Logo

ক্যাম্পাস

নজরুল : জন্মদিনে ফিরে দেখা সাহস ও সাম্যের কবিকে

Icon

ডিআইইউ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৪ মে ২০২৫, ০০:১৫

নজরুল : জন্মদিনে ফিরে দেখা সাহস ও সাম্যের কবিকে

২৪ মে ১৮৯৯ সালে বর্ধমানের চুরুলিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন কাজী নজরুল ইসলাম, যিনি দারিদ্র্য ও সংগ্রামের মধ্য থেকে উঠে বাংলা সাহিত্যের বিদ্রোহী কবি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন। মসজিদের মুয়াজ্জিন থেকে সেনাবাহিনীর অভিজ্ঞতা এবং সাহিত্যচর্চার মাধ্যমে তিনি বিপ্লবী ও মানবতাবাদী চেতনার অগ্নিশিখায় পরিণত হন। তাঁর কবিতা ও গান আজও অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের অনুপ্রেরণা যোগায় এবং নারী স্বাধীনতা, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সাম্যের প্রতীক হয়ে আছে। নজরুলের চেতনা নতুন প্রজন্মের জন্য অবিরাম প্রেরণার উৎস।

ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা  কাজী নজরুল ইসলামের জন্মদিন উপলক্ষে তাদের ভালবাসা তুলে ধরেছেন বাংলাদেশের খবরে

দুখু মিয়া থেকে ‘বিদ্রোহী কবি’—নজরুলের জীবনের শুরু

আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জীবন শুরু হয়েছিল দুঃখ-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। কিন্তু প্রশ্ন জাগে—এক দরিদ্র মুয়াজ্জিন কীভাবে হয়ে উঠলেন বাংলা সাহিত্যের 'বিদ্রোহী' কবি? কিশোর বয়সে মসজিদে আজান দেওয়া ছেলেটি কীভাবে জাতিকে জাগ্রত করা কবিতার স্রষ্টা হয়ে উঠলেন? তাঁর জীবনের সূচনালগ্নই যেন এক অমোঘ কবিতা।

১৮৯৯ সালের ২৪ মে (১১ জ্যৈষ্ঠ, ১৩০৬ বঙ্গাব্দ) পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন নজরুল। ডাকনাম ছিল ‘দুখু মিয়া’। পিতা ফকির আহমদ ছিলেন মসজিদের ইমাম ও মাজারের খাদেম। মাত্র ৯ বছর বয়সে পিতৃহারা হন তিনি। সংসারের অভাবে দশ বছর বয়সে মক্তবে শিক্ষকতা, মুয়াজ্জিনের কাজ এবং মাজারের খাদেমের দায়িত্ব নিতে হয়।

এই ছেলেটিই লেটো দলে যোগ দিয়ে সাহিত্যচর্চার সূচনা করেন। শেখ চকোর ও বাসুদেবের মতো কবিদের সাহচর্যে তিনি গানে-কবিতায় দক্ষ হয়ে ওঠেন। চাচা বজলে করিমের প্রভাবে আরবি, ফারসি ভাষায় আগ্রহ জন্মে। হাফিজ নুরুন্নবীর কাছে শিখেছিলেন ফারসি, নিবারণচন্দ্র ঘটকের সাহচর্যে পেয়েছিলেন রাজনৈতিক চেতনা।

‘বল বীর – চির উন্নত মম শির’ – এই উচ্চারণের সাহস কোথা থেকে এলো? প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ে সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়া নজরুল যুদ্ধের ভয়াবহতা অনুভব করেন। সেই অভিজ্ঞতাই তাঁর কলমে সৃষ্টি করে ‘বিদ্রোহী’।

দারিদ্র্য, সংগ্রাম আর আত্মমর্যাদার এক অনন্য প্রতীক নজরুল। এক হাতে কোরআন, অন্য হাতে গীতা—তাঁর মতো সর্বজনীন চেতনার কবি আজও বিরল।

তানজিল কাজী 
শিক্ষার্থী- ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি

কাজী নজরুল ইসলাম : শুধু পাঠ্যবইয়ের কবি নন

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন বাংলা সাহিত্যের এক ব্যতিক্রমী প্রতিভা। ১৮৯৯ সালের ২৪ মে চুরুলিয়ায় জন্ম নেওয়া এই কবি শৈশবে দারিদ্র্যকে সঙ্গী করে বেড়ে উঠেছিলেন। তিনি ছিলেন একাধারে কবি, সংগীতজ্ঞ, নাট্যকার, সাংবাদিক, সমাজ সংস্কারক ও মানবাধিকারের সৈনিক।

তার লেখায় ধর্মনিরপেক্ষতা, সাম্য ও মানবতার শক্ত বার্তা স্পষ্ট। বিদ্রোহের ভাষা যেমন ছিল তার কবিতায়, তেমনি ছিল প্রেম ও করুণার গভীরতা—‘ঘুমিয়ে গেছে শান্ত হয়ে আমার গানের বুলবুলি...’

