Logo

স্বাস্থ্য

ট্রমা সেন্টার নিজেই ট্রমায়

সাহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া

সাহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া

প্রকাশ: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৭:০৮

ট্রমা সেন্টার নিজেই ট্রমায়

ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে ট্রমা সেন্টার ভবন। ছবি : বাংলাদেশের খবর

    • সারাদেশে অচল হয়ে পড়ে আছে ১৬ ট্রমা সেন্টার
    • ব্যবহারের আগেই অনুপযোগী বেশিরভাগ ভবন

ঢাকা জেলার ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে বহুতল ট্রমা সেন্টার ভবন দাঁড়িয়ে আছে পরিত্যক্ত অবস্থায়। স্থানীয়দের কাছে এটি এখন ‘ভূতের বাড়ি’ নামে পরিচিত। দিনের বেলাতেও ভবনের ভেতরে ঘুটঘুটে অন্ধকার, চারপাশে নোংরা পরিবেশ— সব মিলিয়ে ভবনটি একেবারেই ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

জানা গেছে, সড়ক দুর্ঘটনায় তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দেওয়ার জন্য সারাদেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক-মহাসড়কের পাশে যে ট্রমা সেন্টারগুলো নির্মাণ করা হয়েছিল, ধামরাই ট্রমা সেন্টার তারই একটি। কিন্তু ভবন নির্মাণের পর একদিনও হাসপাতাল হিসেবে চালু হয়নি এটি। দীর্ঘদিন অব্যবহৃত থাকায় বর্তমানে ভবনটি ভেঙে পড়ার মতো অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে।

একই অবস্থা দেখা গেছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মুন্সিগঞ্জ অংশেও নির্মিত ট্রমা সেন্টারটির।নির্মাণের পর কখনো চালু হয়নি। বর্তমানে ভবনটি দখল করে রেখেছে মাদকসেবী ও অপরাধীরা।

স্থানীয়রা জানান, কোটি কোটি টাকা খরচ করে এসব ট্রমা সেন্টার নির্মাণ হলেও সেগুলো এখন অব্যবহারযোগ্য স্থাপনায় পরিণত হয়েছে। স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের পরিবর্তে এগুলো হয়ে উঠেছে অপরাধীদের আশ্রয়কেন্দ্র।

স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের তথ্যমতে, দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় আহতদের জন্য বিভিন্ন সময় ২১টি ট্রমা সেন্টার নির্মাণ করা হয়। এর মধ্যে ১০টি হয়েছে বিএনপি ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর জোট সরকারের আমলে। বাকি ১১টি ২০১০ সালে নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়।

ট্রমা সেন্টারগুলো নির্মাণ করা হয়েছে পাবনার আটঘরিয়া, বগুড়ার শেরপুর, সিরাজগঞ্জ সদর ও উল্লাপাড়া, কিশোরগঞ্জের ভৈরব, গোপালগঞ্জ সদর, মাদারীপুরের শিবচর, মানিকগঞ্জের শিবালয়, শরীয়তপুরের জাজিরা, ফরিদপুরের ভাঙ্গা (মধুখালী), মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর, সাভারের ধামরাই, টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা, চট্টগ্রামের লোহাগাড়া, হাটহাজারী ও রাউজান, কুমিল্লার দাউদকান্দি, ফেনীর মহিপাল, ময়মনসিংহের ভালুকা, সুনামগঞ্জের ছাতক এবং হবিগঞ্জের বাহুবলে।

২১টি ট্রমা সেন্টারের মধ্যে দুটির নির্মাণকাজ এখনো শেষ হয়নি। অন্য দুটিতে বহির্বিভাগ চালু রয়েছে। এছাড়া একটি সংশ্লিষ্ট জেলা হাসপাতালের অর্থোপেডিকস বিভাগের কার্যক্রম চালাতে ব্যবহার হচ্ছে। বাকি ১৬টির ভবন ও কিছু সরঞ্জামাদি থাকলেও জনবল না থাকায় অচল পড়ে আছে। কোথাও কোথাও ভবনই পরিত্যক্ত হওয়ার উপক্রম।

মহাসড়কের পাশে ট্রমা সেন্টার নির্মাণ করার উদ্দেশ্য ছিল, দুর্ঘটনা ঘটলে দ্রুত আহতদের সেখানে নিয়ে যাওয়া এবং চিকিৎসা দেওয়া, যাতে প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হয়। প্রতিটি ট্রমা সেন্টারে সাতজন পরামর্শক চিকিৎসক (কনসালট্যান্ট), তিনজন অর্থোপেডিকস সার্জন, দুজন অ্যানেসথেটিস্ট (অবেদনবিদ), দুজন আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তাসহ মোট ১৪ জন চিকিৎসক, ১০ জন নার্স এবং ফার্মাসিস্ট, রেডিওগ্রাফার, টেকনিশিয়ানসহ ৩৪টি পদ সৃজনের প্রস্তাব করা হয়েছিল। কিন্তু কোনো সেন্টারেই পদ অনুযায়ী জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়নি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সরঞ্জামও দেওয়া হয়নি।

কিন্তু প্রায় দুই যুগ পেরিয়ে গেলেও কোনো সেন্টারেই পদ অনুযায়ী জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়নি। ফলে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত স্থাপনাগুলো এখন অচল হয়ে পড়ে আছে। জনবল নিয়োগের অভাবে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের পরিবর্তে এসব ট্রমা সেন্টার সরকারের জন্য গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছে।

ট্রমা সেন্টারগুলোর বিষয়ে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল হোসেন বলেন, বিগত সরকারের সময় স্বাস্থ্যসেবায় অপরিকল্পিত প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করা হয়। কীভাবে চলবে, তা ঠিক না করেই নির্মাণ করায় রাষ্ট্রের অর্থ অপচয় হয়েছে। পরিকল্পনাগত দুর্বলতার কারণে ট্রমা সেন্টারগুলো কাজে লাগানো যায়নি। ট্রমা সেন্টার চালানোর মতো জনবল নেই। নির্মিত ভবনগুলো কীভাবে কাজে লাগানো যায়, সে বিষয়ে পরিকল্পনা হচ্ছে।

এসআইবি/এমএইচএস

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর