শ্রীপুর মুক্ত দিবস আজ, ত্যাগ ও বীরত্বে উড়েছিল লাল-সবুজ পতাকা
শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:২৪
ছবি : বাংলাদেশের খবর
আজ ১২ ডিসেম্বর শ্রীপুর মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকারদের কবল থেকে মুক্ত হয় পুরো শ্রীপুর উপজেলা। বহু ত্যাগ, রক্তঝরা সংগ্রাম ও বীরত্বগাথার মধ্য দিয়ে এদিন প্রথমবারের মতো শ্রীপুরের আকাশে উড়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা।
মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকিস্তানি বাহিনীর প্রথম মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে ৭ ডিসেম্বর ভোরে উপজেলার ইজ্জতপুর এলাকায় ঢাকা–ময়মনসিংহ রেলপথের ওপর। এই যুদ্ধে শহীদ হন গোসিঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র কিশোর সাহাব উদ্দিন। মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে নিহত হন চার রাজাকার ও একজন পাক সেনা।
বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ কমান্ডার জানান, ১৯৭১ সালের ১৮ এপ্রিল থেকে হানাদার বাহিনী শ্রীপুরে বিভিন্ন স্থানে ক্যাম্প স্থাপন করে। স্থানীয় রাজাকারদের সহযোগিতায় তারা নিরীহ মানুষ ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের হত্যা এবং নির্যাতন চালাত। শ্রীপুরের গুরুত্বপূর্ণ আটটি স্থানে তাদের ক্যাম্প ছিল— শ্রীপুর থানা, গোসিঙ্গা কাচারি বাড়ি, কাওরাইদ রেলস্টেশন, সাতখামাইর রেলওয়ে স্টেশন, গোলাঘাট রেলওয়ে ব্রিজ, ইজ্জতপুর ব্রিজ এবং বলদি ঘাট উচ্চ বিদ্যালয় এলাকা।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আফতাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘৭ ডিসেম্বর ভোর ৪টার দিকে গুলি বিনিময় শুরু হয়। টানা ২৭ ঘণ্টা আক্রমণ চালানোর পর পাকিস্তানি বাহিনী দুর্বল হয়ে পড়ে। রেলসংযোগ বিচ্ছিন্ন করে শত্রুদের একপ্রকার ফাঁদে ফেলা হয়। ১১ ডিসেম্বর রাত থেকে তারা পালাতে শুরু করে এবং ১২ ডিসেম্বর ভোরে পুরো শ্রীপুর হানাদারমুক্ত হয়। এদিন শ্রীপুর হাসপাতালের সামনে প্রথমবারের মতো উড়ানো হয় স্বাধীন বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা।’
শ্রীপুরে এখনও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ধরে রেখেছে গণকবর ও শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ, যা স্থানীয়দের কাছে ত্যাগ ও বীরত্বের প্রতীক হিসেবে পরিচিত। বীর মুক্তিযোদ্ধা নূরুল ইসলাম মণ্ডল জানান, ইজ্জতপুর ব্রিজ সেনাক্যাম্পে জেড আই সুবেদের নেতৃত্বে হামলা চালানো হয়। গুলি বিনিময়ের একপর্যায় সাহাব উদ্দিন শহীদ হন এবং রেলসেতু ধ্বংস করা হয়।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ব্যারিস্টার সজীব আহমেদ বলেন, ‘শ্রীপুর সরকারি কলেজ মাঠের গণকবর সংরক্ষণ করা হয়েছে। শহীদদের নাম ও পরিচয় ফলকে উল্লেখ করা হয়েছে।’
শ্রীপুর মুক্ত দিবস কেবল ইতিহাসের স্মৃতি নয়, বরং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগ ও স্থানীয় মানুষের সাহসিকতার জীবন্ত প্রতীক।
এমএইচএস

