শহীদ টিটোর রক্তে শত্রুমুক্ত হয়েছিল সাভার
সাভার (ঢাকা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৯:৩৬
ছবি : বাংলাদেশের খবর
একাত্তরের ১৪ ডিসেম্বর, বিজয়ের মাত্র দুই দিন আগে। ঢাকার সন্নিকটে সাভারের আশুলিয়া জিরাবো এলাকায় তখন চূড়ান্ত লড়াই। সেই যুদ্ধে অসীম সাহসে লড়তে লড়তে শহীদ হন কিশোর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম দস্তগীর টিটো। তার রক্তেই সেদিন শত্রুমুক্ত হয় সাভার।
গোলাম দস্তগীর টিটোর জন্ম ১৯৫৬ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর মানিকগঞ্জের উত্তর শেওতা গ্রামে। তিনি তৎকালীন ন্যাপ (মোজাফফর) নেতা গোলাম মোস্তফার ছেলে ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে টিটো দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন। বয়সে কিশোর হলেও সাহসে ছিলেন অদম্য।
টিটোর মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেওয়ার পেছনে একটি মর্মান্তিক ব্যক্তিগত ঘটনা কাজ করে। পাকিস্তানি সেনাদের একটি দল তার ভাইকে রাইফেলের বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে এবং পুরো গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়। ভাইয়ের এই নির্মম মৃত্যু টিটো মেনে নিতে পারেননি। সেদিনই তিনি যুদ্ধে যাওয়ার দৃঢ় সংকল্প করেন।
প্রশিক্ষণ শেষে টিটোকে প্রথমে পাঠানো হয় ২ নম্বর সেক্টরে, মেজর খালেদ মোশাররফের অধীনে। পরে তিনি ঢাকায় এসে যোগ দেন নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চুর নেতৃত্বাধীন গেরিলা দলে, যা ‘মানিক গ্রুপ’ নামে পরিচিত ছিল।
১৯৭১ সালের ৮ ডিসেম্বর টিটো তার গেরিলা দলের সঙ্গে সাভার থানার ইয়ারপুর গ্রামে অবস্থান নেন। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সারাদেশে পাকিস্তানি বাহিনী কোণঠাসা হয়ে পড়ে এবং ঢাকার দিকে পিছু হটতে থাকে। ১৪ ডিসেম্বর সকালে টাঙ্গাইল থেকে বিতাড়িত পাকিস্তানি বাহিনীর ৪০-৫০ সদস্যের একটি দল আশুলিয়ার জিরাবো এলাকায় পৌঁছালে তাদের পথরোধ করে টিটোর গেরিলা দল।
সেদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চলা সম্মুখযুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাদের কয়েকজন নিহত হয়। বিজয় নিশ্চিত জেনে আবেগে আপ্লুত হয়ে টিটো বিজয় উল্লাসে লাফিয়ে ওঠামাত্রই পাকিস্তানি সেনাদের ছোড়া এলএমজির গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যায় তার বুক।
সেসময়ের সহযোদ্ধা বীর মুক্তিযোদ্ধা জাহের আলী বলেন, ‘টিটো আমার পাশেই যুদ্ধ করছিলেন। পাকসেনারা পাল্টা গুলি ছুড়ছিল। টিটো মাথা তুলে গুলি করতে যাওয়ামাত্র তার ডানপাশে গুলি লাগে। আহত অবস্থায় আমরা তাকে উদ্ধার করি।’
মুমূর্ষু টিটোকে কাছাকাছি একটি ডেইরি ফার্মে নেওয়া হয়। কিন্তু রক্তক্ষরণ বন্ধ করার মতো চিকিৎসা সেখানে ছিল না। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে সেখানেই শহীদ হন তিনি। পরে তাকে সাভার ডেইরি ফার্ম গেটের কাছে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশে সমাধিস্থ করা হয়।
বর্তমানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেইরি গেটের বিপরীতে ফুটওভার ব্রিজের পাশে লাল সিরামিক ইটে বাঁধানো সমাধিতে শায়িত আছেন শহীদ টিটো। সাভার সেনানিবাস ১৯৯৯ সালের ৩০ ডিসেম্বর ‘টিটোর স্বাধীনতা’ নামে এই স্মৃতিসৌধটি নির্মাণ করে।
১৪ ডিসেম্বর শহীদ গোলাম দস্তগীর টিটোর আত্মদানেই সেদিন শত্রুমুক্ত হয়েছিল সাভার।
সাইফুল ইসলাম শাওন/এআরএস

