Logo

সারাদেশ

গৌরনদীতে ঐতিহ্যবাহী মন্দির ভেঙে জমি দখলের অভিযোগ

Icon

গৌরনদী (বরিশাল)প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৬ নভেম্বর ২০২৫, ১২:৫৯

গৌরনদীতে ঐতিহ্যবাহী মন্দির ভেঙে জমি দখলের অভিযোগ

বরিশালের গৌরনদী পৌরসভার সুন্দরদী মহল্লায় প্রায় দেড়শ বছরের ঐতিহ্যবাহী একটি দুর্গা মন্দির ভেঙে গুড়িয়ে জোরপূর্বক জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে। প্রকাশ্যে ধর্মীয় সম্পদ ভাঙচুরের এমন ঘটনা ঘটলেও প্রতিপক্ষের প্রভাবশালী অবস্থানের কারণে দিনভর আতঙ্কে ঘরের দরজা বন্ধ করে ছিলেন ভুক্তভোগী পরিবারটি।

গত ১৯ নভেম্বর (বুধবার) সকালে এ ঘটনা ঘটলেও ভয়-আতঙ্কে তৎক্ষণাৎ অভিযোগ করতে না পেরে প্রায় এক সপ্তাহ পর ২৪ নভেম্বর (সোমবার) সকালে জমির মালিক নারায়ণ মিত্র গৌরনদী মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের পর পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। তবে এ ঘটনাকে শুধু জমি বিরোধ নয় বরং একটি ধর্মীয় ঐতিহ্যের নির্মম অবমাননা হিসেবে দেখছেন স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়।

বুধবার (২৬ নভেম্বর) সকালে সুন্দরদী গ্রামের নারায়ণ মিত্র সাংবাদিকদের জানান, বড়ভাই বজ্রবিলাস মিত্রের কাছ থেকে ১৯৮৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি সুন্দরদী মৌজার ৫৯৬ নং দলিলমূলে ১০৪৫/২ নং খতিয়ানভুক্ত ১৯৩৪ দাগের অধীনে ১০ শতাংশ জমি ক্রয় করেন তিনি। জমির উপর অবস্থিত দেড়শ বছরের ঐতিহ্যবাহী ‘সুন্দরদী মিত্র বাড়ি দূর্গামন্দির’ ওই সম্পত্তির অন্তর্ভুক্ত।

নারায়ণ মিত্র অভিযোগ করে বলেন, ‘গত ১৯ নভেম্বর (বুধবার) সকালে বজ্রবিলাসের ছেলে রিপন মিত্র ও সুমন মিত্র লোকজন নিয়ে পরিকল্পিতভাবে দলবল নিয়ে পুরনো এই দূর্গা মন্দির ভেঙে ফেলে এবং জায়গাটি জোরপূর্বক দখল করে নেয়। প্রতিপক্ষের প্রভাবশালী অবস্থানের কারণে আমরা ভয়ে ঘরের দরজা বন্ধ করে বসে থাকি। বাধা দেওয়ার মতো পরিস্থিতি ছিল না।’

নারায়ণ মিত্রের ছেলে নন্দ মিত্র জানান, তাদের বংশপরম্পরায় প্রায় দেড়শ বছর ধরে এই মন্দিরে দুর্গাপূজা থেকে শুরু করে নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন হয়ে এসেছে। সরকারি প্রণোদনা আওতাভুক্ত মন্দিরটি একটি নিয়মিত কমিটির মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছিল।

নন্দ মিত্র অভিযোগ করে বলেন, ‘বাবার ক্রয়কৃত সম্পত্তি দখলের উদ্দেশ্যে রিপন ও সুমন তাদের লোকজন নিয়ে মন্দিরটি ভেঙে গুড়িয়ে দেয়। এমনকি দখলের সুবিধার্থে রিপন মিত্র ও সুমন মিত্র রাতের আধারে মন্দিরের প্রতিমা ও পূজার সামগ্রী সরিয়ে ফেলেছে এবং অনেক মালামাল বিক্রিও করে দিয়েছে। এমন ঘটনা শুধু জমি দখল নয় আমাদের ধর্মীয় অনুভূতির ওপর নির্মম আঘাত।’

অপরদিকে অভিযোগ অস্বীকার করে রিপন মিত্র ও সুমন মিত্র বলেন, ‘জমিটি আমাদের ওয়ারিশসূত্রে পাওয়া। মায়ের অসুস্থতা এবং ঋণের দায়ে ঘরবাড়ি বিক্রি করতে হয়েছে। এখন থাকার জায়গা নেই। তাই মন্দিরটি সরিয়ে সেখানে বসতঘর নির্মাণের প্রস্তুতি নিচ্ছি।’

রাতের বেলায় প্রতিমা সরানোর অভিযোগের বিষয়ে তারা বলেন, ‘রাতে নয়, সকালে পাশের লোকনাথ মন্দিরে প্রতিমা ও পূজার সামগ্রীগুলো স্থানান্তর করেছি।’

সুন্দরদী মিত্র বাড়ি দূর্গা মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক ননী দাস দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি ১৫-২০ বছর ধরে মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। মন্দির ভাঙার ঘটনার বিষয়ে অবগত ছিলাম না। তবে ঘটনা শুনে খুব কষ্ট পেয়েছি। মন্দির শুধু ইট-পাথরের দেয়াল নয় এটি আমাদের বিশ্বাস, অনুভূতি ও পরিচয়ের প্রতীক।’

এদিকে মন্দির ভাঙায় ঘটনায় স্থানীয় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মাঝে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। স্থানীয়রা বলেন, ‘মন্দির আমাদের প্রার্থনা, বিশ্বাস ও ধর্মীয় জীবনের কেন্দ্র। এটি ব্যক্তিগত জমি-বিরোধ নয় বরং একটি ধর্মীয় ঐতিহ্যের ওপর প্রকাশ্য আক্রমণ। এ ধরনের ঘটনা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’

স্থানীয় সনাতন সমাজ জবরদখলকৃত জমি উদ্ধার করে ঐতিহাসিক দুর্গা মন্দির পুনঃস্থাপন ও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে।

গৌরনদী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘অভিযোগ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ইব্রাহীম বলেন, ‘বিষয়টি যেহেতু জমিজমা সংক্রান্ত এবং দুই পক্ষই জমি নিজের বলে দাবি করছেন। তাই উভয় পক্ষকে কাগজপত্র নিয়ে দেওয়ানি আদালতের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে।’

এস এম মিজান/এনএ

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর