বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস আজ
দেশে আক্রান্ত ১ কোটি ৩৮ লাখ, সবচেয়ে ঝুঁকিতে তরুণরা
ডিজিটাল ডেস্ক
প্রকাশ: ১৪ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:১৭
গ্রাফিক্স : বাংলাদেশের খবর
আজ ১৪ নভেম্বর, বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস। সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশেও দিনটি নানা কর্মসূচির মাধ্যমে পালিত হচ্ছে। এ বছরের প্রতিপাদ্য— ‘কর্মক্ষেত্রে সুস্থ থাকুন, ডায়াবেটিসকে দূরে রাখুন’। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে ডায়াবেটিস এখন শুধু বয়স্কদের রোগ নয়; তরুণরাই সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। জীবনযাত্রার অনিয়ম, স্থূলতা, মানসিক চাপ ও কম শারীরিক পরিশ্রমের কারণে বাংলাদেশে তরুণদের ডায়াবেটিস উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে।
বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি (বাডাস) জানিয়েছে, দেশে বর্তমানে ১ কোটি ৩৮ লাখের বেশি মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। তাদের প্রায় অর্ধেকই জানেন না যে তারা এই রোগে ভুগছেন। আরও উদ্বেগের বিষয় হলো— দেশের প্রতি ১০ জন তরুণের মধ্যে অন্তত একজন ডায়াবেটিস বা প্রিডায়াবেটিসে আক্রান্ত। এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি ২৫ জনে ১ জন তরুণের ডায়াবেটিস রয়েছে এবং আক্রান্তদের দুই-তৃতীয়াংশই নিজ অবস্থার সম্পর্কে অজ্ঞাত।
বিশেষজ্ঞদের মতে, তরুণদের ডায়াবেটিস বয়স্কদের তুলনায় ভিন্ন বৈশিষ্ট্য বহন করে। তরুণদের ইনসুলিনের কার্যক্ষমতা কম থাকে এবং ইনসুলিন নিঃসরণকারী কোষ দ্রুত ক্ষয় হয়। ফলে রোগ দ্রুত জটিল আকার ধারণ করে। সবচেয়ে ভয়াবহ বিষয় হলো, তরুণদের ডায়াবেটিসে ওষুধের রেসপন্সও তুলনামূলক কম দেখা যায়, যা ভবিষ্যতের জন্য বড় হুমকি।
বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ ডা. মো. দেলোয়ার হোসেন টিটু বলেন, বয়স্কদের তুলনায় তরুণদের ডায়াবেটিসজনিত জটিলতা দ্রুত দেখা দেয়— হার্ট ডিজিজ, কিডনি সমস্যা, চোখের জটিলতা ও স্নায়ুজনিত বিভিন্ন রোগ খুব কম বয়সেই সৃষ্টি হতে পারে। তার মতে, ‘কেবল রক্তে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণ নয়, তরুণদের ক্ষেত্রে স্থূলতা ও মানসিক চাপ— এই দুটি বিষয়কে চিকিৎসার মূল অগ্রাধিকার দিতে হবে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি এমনিতেই বেশি; তার মধ্যে তরুণদের আক্রান্ত হওয়া এক অশনি সংকেত।’
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ও আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিক ফেডারেশন (IDF) বলছে, বিশ্বে প্রতি ১০ সেকেন্ডে একজন ডায়াবেটিস রোগীর মৃত্যু হয় এবং দুইজন নতুনভাবে শনাক্ত হন— পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ, তা এখানেই স্পষ্ট।
গর্ভকালীন ডায়াবেটিসও বাংলাদেশে বড় সমস্যা হয়ে উঠছে। বাডাস জানায়, দেশের ২৬ শতাংশ গর্ভবতী নারী গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন, যার ৬৫ শতাংশ পরবর্তীতে টাইপ-২ ডায়াবেটিসে পরিণত হয়। এই অবস্থায় নারী ও ভবিষ্যৎ সন্তানের উভয়ের জন্য ঝুঁকি বহুগুণ বৃদ্ধি পায়।
জাতীয় অধ্যাপক ও বাডাস সভাপতি একে আজাদ খান বলেন, ‘ডায়াবেটিস এখন শুধু ব্যক্তিগত রোগ নয়, এটি কর্মক্ষেত্রের উৎপাদনশীলতার ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলছে। কর্মস্থলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে কাজ করা, চাপ, অনিয়মিত খাবার— সবই ডায়াবেটিস বৃদ্ধির বড় কারণ। কর্মস্থলভিত্তিক সচেতনতা সৃষ্টি করতে না পারলে এই রোগ নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়ে যাবে।’
বারডেমের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. ফারুক পাঠান মনে করেন, প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও মানসিক চাপমুক্ত জীবনযাপন ডায়াবেটিস প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ‘কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবান পরিবেশ গড়ে তুলতে পারলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে বড় অগ্রগতি সম্ভব,’ বলেন তিনি।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে—
- তরুণ বয়সে ডায়াবেটিস আক্রান্ত হলে জীবনভর জটিলতার ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়।
- স্থূলতা, কাজের চাপ, দীর্ঘ সময় বসে থাকা এবং ফাস্টফুডই তরুণদের সবচেয়ে বড় শত্রু।
- নিয়মিত ব্যায়াম, সুষম খাদ্য, মানসিক প্রশান্তি ও ওজন নিয়ন্ত্রণই ডায়াবেটিসের বিরুদ্ধে প্রধান সুরক্ষা।
বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা— এখনই জীবনযাত্রা বদলাতে না পারলে আগামী এক দশকে দেশে ডায়াবেটিসের হার দ্বিগুণ হয়ে যাবে এবং সবচেয়ে বেশি বিপর্যয় নেমে আসবে তরুণ প্রজন্মের ওপর।
বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস উপলক্ষে দুই দিনব্যাপী কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি। শাহবাগে প্লাকার্ড হাতে রোড শো, হ্রাসকৃত মূল্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষা, বিনামূল্যে ডায়াবেটিস নির্ণয়, অডিটরিয়ামে আলোচনা সভা, স্বেচ্ছায় রক্তদানসহ বিভিন্ন কার্যক্রম আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়াও সচেতনতামূলক ক্রোড়পত্র, পোস্টার, নিউজলেটার ও স্টিকার প্রকাশ করা হবে।
এমএইচএস

