জবিতে চায়ের দোকানে ছাত্রদল নেতার তালা, নেপথ্যে কী?

বাংলাদেশের প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২ মে ২০২৫, ১৭:২৬
-6821dad68946e.jpg)
ছবি : বাংলাদেশের খবর
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) প্রধান ফটকের সামনে অবস্থিত একটি চায়ের দোকানে তালা ঝুলানোর ঘটনা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, ছাত্রদল নেতা আজিজুল হাকিম আকাশ চাঁদা না পাওয়ায় দোকানে তালা লাগিয়েছেন। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মূল ঘটনা ছিল ভিন্ন; এর পেছনে রয়েছে দোকানের কর্মচারী ইসমাইল হোসেন মিন্টুর ব্যক্তিগত স্বার্থ।
বিষয়টি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হলে মূল ঘটনা জানতে অনুসন্ধানে নামে বাংলাদেশের খবর।
আকাশ জানিয়েছেন, আর্থিকভাবে অসচ্ছল একজন শিক্ষার্থীকে সহায়তা করার জন্য জবি ক্যাম্পাসের টিএসসিতে দোকানটি পরিচালনা করার ব্যবস্থা করা হয়েছিল জেলা কল্যাণ পরিষদের অর্থায়নে। এক পর্যায়ে এই দোকান পরিচালনার জন্য মিন্টুকে কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছিল। কিন্তু মিন্টু দোকান পরিচালনায় অনিয়ম শুরু করলে আকাশ এবং জেলা কল্যাণ পরিষদ সিদ্ধান্ত নেয় যে, দোকানটির কার্যক্রম পরিবর্তন করা হবে। সে কারণে তখন মিন্টুকে দোকান ছাড়তে বলা হয়।
আকাশ আরও বলেন, উনি দোকান ঠিকভাবে চালাতে না পারলে আমরা অন্যজনকে দোকান দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। আমি চাঁদা চেয়েছি বা টাকা নিয়েছি এমন অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।
মিন্টু অবশ্য দাবি করেছেন, আকাশ তার কাছে চাঁদা দাবি করেছিলেন এবং দোকানে তালা লাগিয়ে দিয়েছেন। তিনি দাবি করেছেন, আকাশ তার কাছে থেকে ৩০ হাজার টাকা চেয়ে ২৫ হাজার টাকা নিয়েছেন এবং পরে দৈনিক ২০০ টাকা চাঁদা দাবি করেন, যদিও আগে কথা হয়েছিল মাসিক ২ হাজার টাকা দেওয়ার। এই টাকা দিতে না চাইলে দোকানের জায়গা নিজের বলে দাবি করে দোকানে মালামালসহ তালা লাগিয়ে দেন আকাশ, বিভিন্ন গণমাধ্যমে এমন অভিযোগ করেন মিন্টু।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, চায়ের দোকানটিতে দুটি তালা ঝুলছে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার মিন্টু দাবি করেন, দৈনিক হারে চাঁদা না পাওয়ায় দোকানের মালামালসহ লোহার শিকল দিয়ে বেঁধে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন আকাশ। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ৫ আগস্টের পর দোকান ফাঁকা হলে আকাশ দোকান দখল করেন।
তবে, আকাশ এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, তিনি কখনো চাঁদা চাননি বা নেননি।
বাংলাদেশের খবরকে তিনি বলেন, ‘আমি আমার জেলা কল্যাণ পরিষদের প্রেসিডেন্ট। আমাদের পরিষদ থেকে টাকা দিয়েই এক ছোটভাইকে (শিক্ষার্থী) টিএসসির এককোণে একটি দোকান করে দেই যেন দোকান চালিয়ে মোটামুটি চলতে পারে। সে ফেব্রুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত দোকানদারিও করেছে। কিন্তু চায়ের দোকান সে চালাতে পারছিল না। তখন বিক্রি বাড়ানোর উদ্দেশ্যে একজন কর্মচারী নেয়। কর্মচারীও অনিয়ম শুরু করলে সে আমাদের জানায়। যে উদ্দেশ্যে দোকান দেয়া হয়েছে নেটা যেহেতু হচ্ছে না, তখন আমরা তাকে অন্য কিছু বিক্রি করতে বলি। জুস কর্নার হতে পারে, পোলাও-বিরিয়ানি হতে পারে। টাকা পরিষদ থেকে দেওয়া হবে। তখন সে দোকানের কর্মচারীকে জানায় আমরা আগামী ঈদুল আজহার আগে-পরে এখানে অন্যকিছু করবো। আপনাকে দোকান ছেড়ে দিতে হবে। কিন্তু কর্মচারী তার সাথে এমন ভাব করে যেন উনিই দোকানের মালিক। এর থেকেই মূলত আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ রটানো হয়েছে।’
একই সময়ে, মিন্টু একটি ভিডিও বার্তায় দাবি করেন যে, তিনি দোকানটি নিজের বলে দাবি করেননি এবং কখনো তার কাছে চাঁদা চাওয়ার ঘটনা ঘটেনি। তিনি জানান, দোকানটি তিনি কর্মচারী হিসেবে পরিচালনা করেছেন এবং আকাশের সাথে কোনো আর্থিক লেনদেনও ছিল না।
তিনি বলেন, দোকান তার সে যদি আমাকে না রাখে তাহলে আমি জোর করে থাকতে পারবো না। তিনি আরও বলেন, আকাশের নামে গণমাধ্যমে যেসব নিউজ হয়েছে সবই মিথ্যা।
উল্লেখ্য, আকাশ বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সদস্য এবং ইতিহাস বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
এনএমএম/এমএইচএস