Logo

অর্থনীতি

শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত ৩০তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা

Icon

রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৯:৩৩

শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত ৩০তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা

পূর্বাচলের আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে হাতুড়ি-পেরেকের টুংটাং শব্দ। লোহার ফ্রেমে ঝালাইয়ের আগুনের ঝলকানি আর ঘাম ঝরানো শ্রমিকদের ব্যস্ততায় যেন এক অনন্য কর্মযজ্ঞ।

নতুন বছরের প্রথম দিনেই যে আয়োজন দেশের বাণিজ্য ও সম্ভাবনার প্রতীক হয়ে উঠবে তারই প্রস্তুতিতে এখন মুখর বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টার (বিবিসিএফইসি)। আর দিন গুনছে ৩০তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা (ডিআইটিএফ)-২০২৬।

সরেজমিনে দেখা যায়, ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত থেমে নেই কাজ। কোথাও প্যাভিলিয়নের বিশাল কাঠামো দাঁড় করানো হচ্ছে, কোথাও স্টলের দেয়ালে লাগছে রঙের শেষ প্রলেপ। নির্মাণ শেষ হলেই শুরু হবে আলোকসজ্জা, থিমভিত্তিক নকশা আর দৃষ্টিনন্দন সাজসজ্জার কাজ। সবকিছুর লক্ষ্য একটাই - ১ জানুয়ারির আগে মেলাকে প্রস্তুত করা।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সূত্র জানায়, এবারের মেলায় দেশি-বিদেশি মিলিয়ে ৩০০টিরও বেশি স্টল ও প্যাভিলিয়ন থাকছে। ভারত, পাকিস্তান, তুরস্ক, ইরান, সিঙ্গাপুর ও আফগানিস্তানসহ বিভিন্ন দেশের প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্য ও সেবা নিয়ে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ফলে এবারের আসর কেবল বেচাকেনার জায়গা নয়, বরং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংযোগের এক উন্মুক্ত মঞ্চ হয়ে উঠবে।

‘বাংলাদেশ স্কয়ার’ ইতিহাস থেকে উন্নয়নের গল্প

মেলার বিশেষ আকর্ষণ ‘বাংলাদেশ স্কয়ার’। এখানে এক ছাদের নিচে তুলে ধরা হবে দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং উন্নয়ন অগ্রযাত্রার নানা দিক। দর্শনার্থীরা জানতে পারবেন স্বাধীনতার গল্প থেকে শুরু করে বর্তমান বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সাফল্য ও সম্ভাবনার কথা।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) যৌথভাবে মেলার আয়োজন করছে, যা রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় দেশের রপ্তানি ও শিল্পখাতকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরার একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ।

উদ্বোধন ও প্রত্যাশা

ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হাসান আরিফ বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক আয়োজন ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার ৩০তম আসর আগামী ১ থেকে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত মাসব্যাপী অনুষ্ঠিত হবে। আমরা আশা করছি, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস আনুষ্ঠানিকভাবে মেলার উদ্বোধন ঘোষণা করবেন।

তিনি জানান, ‘এ বছর প্যাভিলিয়ন, স্টল ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে ৩৫০টিরও বেশি প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে। দেশীয় রপ্তানিকারকদের পাশাপাশি বিদেশি অংশগ্রহণ থাকায় এবারের মেলা পূর্ণাঙ্গ আন্তর্জাতিক রূপ পাচ্ছে।’

নিরাপত্তা ও মান নিয়ন্ত্রণে কড়া ব্যবস্থা

নির্বাচনকালীন সময়কে সামনে রেখে নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। বাণিজ্য সচিবের নেতৃত্বে গঠিত স্টিয়ারিং কমিটি ইতোমধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে বিস্তারিত নিরাপত্তা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। সিসিটিভি নজরদারি, নিয়ন্ত্রিত প্রবেশপথ এবং সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা টিম থাকছে পুরো মেলাজুড়ে।

পাশাপাশি নকল ও নিম্নমানের পণ্য বিক্রি ঠেকাতে কঠোর মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ইপিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মানহীন পণ্য পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

দর্শনার্থীদের যাতায়াত সহজ করতে ঢাকা ছাড়াও গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী থেকে বিশেষ বিআরটিসি বাস সার্ভিস চালু থাকবে। রাইড শেয়ারিং সেবাও ব্যবহার করা যাবে।

এবারও থাকছে আধুনিক ই-টিকিটিং ব্যবস্থা। মেলায় প্রবেশের টিকিটের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০ টাকা। শিশুদের জন্য থাকছে দুটি শিশু পার্কসহ নানা বিনোদনমূলক আয়োজন, যা মেলাকে পরিবারবান্ধব রূপ দেবে।

অপেক্ষা শুধু পর্দা ওঠার সব প্রস্তুতি যখন শেষ প্রান্তে, তখন পূর্বাচলের প্রতিটি হাতুড়ির আঘাত যেন জানান দিচ্ছে নতুন বছরের শুরুতে আবারও ফিরছে বাণিজ্য, স্বপ্ন আর সম্ভাবনার মহোৎসব। মাসব্যাপী এই আয়োজন শুধু কেনাবেচার নয়, বরং বাংলাদেশের সক্ষমতা ও আত্মবিশ্বাসের এক উজ্জ্বল প্রদর্শনী হয়ে উঠবে এমন প্রত্যাশাই এখন সবার।

এন বি আকাশ/এনএ

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর