প্রাথমিকে পরীক্ষাও হবে, শিক্ষকদের আন্দোলনও চলবে
ডিজিটাল ডেস্ক
প্রকাশ: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:২৬
ছবি : সংগৃহীত
দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে আগামীকাল রোববার থেকে আবারও বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে হঠাৎ প্রাথমিকের শিক্ষক নেতাদের বদলি আদেশ হওয়ার পর এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের অন্যতম আহ্বায়ক মো. শামছুদ্দিন মাসুদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, আমরা রোববার থেকে পরীক্ষা নেব। কোমলমতি শিক্ষার্থীরা আমাদেরই সন্তান। তাদের ক্ষতি আমরা চাই না। দুই দিন পিছিয়ে গেছে; কিন্তু এতে শিক্ষাজীবন অচল হবে না। অভিভাবকদের প্রতিক্রিয়া বিষয়ে শামছুদ্দিন মাসুদ বলেন, বিভিন্ন জায়গায় শিক্ষকরা অভিভাবকদের চাপে পড়েছেন।
অনেকে উত্তেজিত হয়েছেন। কিন্তু বছরের পড়াশোনা শেষ। পরীক্ষা দুই দিন পর হলে বড় সমস্যা হতো না। আন্দোলনের অন্যান্য কর্মসূচি চলমান থাকবে, তবে পরীক্ষাকে আওতামুক্ত রাখা হবে।
প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আরেক আহ্বায়ক মাহবুবর রহমান বলেন, কর্মবিরতি চলবে, তবে অন্যান্য কর্মসূচি পরীক্ষার পর অব্যাহত থাকবে। বদলি চাকরিরই অংশ। তাই সহকারী শিক্ষকদের দশম গ্রেডের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের থামানো যাবে না।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের তিন দফা দাবির আন্দোলন চলমান অবস্থায় ভিন্ন জেলায় বদলি করা হয়েছে আন্দোলনে যুক্ত ৪২ শিক্ষককে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ৪ ডিসেম্বরের আদেশে এ বদলি অনুমোদন দেওয়া হয়। তালিকায় আন্দোলনের পাঁচ শীর্ষ নেতা খায়রুন নাহার লিপি, শামছুদ্দিন মাসুদ, আবুল কাশেম, মাহবুবর রহমান ও মো. মনিরুজ্জামান রয়েছেন। সহকারী শিক্ষকদের সবাইকে পার্শ্ববর্তী জেলায় বদলি করায় নিজ জেলায় থাকার সুযোগ তাদের থাকছে না।
বাংলাদেশ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদের সঙ্গে দশম গ্রেডের দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের যৌথ এক বিবৃতিতে জানানো হয়, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের ন্যায্য তিন দফা দাবি আদায়ে বাস্তবায়ন পরিষদ এবং বাংলাদেশ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদের কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। আমাদের নৈতিকতা, মানবিকতা এবং সন্তানতুল্য কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে রোববার থেকে তৃতীয় প্রান্তিক বা বার্ষিক পরীক্ষা সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত সারাদেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কমপ্লিট শাটডাউন বা তালাবদ্ধ কর্মসূচি স্থগিত করা হলো। প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ ও বাংলাদেশ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদের আলোচনার ভিত্তিতে পরবর্তী কমসূচি ঘোষণা করা হবে।
তিন দফা দাবি আদায়ে গত ২৭ নভেম্বর থেকে লাগাতার কর্মবিরতি শুরু করেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা। এর পর ১ ডিসেম্বর শুরু হওয়া বার্ষিক পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেন তারা। ২ ডিসেম্বর বিদ্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি শুরু করেন। শিক্ষকদের এমন কর্মসূচিতে সারাদেশের অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরীক্ষায় বিঘ্ন ঘটে। কোথাও কোথাও উপজেলা প্রশাসন ও অভিভাবকদের সহযোগিতায় প্রধান শিক্ষকরা পরীক্ষা নিলেও তাতে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। এমন পরিস্থিতিতে দফায় দফায় সরকারি চাকরিবিধি ও ফৌজদারি আইনে আন্দোলনরত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এর পরও শিক্ষকরা কর্মসূচি অব্যাহত রাখায় শাস্তিমূলক বদলির পথে হাঁটে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। বৃহস্পতিবার শিক্ষকদের আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া চার নেতাসহ কয়েকশ শিক্ষককে রীতি ভেঙে ভিন্ন জেলায় বদলি করা হয়। এর পরই শিক্ষকদের পক্ষ থেকে কর্মসূচি স্থগিতের ঘোষণা আসে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্র জানায়, সারাদেশে বর্তমানে ৬৫ হাজার ৫৬৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এসব বিদ্যালয়ে তিন লাখ ৮৪ হাজারের বেশি শিক্ষক কর্মরত। তাদের মধ্যে বেশির ভাগই সহকারী শিক্ষক। প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বর্তমানে দশম গ্রেডে উন্নীত হয়েছেন। তবে সহকারী শিক্ষকরা ১৩তম গ্রেডে বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। তারা এ নিয়ে অসন্তুষ্ট। গ্রেড উন্নীতকরণের দাবিতে তারা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন।
এআরএস

