প্রতীকী ছবি
সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সবাই নিজেকে আরো কর্মক্ষম, দ্রুত ও ফলপ্রসূ করে তুলতে চান। যার কারণে কাজের তালিকা লম্বা হয়, সময় কমে আসে, আর মাথার ভেতর চাপ বাড়তেই থাকে। কিন্তু উৎপাদনশীলতার মূল রহস্য অনেক সময় বেশি কাজ করা নয়, বরং কিছুক্ষণ বিরতি নেওয়া। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সৃজনশীলতা কৌশলবিদ নাতালি নিকসন রিয়েলসিম্পল ডটকম-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলেন, মানুষ যতই ব্যস্ত থাকুক-সামান্য থামা, ভাবা এবং বিশ্রাম নেওয়ার মধ্যেই লুকিয়ে আছে সৃজনশীলতার জ্বালানি। উৎপাদনশীলতা নিয়ে পুরোপুরি নতুনভাবে ভাবা দরকার। নিকসনের মতে, শরীর যেভাবে কাজ, বিশ্রাম ও পুনরুদ্ধারের প্রয়োজন বোধ করে, মস্তিষ্কের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রযোজ্য। সারাক্ষণ দৌড়চ্ছি, কাজ থেকে কাজ, দায়িত্ব থেকে দায়িত্বে। এত দ্রুততার মাঝখানে থামার জায়গাটিই যেন হারিয়ে যাচ্ছে। আর এই থামাই আসলে চিন্তা, মনোযোগ ও সৃজনশীলতার জন্য অপরিহার্য।
চাপের মাঝে বিশ্রাম জরুরি
আধুনিক জীবনে ব্যস্ততা যেন মর্যাদার প্রতীক। নিজেরাও বলি- সময় পাচ্ছি না, অনেক কাজ, একটু দম ফেলার সময় নেই। নিকসন মনে করেন, এই মনোভাবই চিন্তার পরিসরকে সংকুচিত করে ফেলে। যখন কেউ প্রতি মুহূর্তে নিজেকে প্রমাণ করতে চাপে থাকে, তখন মস্তিষ্কে নতুন ধারণা জন্মানোর জায়গা আর থাকে না।
তাই দৌড়াদৌড়ি করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়ি। অথচ মনে করি এটাই স্বাভাবিক জীবনযাপন। তবে বিশ্রামও হতে পারে এক ধরনের কৌশলগত পুনরুদ্ধার।
যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা বাড়ায়, মনোযোগকে শাণিত করে এবং সৃজনশীলতাকে তীক্ষ্ণ করে। মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়াতে বিশ্রাম ঠিক ততটাই গুরুত্বপূর্ণ, যতটা কাজ করা।
নিকসনের পরামর্শ অনুযায়ী, বিশ্রাম নেওয়া মানেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঘুমানো নয়। খুব সামান্য সময়েও মস্তিষ্ক নিজেকে সতেজ করতে পারে- যদি তাকে সুযোগ দেওয়া হয়।
ছোট বিরতি যে কারণে কাজ করে
মানুষের মস্তিষ্ক সারাক্ষণ তথ্য প্রক্রিয়াজাত করে। কাজের মধ্যে থাকলে মস্তিষ্কের একই অংশ অবিরত সক্রিয় থাকে, যা দ্রুত ক্লান্ত হয়ে পড়ে।
তবে যখন কিছু না করে তাকিয়ে থাকা হয় বা মনকে খানিকটা ভাসিয়ে দেওয়া হয়, তখন মস্তিষ্কের ‘ডিফল্ট মোড নেটওয়ার্ক’ সক্রিয় হয়।
এই অংশটি স্মৃতি, সৃজনশীলতা, সমস্যা সমাধান, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এবং আবেগের ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে
দেড় মিনিটের বিরতি বদলে দিতে পারে পুরো দিন
নিকসন একটি সহজ কিন্তু অত্যন্ত কার্যকর অভ্যাসের কথা বলেন- দিনে কয়েকবার মাত্র ৯০ বিরতি নেওয়া। এখানে কোনো বিশেষ প্রস্তুতি লাগে না- না লাগে সরঞ্জাম, না লাগে নির্দিষ্ট স্থান। শুধু একটি টাইমার সেট করতে হবে। চোখ খুলে বা বন্ধ করে কয়েক মুহূর্ত কিছুই করা যাবে না।
শুধু চারপাশে তাকান, আলোয় চোখ বুলিয়ে নিন, জানালার ধারে ভাসমান ধুলো দেখুন, মেঘ দেখুন কিংবা পিঁপড়ার চলাফেরা দেখুন। এই সময়টায় লক্ষ্য হবে- মস্তিষ্ককে কোনো কাজ না দিয়ে একেবারে শিথিল রাখা।
নিকসনের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী- টাইমারের শব্দ যখন বেজে ওঠে, তখন মন অনেক বেশি হালকা লাগে, মাথায় ঘুরপাক খাওয়া ভাবনাগুলো গুছিয়ে আসে। এমনকি জটিল সিদ্ধান্তও আরও সহজভাবে নেওয়া যায়। তিনি বলেন, এই ছোট বিরতিগুলোর জন্য অপেক্ষায় থাকি। বিরতির পর মনে হয়- সবকিছু যেন আবার ঠিক জায়গায় বসে গেছে।
বিকেপি/এমএইচএস

