ফিডিং কর্মসূচির বাইরে আলফাডাঙ্গার প্রাথমিকের শিশুরা

আলফাডাঙ্গা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৩ জুলাই ২০২৫, ১৮:২৩
---2025-07-03T181819-6866765ad14f3.jpg)
সম্প্রতি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পুষ্টি নিশ্চিত করতে দেশের ১৫০টি উপজেলায় ফিডিং কর্মসূচি চালু করেছে সরকার। তবে ফরিদপুর জেলার মধুমতি নদী বিধ্বস্ত ও দুর্গম ঘোষিত আলফাডাঙ্গা উপজেলাকে এ প্রকল্পের বাইরে রাখায় স্থানীয় অভিভাবকদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
উপজেলাটি নদীভাঙন, দারিদ্র্য ও অবকাঠামোগত দুর্বলতার কারণে বরাবরই উন্নয়ন কার্যক্রমে পিছিয়ে রয়েছে। এই উপজেলায় শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ চরাঞ্চল ও প্রত্যন্ত এলাকা থেকে স্কুলে আসে। যাদের খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি ঝুঁকির মাত্রা তুলনামূলকভাবে বেশি।
জানা গেছে, ২০১০ সাল থেকে দারিদ্র্যপীড়িত এলাকায় খুদে শিক্ষার্থীদের পুষ্টি নিশ্চিতে বিস্কুট বিতরণ কার্যক্রম চালু করে সরকার। কিন্তু সেখানেও এই উপজেলার প্রাথমিকের শিশুরা বঞ্চিত ছিল। নতুন করে দেশে ১৫০টি উপজেলায় ফিডিং কর্মসূচি চালু করেছে সরকার। এরমধ্যে ফরিদপুর জেলার ছয়টি উপজেলার নাম থাকলেও প্রকল্প থেকে আলফাডাঙ্গা উপজেলার নাম বাদ যাওয়ায় স্থানীয়রা বেশ হতাশ হয়েছেন।
স্থানীয় একাধিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও অভিভাবকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তারা আশা করেছিলেন-দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা ও বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনায় আলফাডাঙ্গা উপজেলায় ফিডিং কর্মসূচির আওতায় থাকবে। কিন্তু তালিকায় নাম না থাকায় তারা উদ্বিগ্ন।
টগরবন্দ ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য মাজারুল ইসলাম নয়ন বলেন, 'আমাদের এলাকাটি মধুমতি নদী বেষ্টিত একটি দুর্গম এলাকা। এখানে শিশু শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় উৎসাহ প্রদানের লক্ষ্যে ফিডিং কর্মসূচি চালু করা উচিত ছিল। তাহলে শিশুরা বিদ্যালয়গামী হতো।'
গোপালপুর ইউপি চেয়ারম্যান খান সাইফুল ইসলাম বলেন, 'আমাদের ইউনিয়নে মধুমতি নদীর প্রবাহে মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন একটি চর আছে। দুর্গম এই চরে নৌযান ছাড়া যাতায়াতের ভিন্ন কোনও পথ নেই। এখানে প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে ফিডিং কর্মসূচি খুবই প্রয়োজন ছিল।'
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শমসের উদ্দীন টিটো বলেন, 'অত্যন্ত নিম্ন আয়ের কৃষিজীবী মানুষের সন্তানরা এই অঞ্চলের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। যাদের বেশিরভাগ অপুষ্টিতে ভুগে। তাই আলফাডাঙ্গা উপজেলায় ফিডিং কর্মসূচির আওতায় আনা খুবই একান্ত প্রয়োজন।'
জানতে চাইলে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম জানান, 'ফিডিং কর্মসূচির তালিকা থেকে কি কারণে এই উপজেলার নাম বাদ পড়েছে তা আমার জানা নেই। আমি জেলা শিক্ষা অফিসে কথা বলেছি। তারা বলেছেন যে, ফিডিং কর্মসূচির সিদ্ধান্ত হয়েছে ঢাকা থেকে। এখানে ফিডিং কর্মসূচি চালু থাকলে অবশ্যই ভালো হত।'
আলফাডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাসেল ইকবাল বলেন, 'এই উপজেলার দুর্গম চরের শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে ইতোমধ্যে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করা হয়েছে। নদীভাঙন ও দুর্গম বিবেচনা করে এই উপজেলাটি ফিডিং কর্মসূচির আওতায় আনা প্রয়োজন ছিল। এতে করে শিক্ষার্থীদের স্কুলমুখী করা, শ্রেণিকক্ষে উপস্থিতি বাড়ানো, ঝরে পড়া রোধ করা ও অপুষ্টিজনিত সমস্যা হ্রাস পেত।'
এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক (যুগ্ম সচিব) মোহাম্মদ হারুন-অর-রশিদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ‘১৫০ উপজেলায় ডিপিই অ্যাপ্রুভ করা আছে। তবে ৩৫৯ উপজেলায় অন্য প্রকল্পের মাধ্যমে ফিডিং কর্মসূচি চালু হবে এবং তখন কোন উপজেলা বাদ থাকবে না।’
এমআই