
শিক্ষাকে বলা হয়ে থাকে জাতির মেরুদণ্ড। শিক্ষকদের বলা হয় জাতি গড়ার কারিগর। চমৎকার দুটি বাক্য দ্বারা শিক্ষা এবং শিক্ষকদেরকে অনুপ্রাণিত করা হয়েছে। যুগ যুগ ধরেই এই জাতি এই সুন্দর দুটি বাক্য শুনে আসছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এদেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে বারবার দংশন করা হয়েছে।
কোনো রকমের গবেষণার তোয়াক্কা না করেই শুধু মাত্র মন্ত্রী বা আমলাদের নিজস্ব চিন্তা চেতনার উপরে ভর করেই বারবার কারিকুলাম তৈরি হয়েছে। আবার আর একজন চেয়ারে এসে তার মতো করে আবার কারিকুলামে হাত দিয়েছে। এভাবেই চলছে আমাদের শিক্ষা কারিকুলামের আসা যাওয়া।
কোটি কোটি টাকা খরচ করে ফিনল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, কানাডা ঘুরে দেখে তাদের শিক্ষাব্যবস্থায় অনুপ্রাণিত হয়ে সে দেশের মতো করে এদেশের শিক্ষাব্যবস্থা চালু করতে হাজার হাজার কোটি টাকা শিক্ষা কারিকুলাম এবং শিক্ষা উপকরণে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু আমরা বিগত দিনে সেগুলোর খুব একটা আশানুরূপ সাফল্য পেতে দেখিনি। রাষ্ট্র কখনও বুঝতেই চেষ্টা করেনি আসলে শিক্ষায় গলদ কোথায়? শুধুমাত্র দু-একটি বিষয়ে ভিনদেশী সিস্টেম চালু করলেই আমরা সফল হব তা নয়।
শিক্ষায় বিপ্লব ঘটাতে গেলে, আগে শিক্ষাবিদ এবং মাঠা পর্যায়ের শিক্ষকদের সমন্বয়ে একটি দীর্ঘমেয়াদি শিক্ষা কারিকুলাম তৈরি করতে হবে। শিক্ষায় পর্যাপ্ত বরাদ্দ দিতে হবে। শিক্ষকদের আর্থিক এবং সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি করতে হবে। সম্পূর্ণ স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় মেধাবী শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। শিক্ষায় ১০০% আধুনিকায়ন করতে হবে, শিক্ষানীতি প্রণয়ন করতে হবে এবং ১০০% সেটা বাস্তবায়ন করতে হবে।
দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, দীর্ঘমেয়াদি শিক্ষা কারিকুলাম এবং শিক্ষানীতির কঠোর বাস্তবায়নের মাধ্যমে শিক্ষা খাতকে শক্তিশালী একটা ভিত্তিতে দাঁড় করাতে হবে।
চেয়ার বদলের সঙ্গে সঙ্গে যেন কোনোভাবেই সেটা পরিবর্তন না হয় সেদিকে রাষ্ট্রকে খেয়াল রাখতে হবে।
কেননা কেবলমাত্র দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা এবং সম্মিলিত প্রচেষ্টায় পারে একটি জাতিকে জ্ঞান বিজ্ঞানের উচ্চশিখরে আরোহণ করাতে। কোটি কোটি টাকায় বিদেশ ভ্রমণের মাধ্যেম অর্জিত জ্ঞান আর বাংলাদেশে বসে সভা সেমিনার করে শিক্ষকদের ১২ হাজার টাকা বেতনের অনুন্নত জীবন নিশ্চিত করে কখনোই শিক্ষায় বিপ্লব ঘটানো যাবেনা। কেবল রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদের আন্তরিকতা, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, দীর্ঘমেয়াদি শিক্ষা কারিকুলাম এবং শিক্ষকদের সামাজিক অর্থনৈতিক মর্যাদা বৃদ্ধির মাধ্যমেই শিক্ষায় বিপ্লব আসতে পারে।
লেখক : মো. জামিল বাসার, সহকারী শিক্ষক, বওলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, টাংগাইল।