চৌদ্দগ্রাম স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১ মাসে রেকর্ড ১২৭ নরমাল ডেলিভারি
বাংলাদেশের প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫ অক্টোবর ২০২৫, ১৭:১০
গত সেপ্টেম্বর মাসে রেকর্ড সংখ্যক মায়ের নরমাল ডেলিভারি সম্পন্ন করেছে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। উপজেলা পর্যায়ের সরকারি স্বাস্থ্যসেবায় এটি সাম্প্রতিক সময়ের অন্যতম বড় অর্জন হিসেবে দেখা হচ্ছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, মাসজুড়ে মোট ১২৭ জন প্রসূতি মায়ের নরমাল ডেলিভারি সফলভাবে সম্পন্ন করা হয়।
এই সাফল্য কেবল সংখ্যায় নয়, এটি সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থা, সেবার মানোন্নয়ন ও সচেতনতার এক উজ্জ্বল প্রতিফলন, বলছেন সংশ্লিষ্টরা। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তথ্যমতে, সেপ্টেম্বর মাস জুড়ে প্রতিদিনই একাধিক নরমাল ডেলিভারি সম্পন্ন হয়েছে। মিডওয়াইফ, সিনিয়র নার্স ও চিকিৎসকরা ২৪ ঘণ্টা নিরলসভাবে কাজ করে মায়েদের নিরাপদ প্রসব নিশ্চিত করেছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রশিদ আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘রেকর্ড সংখ্যক নরমাল ডেলিভারি আমাদের স্বাস্থ্যকর্মীদের নিষ্ঠা ও সক্ষমতার প্রমাণ। জনগণ এখন বুঝতে পারছেন— সরকারি হাসপাতালেও নিরাপদ, সাশ্রয়ী ও মানসম্পন্ন সেবা পাওয়া যায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য শতভাগ নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত করা। কোনো মা যেন বাড়িতে বা অদক্ষ ধাত্রী মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ প্রসবে না যান, সেটিই আমাদের মূল চাওয়া।’
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মিডওয়াইফ ও নার্সদের ভাষায়, ‘প্রসবের সময় মাকে সাহস জোগানো থেকে শুরু করে প্রসবোত্তর যত্ন পর্যন্ত আমরা পাশে থাকি।’ হাসপাতালের ২৪ ঘণ্টার ডেলিভারি ইউনিট এখন প্রত্যন্ত গ্রামের গর্ভবতী মায়েদের কাছে এক নির্ভরতার আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে। ডেলিভারির পর মা ও নবজাতককে দেওয়া হয় ওষুধ, পুষ্টি পরামর্শ ও নিয়মিত ফলো-আপ সেবা, যা স্বাস্থ্যসেবার মান আরও উন্নত করেছে।
অতীতে অনেক পরিবার স্থানীয় ধাত্রী দিয়ে বাড়িতেই সন্তান প্রসব করাতো, যা প্রায়ই মা ও শিশুর জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতো। এখন পরিস্থিতি বদলেছে— নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, কমিউনিটি ক্লিনিকের সচেতনতামূলক প্রচারণা এবং সরকারি উদ্যোগে মায়েরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে হাসপাতালে ডেলিভারি করতে আসছেন। চৌদ্দগ্রাম স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের তুলনায় এবার নরমাল ডেলিভারির হার বেড়েছে ৪০ শতাংশের বেশি।
এক মাসে ১২৭টি সফল নরমাল ডেলিভারি উপজেলা পর্যায়ে এক অনন্য মাইলফলক, যা ‘নিরাপদ মাতৃত্ব কর্মসূচি’র বাস্তবায়নে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, চৌদ্দগ্রাম স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এই অর্জন অন্যান্য উপজেলার জন্য অনুপ্রেরণার মডেল হতে পারে। সরকারি স্বাস্থ্যকর্মীরা যদি একই নিষ্ঠা ও আন্তরিকতায় কাজ অব্যাহত রাখেন, তবে বাংলাদেশে মাতৃ ও নবজাতক মৃত্যুহার আরও উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে এবং ‘নিরাপদ মাতৃত্ব’ হবে প্রতিটি পরিবারের বাস্তবতা।
এনএমএম/এমএইচএস

