শুধু স্ক্রিন নয়, শিশুর চোখের সমস্যায় দায়ী দূষিত বায়ুও
ডিজিটাল ডেস্ক
প্রকাশ: ২৩ নভেম্বর ২০২৫, ১৩:৫৭
ভারতের বড় শহরগুলোতে শিশুদের মধ্যে দ্রুতগতিতে আগেভাগে মায়োপিয়া বা দূরদৃষ্টি সমস্যার ঘটনা বাড়ছে। কিছু ক্ষেত্রে মাত্র পাঁচ বছর বয়সে শিশুরা মায়োপিয়ার শিকার হচ্ছেন। দীর্ঘদিন ধরে বাবা–মায়েরা শিশুদের দৃষ্টি খারাপ হওয়ার জন্য স্ক্রিনকে দায়ী করলেও, এবার চিকিৎসকেরা শহরের দূষিত বায়ুকে মূল কারণ হিসেবে তুলে ধরছেন।
দিল্লি এনসিএর, হায়দরাবাদ, বেঙ্গালুরুসহ দূষিত মহানগরগুলোতে চক্ষু বিশেষজ্ঞরা দেখছেন, শিশুরা আগেভাগে মায়োপিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে এবং দৃষ্টিশক্তি দ্রুত কমছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) সতর্ক করেছেন, যদি এই পরিবেশগত ঝুঁকি কমানো না হয়, তবে ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের অর্ধেক মানুষ মায়োপিয়ায় আক্রান্ত হতে পারেন।
দূষিত বায়ু কীভাবে চোখের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত করে
শিশুদের চোখের সুস্থ বিকাশের জন্য যথেষ্ট উজ্জ্বল প্রাকৃতিক আলো প্রয়োজন। আলো রেটিনায় ডোপামিন নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ করে, যা চোখের অতিরিক্ত লম্বা হওয়া এবং মায়োপিয়া প্রতিরোধ করে। কিন্তু দূষিত শহরে দিনের আলো কমে যাচ্ছে, চোখে জ্বালা, শুষ্কতা ও প্রদাহ বাড়ছে।
ড. পঙ্কজ রঞ্জন (সাফদরজং হাসপাতালের মায়োপিয়া ক্লিনিক) বলেন, ‘দূষণের কারণে শিশুদের ঘরের বাইরে সময় কমছে। ফলে প্রাকৃতিক আলো পাওয়ার সুযোগ কমে যাচ্ছে। চোখের সুস্থ বিকাশের জন্য যথেষ্ট দিনের আলো অপরিহার্য।’
ড. কৃষ্ণ প্রিয়া (সদরাম আই হসপিটাল, হায়দ্রাবাদ) যোগ করেন, ‘দূষণ শিশুদের বাইরে খেলার সুযোগ সীমিত করে, ফলে ঘরের ভেতরে বেশি সময় কাটে এবং স্ক্রিনের দিকে নজর বাড়ে। চোখে জ্বালা, লালচে ভাব ও শুষ্কতা বাড়ছে। সব মিলিয়ে মায়োপিয়া তাড়াতাড়ি শুরু হওয়ার এক ‘পারফেক্ট স্টর্ম’ তৈরি হচ্ছে।’
উদ্বেগজনক প্রবণতা
ড. রঞ্জন বলেন, ‘এখন পাঁচ–ছয় বছরের শিশুর মধ্যেও মায়োপিয়ার প্রথম লক্ষণ দেখা যাচ্ছে।’
বাবা–মায়েদের করণীয়
-
পরিষ্কার বায়ুর দিনে ৬০–৯০ মিনিট শিশুদের বাইরে খেলতে দিন।
-
ঘরের আলো পর্যাপ্ত রাখুন।
-
২০-২০-২০ নিয়ম মেনে চলুন: প্রতি ২০ মিনিটে ২০ সেকেন্ড ২০ ফুট দূরে তাকান।
-
দূরে ঝাপসা দেখা, চোখ চুলকানো বা স্ক্রিনের কাছে বসার মতো লক্ষণ পর্যবেক্ষণ করুন।
-
নিয়মিত চোখ পরীক্ষা করান (দূষিত শহরে ৬ মাসে একবার)।
-
পরিচ্ছন্ন বায়ু ও নিরাপদ খেলার পরিবেশের জন্য সামাজিকভাবে সমর্থন গড়ে তুলুন।
দূষিত বায়ু শুধু শ্বাসযন্ত্রের জন্যই হুমকি নয়, এটি শিশুদের চোখের স্বাভাবিক বিকাশও প্রভাবিত করছে। কম আলো, চোখে জ্বালা–চুলকানি, ঘরের ভেতরে বেশি সময় এবং স্ক্রিনের দিকে বেশি মনোযোগ, সব মিলিয়ে আগেভাগে মায়োপিয়ার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। বাবা–মায়েরা সঠিক অভ্যাস, নিয়মিত চোখ পরীক্ষা এবং ভালো ঘরোয়া পরিবেশের মাধ্যমে শিশুর চোখ রক্ষা করতে পারেন।

