Logo

স্বাস্থ্য

রাজনীতির যাতাকলে বন্ধ বিশ্বের প্রথম ফাইলেরিয়া হাসপাতাল

Icon

নীলফামারী প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ১৭:৩০

রাজনীতির যাতাকলে বন্ধ বিশ্বের প্রথম ফাইলেরিয়া হাসপাতাল

ছবি : বাংলাদেশের খবর

নীলফামারীর সৈয়দপুরে বিশ্বের প্রথম ফাইলেরিয়া চিকিৎসা কেন্দ্র দীর্ঘ তিন বছর ধরে রাজনৈতিক বিবাদে আটকে থাকার কারণে বন্ধ রয়েছে। বিশেষায়িত এই স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে অযত্ন-অবহেলায় ধ্বংসের পথে।

জানা যায়, এক সময় উত্তরের নীলফামারী, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, দিনাজপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধায় ফাইলেরিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে বেশি ছিল। ২০০২ সালে জাপান সরকারের অর্থায়নে সৈয়দপুরের কামারপুকুর ইউনিয়নের ধলাগাছ এলাকায় ৭৫ শতাংশ জায়গা দখল করে হাসপাতালটি গড়ে ওঠে।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ক্লিনিক্যাল ইম্যুনোলজি অব বাংলাদেশ (আইএসিআইবি) এর মাধ্যমে হাসপাতালটি পরিচালিত হয়েছিল। স্থানীয় কবির সরদার জমি দান করায় এটি সম্ভব হয়।

হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ডা. মোয়াজ্জেম হোসেন ১৮ জন দেশি-বিদেশি চিকিৎসক নিয়ে কার্যক্রম শুরু করেন। পরে জাপান, কানাডা ও বাংলাদেশ সরকারের আর্থিক সহায়তায় দুটি বহুতল ভবনে হাসপাতালের কার্যক্রম সম্প্রসারিত হয়। জাপানসহ অন্যান্য দেশ থেকে গবেষকরা এখানে আসতেন।

২০১১ সালে ব্যক্তিগত স্বার্থে ডা. মোয়াজ্জেম হোসেন হাসপাতালটি বন্ধ করে ঢাকা সাভারে আরেকটি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন। সৈয়দপুর হাসপাতালের ৬৯.৫০ শতক জমির মধ্যে ২৯.৫০ শতক বিক্রি করেন। এরপর হাসপাতালের সেবা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায় এবং দাতা সংস্থাগুলোও মুখ ফিরিয়ে নেয়।

২০২১ সালে ৩ অক্টোবর বিপিডিএ হেলথ এডুকেশন ট্রেনিং এন্ড টেকনোলজি লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান হিসেবে হাসপাতালটি নতুন নামে চালু হয়। সুবিধাবঞ্চিত মানুষকে টোকেন মূল্যে চিকিৎসা দেওয়ার প্রত্যয় নিয়ে প্রায় ৩৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে দুর্নীতির কারণে হাসপাতাল পুনরায় বন্ধ হয়ে যায়।

হাসপাতালের সাবেক উপদেষ্টা ডা. শেখ নজরুল ইসলাম বলেন, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ও স্থানীয় নেতাদের স্বার্থপরতার কারণে প্রতিষ্ঠানটি ধ্বংসের পথে। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই আন্তর্জাতিক মানের এই হাসপাতাল দ্রুত চালু হোক এবং অতীত গৌরব পুনরুদ্ধার হোক।’

হাসপাতালের বর্তমান পরিচালনায় দূর্নীতি ও বকেয়া বেতন প্রসঙ্গে কর্মীরা অভিযোগ করেছেন। আয়া রোজিনা বেগম বলেন, ‘চাকরি ছেড়েও কেউ জামানত ও উন্নয়ন ফি ফেরত পায়নি। তিন বছর ধরে হাসপাতাল বন্ধ হলেও কোনো সমাধান হয়নি।’

জমিদাতার ছেলে বাবুল হোসেন অভিযোগ করেন, ‘নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতানো হয়েছে। হাসপাতাল ধ্বংস করা হয়েছে।’ ফয়েজ আহমেদ ও ডা. রাকিবুল ইসলাম তুহিনের সঙ্গে এই বিষয়ে বিতর্ক রয়েছে।

সিভিল সার্জন ডা. আব্দুর রাজ্জাক জানান, হাসপাতাল চালুর বিষয়ে সরকারের কোনো সিদ্ধান্ত নেই। মালিকানা ও পরিচালনার জটিলতা নিরসন করে আদালত বা উভয় পক্ষের সম্মতিতে সিদ্ধান্ত হলে তালার চাবি হস্তান্তর করা হবে।

ডা. মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘প্রতিষ্ঠান সচল থাকুক, এটাই আমার ইচ্ছা। কিছু কুচক্রী মহলের কারণে হাসপাতাল তিন বছর ধরে বন্ধ।’

তৈয়ব আলী সরকার/এআরএস

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জনদুর্ভোগ

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর