রেকর্ড পরিমাণ আকু বিল পরিশোধ, রিজার্ভ কমে ২৯ দশমিক ৫৩ বিলিয়ন ডলার

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৫, ১৩:৩৯

প্রতীকী ছবি
বাংলাদেশ এশীয় নিষ্পত্তি ইউনিয়ন বা আকুর (আশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন) মাধ্যমে আজ মঙ্গলবার (৮ জুলাই) রেকর্ড ২ দশমিক ১৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পরিশোধ করেছে। মে-জুন মাসের আমদানি ব্যয়ের এই বিল পরিশোধ গত তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। সর্বশেষ ২০২২ সালের জুলাইয়ে এই বিলের পরিমাণ ছিল ১ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন ডলার।
এই পরিশোধের ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মোট রিজার্ভ (গ্রস রিজার্ভ) কমে দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৯ দশমিক ৫৩ বিলিয়ন ডলারে, যা পূর্বে ছিল ৩১ দশমিক ৭২ বিলিয়ন ডলার। তবে নিট রিজার্ভ (এনআইআর)-এর ওপর এর কোনো প্রভাব পড়বে না, কারণ বাংলাদেশ ব্যাংক আগেই বিল পরিশোধের সম্ভাব্য অর্থ বিবেচনায় নিয়ে নিট রিজার্ভ নির্ধারণ করে থাকে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মো. আরিফ হোসেন জানিয়েছেন, ‘নির্ধারিত সময়েই আকুর বিল পরিশোধ করা হয়েছে। এখন আমাদের মোট রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২৯ দশমিক ৫৩ বিলিয়ন ডলারে।’
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফের হিসাব অনুসারে, ‘ব্যালান্স অব পেমেন্টস ম্যানুয়াল-সিক্স’ (বিপিএম-৬) পদ্ধতিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ এখন ২৪ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।
উল্লেখ্য, আকু একটি তেহরানভিত্তিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান, যেখানে বাংলাদেশ, ভারত, ইরান, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, নেপালসহ নয়টি দেশ পারস্পরিক আমদানি-রপ্তানির লেনদেন প্রতি দুই মাস পর পর নিষ্পত্তি করে থাকে।
এর আগে গত ৬ মে বাংলাদেশ ১ দশমিক ৮৮ বিলিয়ন ডলারের আকু বিল পরিশোধ করেছিল, যার ফলে রিজার্ভ নেমে গিয়েছিল ২০ বিলিয়নের ঘরে। তবে পরে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ঋণের অর্থ আসায় রিজার্ভে খানিকটা ঘুরে দাঁড়ায়। বর্তমানে বিপিএম-৬ পদ্ধতিতে রিজার্ভ ২৬ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা এই বিল পরিশোধের পর দাঁড়াবে আনুমানিক ২৪ দশমিক ৬৪ বিলিয়ন ডলারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নিট রিজার্ভ কেবল তখনই প্রভাবিত হয়, যখন সরাসরি রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি হয় কিংবা সরকার কোনো প্রকল্পে ডলারে বিনিয়োগ করে।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০২৩ সালে প্রতি দুই মাস অন্তর গড় আকু বিল ছিল ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারের নিচে। কিন্তু ২০২৪ সালের শেষ প্রান্তিক থেকে আমদানি বাড়ায় বিলের পরিমাণও বাড়ছে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, বড় অঙ্কের আকু বিল অর্থনীতির গতিশীলতার একটি নিদর্শন। ‘চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভ’-এর গবেষণা সহকারী এম হেলাল আহমেদ জনি বলেন, ‘ভোক্তা পণ্য ও কাঁচামালের আমদানি বৃদ্ধি উৎপাদন ও রপ্তানি খাতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। তবে মূলধনী যন্ত্রপাতি ও মধ্যবর্তী পণ্যের আমদানি কমে যাওয়ায় ভবিষ্যতের বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।’
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধে মোট ৭০ দশমিক ০৭ বিলিয়ন ডলারের এলসি খোলা হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ বেশি। ব্যাংকারদের মতে, আমদানি বৃদ্ধির অর্থ হলো ডলারের লেনদেন ও ব্যাংকিং খাতে স্থিতিশীলতা ফিরে আসছে।
সব মিলিয়ে, আকুর বিলের ঊর্ধ্বগতি যেমন অর্থনীতিতে পুনরুজ্জীবনের বার্তা দিচ্ছে, তেমনি আমদানি কাঠামোর ভারসাম্য বজায় রাখাও এখন বড় একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এএইচএস/এমএইচএস