তিনি নারী স্বাধীনতার পক্ষে উচ্চকণ্ঠে লিখেছেন—‘বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি চিরকল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।’

‘আনন্দময়ীর আগমনে’ কবিতার জন্য কারাবরণও করেছেন তিনি। নজরুল ছিলেন এমন এক কণ্ঠস্বর, যিনি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষের মুক্তির কথা বলেছেন। তিনি পাঠ্যবইয়ের গণ্ডি ছাড়িয়ে বাংলা মনের এক অবিচ্ছেদ্য অস্তিত্ব।

তানজিলা সুলতানা
সমাজবিজ্ঞান বিভাগ

 সাংস্কৃতিক জাগরণের শিকড়

সাংস্কৃতিক চর্চা থেকে আমরা অনুধাবন করি—বিদ্রোহ ও মানবতাবাদের কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর সাহিত্য ও সংগীতের মাধ্যমে বাঙালির সাংস্কৃতিক চেতনাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছেন। আজও তাঁর বিপ্লবী চেতনা, সাম্যবাদী ভাবনা ও মানবিক মূল্যবোধ দেশের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হচ্ছে। নাটক, গান, আবৃত্তি, সাহিত্যচর্চা ও জাতীয় অনুষ্ঠানগুলোতে নজরুলের রচনাগুলি নিয়মিত পরিবেশিত হয়। বিশেষ করে নজরুলসংগীত আজও গণজাগরণ, প্রতিবাদ এবং রাষ্ট্রীয় আয়োজনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাঁর সাহিত্য অবলম্বনে বিভিন্ন নাট্যদল ও সাংস্কৃতিক সংগঠন নাটক নির্মাণ করছে। তবে নতুন প্রজন্মের মধ্যে নজরুলচর্চা আরও বিস্তৃত, আধুনিক ও সৃজনশীলভাবে উপস্থাপন করা জরুরি। নজরুলের চেতনা কেবল অতীতের ঐতিহ্য নয়—আজও তা প্রাসঙ্গিক, প্রেরণাদায়ী এবং ভবিষ্যতের দিশারি।

মোহাম্মদ সিয়াম
সিভিল ইঞ্জিনিয়ার ডিপার্টমেন্ট

কাব্যের বিদ্রোহ, সাহিত্যের আগুন

কাজী নজরুল ইসলাম শুধু বিদ্রোহী কবি নন, তিনি ছিলেন ব্রিটিশবিরোধী চেতনায় এক অগ্নিশিখা। তাঁর কলম ছিল প্রতিবাদের মশাল, সুর ছিল শৃঙ্খল ভাঙার সংগীত। শৈশবের দারিদ্র্য, সেনাবাহিনীর অভিজ্ঞতা ও অসাধারণ পাঠচর্চা তাঁকে গড়ে তোলে অনন্য এক কণ্ঠে।

১৯২২ সালে 'বিদ্রোহী' কবিতা প্রকাশের পরই জাতির হৃদয়ে আগুন জ্বলে ওঠে। 'চল্ চল্ চল্' ও 'কারার ঐ লৌহ কপাট'-এর মতো গান তরুণদের উদ্দীপ্ত করে। তাঁর রচনা শুধু সাহিত্যের সৃষ্টি নয়, ছিল স্বাধীনতার অস্ত্র।

ব্রিটিশ সরকার তাঁর লেখা নিষিদ্ধ করেও থামাতে পারেনি সেই বজ্রকণ্ঠ।

নজরুল বলেছিলেন, ‘আমি চিরবিদ্রোহী বীর’—এই আহ্বানে জেগে উঠেছিল একটি জাতি।

১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট তাঁর মৃত্যু হলেও, তাঁর চেতনা আজও জীবন্ত। নজরুল তাই শুধু কবি নন—তিনি বাঙালির আত্মার এক জাগ্রত মুক্তিযোদ্ধা।

সুমাইয়া ইসলাম লুনা
ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগ

নজরুলের প্রতিবাদী কণ্ঠ আজও প্রাসঙ্গিক

‘বল বীর—বল উন্নত মম শির’ এই প্রতিবাদী উচ্চারণে যেন ভেসে ওঠে কাজী নজরুল ইসলামের মুখ। এক নজরুলের চেতনা থেকে জন্ম নিয়েছে হাজারো কণ্ঠস্বর, যারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে আজও মাথা উঁচু করে দাঁড়ায়।

নজরুল তাঁর কবিতা ও গানে নিপীড়িত মানুষের পক্ষে লড়েছেন, শোষণ ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে উচ্চারণ করেছেন দ্রোহের ভাষা। আজকের সমাজেও সেই ভাষা অনুরণিত হচ্ছে নানা রূপে—বিক্ষোভে, প্রতিবাদে, ঐক্যে।

যখনই বিভাজনের রাজনীতি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে, নজরুলের ধর্মনিরপেক্ষ, মানবিক কণ্ঠ আরও জরুরি হয়ে পড়ে।

হয়ত প্রতিবাদের রূপ বদলেছে, তবে মূল চেতনা এক—‘অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো।’

তাই আমাদের উচিত নজরুলের প্রতিবাদী ভাষা ও মননকে আত্মস্থ করা, নতুন প্রজন্মকে সেই সাহস ও আদর্শে অনুপ্রাণিত করা।

মাহফুজা সুলতানা মিম
ইংরেজি বিভাগ

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর