ফেনীতে ১৮ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চুরি, আতঙ্কে শিক্ষক-অভিভাকরা
ফেনী প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০:৩১
ছবি : বাংলাদেশের খবর
ফেনী জেলার বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধারাবাহিক চুরির ঘটনায় উদ্বেগ ও আতঙ্কে রয়েছে স্থানীয়রা। সোমবার (০২ ডিসেম্বর) দিবাগত রাতে সদর উপজেলার কাজিরবাগ ইউনিয়নের গিল্লাবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চুরি করতে গিয়ে আরিফ উদ্দিন বাহার (৩৫) নামে এক ব্যক্তিকে আটক করেছে পুলিশ। জেলা জুড়ে এখন পর্যন্ত অন্তত ১৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চুরির ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে।
চোরের দল বিভিন্ন বিদ্যালয়ের অফিস ও শ্রেণিকক্ষের দরজা-জানালা ভেঙে নথিপত্র, ল্যাপটপ, প্রজেক্টর, সিলিং ফ্যান, টেবিল ফ্যান, সৌরবিদ্যুৎ ব্যাটারি, বৈদ্যুতিক তার, ঘড়ি, ঘণ্টা, হারমোনিয়াম, সাউন্ড সিস্টেম, প্রিন্টার, ওয়াইফাই রাউটার, হ্যান্ড মাইক, পানির ট্যাপ, রাইস কুকার, ম্যাজিক চুলা, বিভিন্ন আসবাব এবং নগদ টাকা নিয়ে গেছে। নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে সংশ্লিষ্ট উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা প্রশাসনের কাছে লিখিতভাবে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেছেন।
লেমুয়া ইউনিয়নের ০১ নম্বর ওয়ার্ডে অবস্থিত মধ্য চাঁদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহানারা বেগম বলেন, প্রতিদিন ক্লাস শেষে দরজা-জানালা বন্ধ করে যান। পরের দিন এসে দেখি দরজা ভাঙা; চুরি হয়েছে। বিষয়টি থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন বলে জানান তিনি।
তিনি আরও জানান, বিদ্যালয়ের ভবনগুলো দীর্ঘদিনের পুরোনো হওয়ায় দরজা-জানালা দুর্বল। এর সুযোগে প্রায়ই চুরির ঘটনা ঘটে। পাশের বিদ্যালয়েও একাধিকবার চুরি হলেও এখনো স্থায়ী সমাধান হয়নি বলে জানান তিনি।
গত ১ নভেম্বর থেকে ২৭ নভেম্বরের মধ্যে সদর উপজেলার মালীপুর, মাছিমপুর, সুবলপুর, তেতৈয়া, পশ্চিম ফাজিলপুর, কেরোনিয়া শহীদ স্মৃতি এবং মধ্য চাঁদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষের তালা ভেঙে ল্যাপটপ, প্রজেক্টর, রাউটার ও নগদ টাকা চুরি হয়েছে।
দক্ষিণ লেমুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তালা কেটে চারটি সিলিং ফ্যান এবং পানির মোটর চুরি হয়েছে। কয়েকটি বিদ্যালয়ে নৈশপ্রহরী থাকা সত্ত্বেও চুরির ঘটনা ঘটেছে। সদর উপজেলার ১১৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে মাত্র ৫৪টিতে নৈশপ্রহরী রয়েছে।
এদিকে সোনাগাজী উপজেলার ছাড়াইতকান্দি, রাঘবপুর ও আড়কাইম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ পাঁচটি বিদ্যালয় থেকেও শিক্ষাসামগ্রী চুরি হয়েছে। ফুলগাজীর পূর্ব দরবারপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দোতলার চতুর্থ শ্রেণির কক্ষ থেকে সিলিং ফ্যান ও একটি পকেট গেট খুলে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। দাগনভূঞা উপজেলার রামনগর তাকিয়াবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ল্যাপটপ ও প্রজেক্টর চুরি হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা।
গোহাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও প্রাথমিক শিক্ষক কেন্দ্রীয় কমিটির মহাসচিব মহিউদ্দিন খন্দকার বলেন, ‘ধারাবাহিক চুরির ঘটনায় আমরা খুবই শঙ্কিত। যে কোনো সময় আমাদের বিদ্যালয়েও একই ঘটনা ঘটতে পারে।’
সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা খালেদা পারভীন বলেন, ‘উপজেলার ১১৩টি বিদ্যালয়ের মধ্যে বেশ কয়েকটিতে চুরি হয়েছে। এসব ঘটনায় থানায় অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। ২৮ নভেম্বর চুরি হওয়া বিদ্যালয়গুলোর তালিকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়েছে—নিরাপত্তা জোরদারের অনুরোধও জানানো হয়েছে।’
ফেনী মডেল থানার ওসি (তদন্ত) সজল কান্তি দাস বলেন, ‘অনেক বিদ্যালয়ে নৈশপ্রহরী না থাকায় চুরি বেড়েছে। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কাজিরবাগ চেকপোস্টে একজন চোরকে আমরা মঙ্গলবার রাতে আটক করেছি।’
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফিরোজ আহাম্মদ বলেন, ‘কোনো বিদ্যালয়ে চুরি হলে প্রধান শিক্ষক থানায় অভিযোগ করবেন। পাশাপাশি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানাতে হবে।’
এম. এমরান পাটোয়ারী/এআরএস

