Logo

অর্থনীতি

গোল্ডেন লাইফের প্রধান কার্যালয়ে তালা, সন্ধান মিলল গোপন অফিসের

আনোয়ার হোসাইন সোহেল

আনোয়ার হোসাইন সোহেল

প্রকাশ: ০৮ মে ২০২৫, ১১:৩৬

গোল্ডেন লাইফের প্রধান কার্যালয়ে তালা, সন্ধান মিলল গোপন অফিসের

প্রতিষ্ঠানটির ঢাকা মহাখালীর কার্যালয় বন্ধ রয়েছে /ছবি : বাংলাদেশের খবর

বেসরকারি জীবন বীমা প্রতিষ্ঠান গোল্ডেন লাইফ ইন্স্যুরেন্স-এর প্রধান কার্যালয় দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন প্রতিষ্ঠানটির হাজারো গ্রাহক। যাদের দাবি রয়েছে প্রায় ৩৫ কোটি টাকার মতো। প্রতিষ্ঠানটির ঢাকা মহাখালীর কার্যালয়ে তালা ঝুলছে।

অন্যদিকে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) ঘটনার প্রায় দেড় মাস পার হলেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ গ্রাহকদের।

সম্প্রতি বাংলাদেশের খবর-এর পক্ষ থেকে সরেজমিনে দেখা গেছে, মহাখালীর অ্যামবন কমপ্লেক্সের তৃতীয় ও পঞ্চম তলায় গোল্ডেন লাইফের অফিসে তালা ঝুলছে। প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রাহকরা এসে অফিসের সামনে অপেক্ষা করছেন, তবে ভেতরে কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না। পাশের ব্যবসায়ীরাও জানাতে পারছেন না, ঠিক কখন থেকে অফিস বন্ধ কিংবা কর্মকর্তারা কোথায় রয়েছেন।

গ্রাহকদের অভিযোগ, কোনো পূর্ব ঘোষণা বা এসএমএস ছাড়াই প্রতিষ্ঠানটি হঠাৎ কার্যালয় বন্ধ করে দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি ছয় মাসের ভাড়া বাকি রেখেই মূল দপ্তর ত্যাগ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজধানীর কারওয়ান বাজারে ওয়াসা ভবনের পাশের ৩৭ খান সন্স সেন্টারের ৮ম তলায় প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান একেএম আজিজুর রহমানের ব্যক্তিগত অফিসে কিছু কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। 

ভবনটির ব্যবস্থাপক রবিউল বাংলাদেশের খবরকে জানান, চেয়ারম্যান তাকে গ্রাহকদের ফাইল ফটোকপি রাখতে বলেছেন। তবে সরাসরি কথা বলার সুযোগ দেননি।

ওই ভবনের সামনে গিয়ে প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হয় সংবাদকর্মী ও গ্রাহকদের। নিরাপত্তাকর্মীরা প্রবেশে বাধা দেয়। চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে যেতে দেয়নি।

এসব বিষয়ে কথা হয় প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আমজাদ হোসেন খান চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি বাংলাদেশের খবরকে বলেন, গোল্ডেন লাইফের পরিচালনা পর্ষদের সাত সদস্যের মধ্যে চারজন বর্তমানে দেশের বাইরে থাকায় বোর্ড মিটিংয়ে কোরাম হচ্ছে না। ফলে নীতিগত অনেক সিদ্ধান্ত নেওয়া যাচ্ছে না। 

তিনি বলেন, বোর্ডে নতুন সদস্য অন্তর্ভুক্তির চেষ্টা চলছে। সদস্য বাড়লেই তহবিল সরবরাহ করে অফিস চালু করা হবে। গ্রাহকের দাবির পরিশোধ শুরু করা হবে।

বিমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএর সহকারী পরিচালক ও মুখপাত্র সোলায়মান বলেন, গত ২০ মার্চ গোল্ডেন লাইফের চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের ডেকে পাঠানো হয়েছিল। সেখানে ১৫ দিনের মধ্যে অফিস চালু করতে বলা হয়। কোম্পানি তখন দাবি পরিশোধে তিন মাস সময় চেয়েছিল, যার মেয়াদ ২০ জুন শেষ হবে।

তিনি বলেন, ‘প্রশাসক নিয়োগ করলেই সমাধান হবে না। আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে চায় আইডিআরএ। প্রয়োজনে কোম্পানির সম্পদ বিক্রি করে গ্রাহকের পাওনা মেটানোর চিন্তাভাবনা চলছে।’

তবে এর আগে গোল্ডেন লাইফকে বড় অঙ্কের জরিমানা করা হলেও প্রতিষ্ঠানটি তা পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়েছে।

বীমা সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বীমা আইন ২০১০ অনুযায়ী, আইডিআরএ গ্রাহকের স্বার্থ রক্ষায় প্রয়োজনে ৫০ ধারা অনুযায়ী প্রধান নির্বাহীসহ কর্মকর্তাদের বরখাস্ত করে  ৯৫ ধারা অনুযায়ী প্রশাসক নিয়োগ দিতে পারে। এমনকি ১৩৬ ধারা অনুযায়ী আত্মসাৎ বা ফান্ড তছরূপের অভিযোগে আদালতে মামলা করতে পারে।

নোয়াখালী থেকে আসা গ্রাহক আব্দুল মান্নান বলেন, আমার বীমার মেয়াদ শেষ হয়েছে ২৫ এপ্রিল। কিন্তু অফিসে এসে দেখি তালা মারা। আমি জানি না আমার টাকা ফেরত পাব কি না।

দেশজুড়ে ছড়িয়ে থাকা গোল্ডেন লাইফের গ্রাহকরা এখন ভয় ও অনিশ্চয়তায় রয়েছেন। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে আশ্বাস মিললেও নির্দিষ্ট সময়সীমা বা কার্যকর পদক্ষেপের অভাব তাদের আস্থার সংকটে ফেলেছে।

প্রসঙ্গত, গোল্ডেন লাইফ ইন্স্যুরেন্স ১৯৯৯ সালে যাত্রা শুরু করে। বর্তমানে তাদের গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার, যার মধ্যে ১৮ হাজারের বেশি গ্রাহক এখন টাকা ফেরতের অপেক্ষায় আছেন। কোম্পানির মোট সম্পদ ৫৫ কোটি ৮৫ লাখ টাকা এবং গ্রাহকের অনাদায়ী পাওনা ৩৪ কোটি ৯৫ লাখ টাকা।

এএইচএস/ওএফ

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর