Logo

স্বাস্থ্য

অকার্যকর হয়ে পড়ছে বহু অ্যান্টিবায়োটিক

Icon

বাংলাদেশের প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:৪০

অকার্যকর হয়ে পড়ছে বহু অ্যান্টিবায়োটিক

গ্রাফিক্স : বাংলাদেশের খবর

দেশে আশঙ্কাজনক হারে কমছে অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের প্রতি চারজনের একজনের দেহে বিভিন্ন ধরনের জীবাণু শনাক্ত হয়েছে। এসব জীবাণুর বিরুদ্ধে বহুল ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিকের অনেক ক্ষেত্রে কার্যকারিতা হ্রাস পাচ্ছে। বাংলাদেশ মেডিকেল ইউনিভার্সিটির (বিএমইউ) বিশ্লেষণে এ চিত্র উঠে এসেছে। বিশ্ব অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল সচেতনতা সপ্তাহ উপলক্ষে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (এএমআর) প্রতিবেদন ২০২৪-২৫ প্রকাশিত হয়। 

সোমবার (৮ নভেম্বর) বিএমইউর মিলটন হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এবারের প্রতিপাদ্য ছিল- ‘এখনই পদক্ষেপ নিন, আমাদের বর্তমানকে রক্ষা করুন, ভবিষ্যৎকে সুরক্ষিত করুন।’

বিএমইউর অণুজীববিজ্ঞান ও রোগপ্রতিরোধ বিদ্যা বিভাগ গত এক বছরে ৪৬ হাজার ২৭৯টি রোগীর নমুনা বিশ্লেষণ করে। এতে দেখা যায়- সিপ্রোফ্লোক্সাসিন, অ্যামোক্সিসিলিন, সেফট্রিয়াক্সোন, জেনটামাইসিনের মতো নিয়মিত ব্যবহৃত ওষুধ থেকে শুরু করে মেরোপেনেম ও টিগেসাইসিলিনের মতো শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিক পর্যন্ত বহু ক্ষেত্রে কার্যকারিতা হারাচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এতে চিকিৎসা জটিল হয়ে পড়ছে, সুস্থতায় লাগছে বেশি সময় এবং বাড়ছে মৃত্যুঝুঁকি। প্রতি চার নমুনায় একটিতে জীবাণু-বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই উচ্চ প্রতিরোধী।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সহযোগী অধ্যাপক ডা. শাহেদা আনোয়ার। তিনি জানান, বিশ্লেষণ করা মোট নমুনার ২৪ শতাংশ (১১ হাজার ১০৮টিতে) বিভিন্ন ধরনের জীবাণু পাওয়া গেছে।

প্রস্রাবের নমুনা : সবচেয়ে বেশি পাওয়া গেছে ইশেরিশিয়া কোলাই। এই জীবাণুর বিরুদ্ধে সিপ্রোফ্লোক্সাসিন ও অ্যামোক্সিসিলিনের কার্যকারিতা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে।

রক্তের নমুনা : স্যালমোনেলা টাইফি-র ক্ষেত্রে সিপ্রোফ্লোক্সাসিনের প্রতিরোধ অত্যন্ত বেশি; এমনকি কিছু ক্ষেত্রে সেফট্রিয়াক্সোনের কার্যকারিতাও কমে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ বিষয়ে আরও গভীর জিনগত বিশ্লেষণ জরুরি।

নিউমোনিয়া ও ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন : ক্লেবসিয়েলা প্রজাতির বিরুদ্ধে সেফট্রিয়াক্সোন, জেনটামাইসিন ও সিপ্রোফ্লোক্সাসিনের প্রতিরোধ পাওয়া গেছে মাঝারি থেকে উচ্চমাত্রায়।

অ্যাসিনেটোব্যাক্টার : আরও উদ্বেগজনক তথ্য হলো এই প্রজাতির বিরুদ্ধে প্রায় সব অ্যান্টিবায়োটিকই এখন অকার্যকর হয়ে পড়ছে। এমনকি মেরোপেনেম ও টিগেসাইসিলিনের মতো ‘শেষ ধাপের’ ওষুধেও প্রতিরোধ বাড়ছে দ্রুত।

আইসিইউতে ছত্রাক সংক্রমণেও বাড়ছে ঝুঁকি : বিশ্লেষণে দেখা যায়, আইসিইউ-কেন্দ্রিক সংক্রমণে বেশি শনাক্ত হয়েছে ক্যান্ডিডা ট্রপিকালিস ও ক্যান্ডিডা অ্যালবিকানস। বিশেষজ্ঞদের মতে, সি. সিফেরি, সি. প্যারাপ্সাইলোসিস, সি. গুইলিয়ারমন্ডি ও সি. ট্রপিকালিস এর বিরুদ্ধে ফ্লুকোনাজলের প্রতিরোধ দ্রুত বাড়ছে, যা ভবিষ্যতে চিকিৎসাকে আরও চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে পারে।

প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, এ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। জনস্বাস্থ্য সম্পর্কিত এই সমস্যা মোকাবিলায় সবাইকে দেরি না করে এখনই প্রয়োজনীয় উদ্যোগ ও তা বাস্তবায়ন করতে হবে।

অনুষ্ঠানের সভাপতি অধ্যাপক ডা. আবু নাসের ইবনে সাত্তার বলেন, নিজে নিজে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া, ডোজ অসম্পূর্ণ রাখা, সামান্য অসুখেও অপ্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ এবং প্রাণিসম্পদে নিয়ন্ত্রণহীন ব্যবহার। এসব কারণে দ্রুত বাড়ছে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ।

তিনি প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক না কেনা, নিয়মিত হাত ধোয়া, টিকাদান, নিরাপদ খাদ্য প্রস্তুত এবং হাসপাতালে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সবাইকে সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানে মতামত প্রদান করেন ডিন অধ্যাপক ডা. মো. ইব্রাহীম সিদ্দিক, ডিন অধ্যাপক ডা. মো. আতিয়ার রহমান, ডিন ডা. সাখাওয়াত হোসেন সায়ন্ত, নবজাতক বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল মান্নান, শিশু হেমাটোলজি অনকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. আনোয়ারুল করিম, ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আয়েশা খাতুন, গাইনোকোলজিক্যাল অনকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. জান্নতুল ফেরদৌস, ল্যাবরেটরি মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. সাইফুল ইসলাম, বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. নায়লা আতিক খান, ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. ইলোরা শারমিন, পরিচালক হাসপাতাল ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইরতেকা রহমান, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শাহেদা আনোয়ার, সহযোগী অধ্যাপক ডা. চন্দন কুমার রায়, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. ফারজানা ইসলাম প্রমুখ।

বিকেপি/এমএইচএস 

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর