নারায়ণগঞ্জে প্রাকৃতিক উপায়ে গরু প্রস্তুতে ব্যস্ত খামারিরা

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৩ মে ২০২৫, ২০:১৫

ছবি : বাংলাদেশের খবর
ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে নারায়ণগঞ্জের খামারিরা গরু হৃষ্টপুষ্ট করা ও পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে, দেশীয় খাবার খাইয়ে কোরবানির উপযোগী গরু প্রস্তুত করছেন তারা। দেশি জাতের গরুর পাশাপাশি সিন্ধি, শাহিওয়াল, ব্রাহ্মা, বুট্টিসহ বিভিন্ন জাতের বিদেশি গরু, ছাগল ও মহিষও বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে।
জেলার পাঁচটি উপজেলার ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় সাড়ে চার হাজার খামারে গবাদিপশু বিক্রির জন্য প্রস্তুত রয়েছে। ইতিমধ্যে অনেক খামারে পশু বেচাকেনা শুরু হয়ে গেছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ জেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে ৯৯ হাজার ২৫২টি। বর্তমানে কোরবানির জন্য প্রস্তুত রয়েছে ৮৬ হাজার ৪২৬টি পশু। এর মধ্যে রয়েছে- ষাঁড় ৪৮ হাজার ২৭৩টি, বলদ ৬ হাজার ৪৬৫টি, মহিষ ৯১০টি, ছাগল ১০ হাজার ৪৪০টি, ভেড়া ৩ হাজার ৩৮৪টি ও অন্যান্য পশু ১৬১টি।
চাহিদার তুলনায় এখনো ১২ হাজার ৮২৬টি পশুর ঘাটতি রয়েছে। তবে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে এ ঘাটতি কমে আসবে বলে মনে করছে প্রাণিসম্পদ বিভাগ।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরামর্শে ১০টি গরু মোটা-তাজা করেছেন সদর উপজেলার কুতুবপুর গ্রামের খামারি হানিফ মিয়া। তিনি বলেন, রাসায়নিক ওষুধ ব্যবহার না করে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক খাবার ব্যবহার করে গরু মোটা-তাজা করেছি। ভারত বা অন্য দেশ থেকে গরু না এলে কোরবানির হাটে ভালো দাম পাবো আশা করি। প্রতিদিন মানুষ গরু দেখতে আসছে।
সিদ্ধিরগঞ্জের খামারি আব্দুস সামাদ বলেন, আমার খামারে সংকর জাতের গরুগুলো দেখতেও যেমন সুন্দর, তেমনি দামও বেশি। আড়াই লাখ টাকা থেকে ১২ লাখ টাকা মূল্যের গরু রয়েছে আমার ফার্মে। এসব গরু দেখতে প্রতিদিনই ক্রেতাসহ সাধারণ মানুষের ভিড় লেগেই থাকে।
প্রাণিসম্পদ বিভাগ জানায়, খামারে মোটাতাজা গরুর কদর থাকলেও ছোট গরুর চাহিদাই সবচেয়ে বেশি। লক্ষ্য পূরণ করা গেলে নারায়ণগঞ্জে এ বছর সব মিলিয়ে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার পশু কেনাবেচা হবে বলে আশা করছে জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মান্নান মিয়া বলেন, সারা বছর গরু ও অন্যান্য পশু কীভাবে পালন করতে হবে, সে বিষয়ে খামারিদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। গরু মোটাতাজাকরণ বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে খামারিরা এখন প্রাকৃতিক নিয়মেই পশু মোটাতাজা করছেন। খামারিরা খড়, গম ও ডালের ভূষি, ঘাস, খৈল, কুড়া খাইয়ে গরু পালন করেছেন।
তিনি বলেন, পাম ট্যাবলেট, স্টেরয়েড ও ডেক্সামেথাসন পশু ও মানুষের জন্য কতটা ক্ষতিকর—সেটি খামারিদের জানানো হয়েছে। যেন তারা এসব ব্যবহার না করেন। বিষাক্ত এসব রাসায়নিকের উচ্চমাত্রার প্রয়োগে অল্প সময়েই গরু ফুলে-ফেঁপে গেলেও এসব গরুর মাংস খেলে লিভার, কিডনি, হৃদযন্ত্র ও মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কাও থাকে। কেউ এসব ব্যবহার করলে আইন অনুযায়ী তাকে দণ্ডিত করা হবে।
প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আরও বলেন, জেলায় চাহিদার তুলনায় কিছু পশুর ঘাটতি থাকলেও আগামী কয়েকদিনে তা কমে আসবে বলে আমরা ধারণা করছি। ঢাকার পাশের জেলা হওয়ায় অধিক লাভের আশায় সিরাজগঞ্জ, পাবনা ও উত্তরাঞ্চল থেকে প্রতি বছরের মতো এবারও গরু আসবে। ফলে এ জেলায় পশুর ঘাটতি থাকবে না।
এছাড়া বাজার স্থিতিশীল থাকলে খামারিরা লাভবান হবেন। চামড়ার দাম ঠিকঠাক পাওয়া গেলে তারা আরও বেশি লাভবান হবেন, যোগ করেন তিনি।
এমবি