মানুষের জীবনের সুখ-দুঃখ, স্মৃতি আর অনুভূতির নীরব সাক্ষী হয়ে থাকে একটি বাড়ি। সময়, সম্পর্ক আর জীবনের নানা গল্প জমা থাকে ঘরের প্রতিটি দেয়াল আর কোণায়। সেই দেয়ালের রংটা কেমন হতে পারে, জেনে নেওয়া যাক। বাড়ির নিরাপত্তার এক অনন্য প্রতীক দেয়াল। এর বাইরের অংশের রং বাছাই করার ক্ষেত্রে জলবায়ুর ভূমিকা রয়েছে। দেয়ালেরও তো সুরক্ষা চাই। রোদ কিংবা বৃষ্টিতে যাতে সহজে দেয়ালখানা নষ্ট হয়ে না পড়ে, তার জন্য রং বাছাই করা চাই ঠিকঠাক। পরিবেশের আর্দ্রতা শোষণ করে দেয়াল যদি নষ্ট হয়ে যায়, তাহলেই বাড়তি ঝামেলা। আবার দেয়ালে গাঢ় রং করা হলে, যা সূর্যের তাপ ধরে রাখবে, তাহলে বাড়ির বাসিন্দারা গরমে কষ্ট পাবেন। অন্দরে আবার চোখের আরাম এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এমন নানা দিক বিবেচনা করে তবেই বাড়ির বাইরের ও অন্দরের রং বাছাই করা জরুরি।
বাইরের দেয়াল : সারাবিশ্বেই বাড়ির বাইরের দেয়ালের রং বেছে নেওয়া হয় স্থানীয় জলবায়ুর দিকটা মাথায় রেখে। আমাদের মতো গ্রীষ্মপ্রধান দেশের জন্য সাদা বা চাপা সাদার মতো হালকা রং দারুণ উপযোগী। এমন রং রোদকে প্রতিফলিত করে। তাই বাড়ির ভেতরটা তুলনামূলক ঠান্ডা থাকে। রঙের ফিনিশিং সেমি-ম্যাট ধাঁচের হলে দেয়াল তুলনামূলক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন দেখায়, ধুলা কম বোঝা যায়। দেয়ালের সৌন্দর্যের শত্রæ ধুলা। সৌন্দর্য বজায় রাখতে হালকা মুজ, হালকা ধূসর, হালকা বেইজ, হালকা বাদামি রং বা হালকা জলপাই রং কাজে আসবে। তবে যে রংই হোক না কেন, তা যেন হয় ওয়েদারপ্রুফ। এ ধরনের রং টেকসই হয় বেশি। আর দেয়ালকেও রাখে সুরক্ষিত। বারান্দা বা জানালার গ্রিলে সাদা বা কালো রং রাখা হলে দেয়ালের সঙ্গে মানায়।
সাধারণ অন্দরে : প্রতিটি বাড়িতেই এমন কিছু অংশ থাকে, যেখানে পরিবারের সব সদস্যই সময় যাপন করতে পারেন। কোনো কোনো অংশে আবার অতিথিরাও এসে বসেন। বসার ঘর, খাবারঘর বা করিডোরের মতো এসব অংশের জন্য নিরপেক্ষ ধরনের রং বেছে নেওয়া হয় বিশ্বজুড়েই। আমাদের দেশেও এমন চল রয়েছে। যেমন চাপা সাদা, হালকা বাদামি, ধূসর, বেইজ বা হালকা কফি রং ব্যবহার করা হয় এসব জায়গায়। খাবারঘরকে প্রাণবন্ত করে তুলতে পিচ বা হলুদ রঙের হালকা শেডও ব্যবহার করা যেতে পারে। নিরপেক্ষ রঙে বেশ কিছু ঘরের দেয়াল রাঙানো হলে অবশ্য কিছুটা একঘেয়ে দেখাতে পারে। সে ক্ষেত্রে কোনো ঘরের একটা দেয়ালে ভিন্ন একটা উজ্জ্বল রং ব্যবহার করা যেতে পারে। এই একটা দেয়ালের জন্য নীল রঙের বিচিত্র শেড থেকে যেকোনো একটা বেছে নিতে পারেন। একটা দেয়ালে নীল, ফিরোজা, সি গ্রিন বা টিল রঙের মতো রঙের ব্যবহারে অন্দরে আসে বৈচিত্র্য।
দেশজ ধারার বিশেষ রূপ : দেশজ ধারার অন্দরসজ্জায় আবার এসব ঘরের জন্য টেরাকোটা বা মেটে ধাঁচের রং পছন্দ করেন কেউ কেউ। তবে এ ধরনের রং পছন্দ করলেও সাধারণত সেগুলোর মিউট টোন, অর্থাৎ একেবারে মৃদু একটা শেড ব্যবহার করা হয়। আভিজাত্যের এই রংগুলোকে যে কেবল একরঙা প্রলেপের মতোই দেখায়, তা কিন্তু নয়। বরং দেখতে খানিকটা অমসৃণ হয় এসব রঙের দেয়াল। হাতের স্পর্শে অবশ্য কোমলতাই খুঁজে পাওয়া যায়। এই ত্রিমাত্রিক ধারার রং যেন এক দৃষ্টিভ্রমের খেলা হয়ে দাঁড়ায় বাড়িতে।
ব্যক্তিগত পরিসরে : শোবার ঘর, শিশুদের ঘর কিংবা অতিথিদের থাকার ঘরের চারটা দেয়ালই একটু রঙিন হতে পারে। এসব ঘরের জন্য নীল বা সবুজের কোমল ধাঁচের কোনো শেড বেছে নেওয়া যেতে পারে। ল্যাভেন্ডার, ফিরোজা রং বা জলপাই রঙের হালকা শেড দারুণ মানায়। এসব রং ব্যবহারে অন্দর দেখায় প্রশান্ত। দেশে ও বিদেশে এসব ঘরের জন্য এমন ধারাই চলছে। ছোট্ট শিশুর ঘরে তার পছন্দমাফিক হালকা গোলাপি, বেগুনি, আকাশি বা গাঢ় নীল রং কাজে লাগাতে পারেন। মিন্টের মৃদু শেডও বেছে নিতে পারেন।
রান্নাঘরের রং : রান্নাঘরের দেয়াল খুব সহজেই ময়লা হয়ে যায়। তেল চিটচিটে একটা ভাব চলে আসে। তাই বিশ্বজুড়েই রান্নাঘরের দেয়ালে খুব গ্লসি বা চকচকে ধরনের রং ব্যবহারের চল রয়েছে। সাদা, চাপা সাদা, ধূসর, গাঢ় বাদামি, কফি রং বা মিন্ট রং করানো যেতে পারে রান্নাঘরে।
আইএইচ/

