Logo

শিক্ষা

কওমি শিক্ষকদের কোয়ার্টারের ব্যবস্থা হোক

Icon

মুহাম্মদ হেদায়ত উল্লাহ

প্রকাশ: ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪:১৯

কওমি শিক্ষকদের কোয়ার্টারের ব্যবস্থা হোক

বাংলাদেশের কওমি মাদরাসাশিক্ষকরা দীর্ঘদিন ধরে সমাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। কোরআন-হাদিস শিক্ষা, নৈতিকতা গঠন, সামাজিক সেবা সবকিছুর মূল কেন্দ্রবিন্দু হলেন আলেম ও মাদরাসা শিক্ষকরা। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক যে, এই শিক্ষকদের জীবনযাপন, বিশেষ করে আবাসনের বিষয়টি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অবহেলিত থেকে গেছে। তাই সময় এসেছে কওমি শিক্ষকদের জন্য আধুনিক, মানবিক ও নিরাপদ কোয়াটারের ব্যবস্থা নিশ্চিত করার।

শিক্ষক মর্যাদা ও আবাসনের বাস্তব চিত্র

বেশিরভাগ কওমি মাদরাসায় শিক্ষকরা অতি সীমিত বেতনে দায়িত্ব পালন করেন। কোথাও কোথাও শিক্ষকরা ছাত্রদের সাথে একই বিল্ডিংয়ের ছোট রুমে থাকেন। এতে একদিকে পারিবারিক গোপনীয়তা ব্যাহত হয়, অন্যদিকে তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও চাপ পড়ে। অনেকেই মাদরাসার পাশেই ভাড়া বাড়িতে থাকতে বাধ্য হন, যা তাদের সামর্থ্যের তুলনায় ব্যয়বহুল। আর কোয়াটার থাকলে বেশ কিছু উপকারিতা রয়েছে। নিম্মে কয়েকটি উল্লেখ করা হল।

১. মানসম্মত পারিবারিক জীবন : নিজস্ব কোয়াটার থাকলে শিক্ষকরা পরিবার নিয়ে একটি নিরাপদ পরিবেশে বসবাস করতে পারবেন। পরিবার পাশে থাকলে শিক্ষকের চরিত্র আরও সুন্দরভাবে গড়ে উঠবে, মানসিক শান্তি বাড়বে এবং শিক্ষাদানের মানও উন্নত হবে।

২. দীর্ঘমেয়াদি শিক্ষকের স্থায়িত্ব : আবাসনের সমস্যা থাকায় অনেক যোগ্য আলেম দীর্ঘদিন একটি প্রতিষ্ঠানে টিকে থাকতে পারেন না। কোয়াটারের ব্যবস্থা হলে শিক্ষকরা প্রতিষ্ঠানের সাথে স্থায়ী বন্ধনে যুক্ত হবেন।

৩. শিক্ষার্থীদের ওপর ইতিবাচক প্রভাব : শিক্ষক ভালো পরিবেশে থাকলে তাঁর চরিত্র ও আচরণ আরও পরিপক্বভাবে প্রকাশ পায়, যার সুফল সরাসরি শিক্ষার্থীরা পায়।

৪. সেবার মান উন্নয়ন : যেহেতু শিক্ষকরা প্রায় চব্বিশ ঘণ্টা ডিউটিতে নিয়োজিত, তাই মাদরাসার পক্ষ থেকে কোয়াটারের ব্যবস্থা করলে তাদের সেবা দিতে অনেক সহজ হবে। পরিবার পাশেই থাকলে শিক্ষক আরও স্বস্তি ও উদ্দীপনা নিয়ে শিক্ষার্থীদের পাশে থাকতে পারবেন। তাছাড়া আবাসন সুবিধা থাকলে সমাজে মাদরাসার গ্রহণযোগ্যতা ও আস্থা আরও বৃদ্ধি পাবে।

কীভাবে কোয়াটার ব্যবস্থা করা যেতে পারে

ক. ওয়াকফ সম্পত্তির সঠিক ব্যবহার : অনেক মাদরাসার জমি বা ওয়াকফ সম্পত্তি থাকলেও তা সঠিকভাবে ব্যবহৃত হয় না। পরিকল্পিতভাবে আধুনিক আবাসিক ভবন নির্মাণ করা সম্ভব।

খ. দাতা ও সম্পদশালীদের সহযোগিতা : কওমি মাদরাসার উন্নয়নমুখী প্রকল্প হিসেবে শিক্ষক কোয়াটার নির্মাণ করলে অনেক দাতা এগিয়ে আসবে বলে আশাবাদী। 

গ. সরকারি বা স্থানীয় প্রশাসনিক সহায়তা : যদিও কওমি মাদরাসা স্বতন্ত্র কাঠামোর, তবুও সামাজিক কল্যাণমূলক প্রকল্পের মাধ্যমে ভবন নির্মাণে সহায়তা পাওয়া যেতে পারে।

কওমি শিক্ষকরা শুধু পাঠদানকারী নন- তাঁরা সমাজের নৈতিক নির্মাতা। তাঁদের পাশে পরিবার থাকলে চরিত্র আরও সুন্দর ও পরিপক্ব হবে। শান্তি ও স্থিতিশীলতা না থাকলে শিক্ষাব্যবস্থাও দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই মাদরাসা পরিচালনা কমিটি, সমাজের দাতা, স্থানীয় গণ্যমান্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

লেখক : প্রভাষক-ইসলামিক স্টাডিজ, দশমিনা ইসলামিয়া কামিল এমএ মাদরাসা, পটুয়াখালী, বরিশাল

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

মাদরাসা শিক্ষা

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর