কেনার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমনকি অভিযোগ রয়েছে, টেন্ডার ওপেনিং কমিটি ও টেন্ডার মূল্যায়ন কমিটিতে একই ব্যক্তির উপস্থিতি ছিল, যা নিয়মবহির্ভূত। এই সুযোগ নিয়েই ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে।

সম্প্রতি ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) আয়োজিত এক প্রতিবাদ সভায় চিকিৎসকরা অভিযোগের প্রমাণ তুলে ধরে বলেন, চিকিৎসা খাতে এই ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। তারা দাবি করেন, দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে এবং লুটপাট হওয়া অর্থ সরকারি কোষাগারে ফেরত দিতে হবে।

অভিযোগে কুমেক হাসপাতালের পরিচালক ও টেন্ডার মূল্যায়ন কমিটির সভাপতি ডা. মাসুদ পারভেজ, সহকারী পরিচালক ও সদস্য সচিব ডা. নিসাত সুলতানা এবং কুমিল্লা ড্যাবের সভাপতি ডা. এম এম হাসানকেও জড়িত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। 

তবে ডা. এম এম হাসান অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘এগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের কারণে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।’ 

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কুমেকের পরিচালক ডা. মাসুদ পারভেজ বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘আমি প্রফেশনাল কাজে ব্যস্ত আছি। এখন কথা বলতে পারব না।’

এ ঘটনায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী (প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদার) অধ্যাপক ড. মো. সায়েদুর রহমান বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) রাতে মুঠোফোনে বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যেই কুমেকে ওষুধ কেনাকাটায় দুর্নীতির বিষয়টি জেনেছি। তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে। আগামী সপ্তাহে প্রতিবেদন হাতে পাওয়া মাত্রই জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ সরকার আমলে তো আপনারা দেখছেন যেকোনো দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এটাও হবে।’

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর