শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হলো একটি জাতির ভবিষ্যৎ নির্মাণের কারখানা। আর এই প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ প্রশাসনিক ও শিক্ষাগত অভিভাবক হলেন প্রধান শিক্ষক। তাঁর দক্ষতা, দূরদর্শিতা ও নৈতিকতা একটি বিদ্যালয়ের সার্বিক পরিবেশ ও মান নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। প্রতিষ্ঠান যেন একটি সাজানো বাগান। এই বাগান সাজাতে যিনি রক্ত-মাংস পানি করেন, তিনি হলেন সেই প্রতিষ্ঠান প্রধান। সেই দরদি মালীর সুনিপুণ হাতের ছোঁয়ায় বাগানের এক একটি গাছ কোমল ও সজীব থাকে। পুরো বাগান হয়ে উঠে ফলে-ফুলে পরিপূর্ণ। প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব ও কর্তব্য বহুমাত্রিক ও অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
এখানে আমরা প্রধান শিক্ষকের কয়েকটি দায়িত্ব তুলে ধরছি-
১। প্রতিষ্ঠান প্রধানের অন্যতম দায়িত্ব হলো, প্রাতিষ্ঠানিক সকল কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করা। অধীনস্থরা তাদের দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করছে কি না, সে ব্যাপারে খোঁজ নেওয়া এবং কোনো ত্রুটি দেখলে প্রজ্ঞার সঙ্গে তা সংশোধন করা। (বুখারি: ৭১৩৮)
২। প্রতিষ্ঠান কর্ণধারকে অবশ্যই শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকসহ সবার জন্য উত্তম চরিত্রের অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হতে হবে। (সুরা আহজাব: ২১)
৩। তার কথা ও কাজে অবশ্যই মিল থাকতে হবে। অন্যথায় এটি আল্লাহর কাছে চরম অপছন্দনীয়। (সুরা সাফ:২)
৪। প্রধান শিক্ষকের হাতে প্রতিষ্ঠানের সকল সম্পদ ও সময় আমানত। এর যথাযথ সংরক্ষণ ও সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা তার অন্যতম দায়িত্ব। (সুরা নিসা: ৫৮)
৫। সিদ্ধান্ত গ্রহণ, নিয়ম-নীতি প্রয়োগ এবং সুবিধা বিতরণের ক্ষেত্রে সকল শিক্ষক-কর্মচারী, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে পূর্ণ ন্যায় ও নিরপেক্ষতা বজায় রাখা। (সুরা নাহল: ৯০)
৬। গুরুত্বপূর্ণ ও নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে শিক্ষক, বিশেষজ্ঞ বা ম্যানেজিং কমিটির সঙ্গে পরামর্শ করা। (সুরা শুরা: ৩৮)
৭। শিক্ষকতা ও পরিচালনায় যারা সবচেয়ে বেশি যোগ্য ও বিশ্বস্ত, তাদেরকে শিক্ষকতা ও প্রশাসনিক পদে নিয়োগ দেওয়া। (সুরা কাসাস: ২৬)
৮। শিক্ষক-কর্মচারীদের শ্রমের বিনিময়ে চুক্তিকৃত পারিশ্রমিক তাদের কাজ শেষ হওয়ার আরে আজমের বিনিময়ে চাজি কর পারিশ্রমিক কারের ২৪৪৩)
৯। অধীনস্থদের সঙ্গে কঠোরতা নয়, বরং নম্রতা ও উদারতার সঙ্গে পেশাদার সম্পর্ক বজায় রাখা। (বুখারি: ৬৯৩)
১০। প্রতিষ্ঠানের স্থিতিশীলতার স্বার্থে আয়-ব্যয়, হিসাব-নিকাশ এবং শিক্ষক- কর্মচারী নিয়োগ- বিয়োগ ইত্যাদি ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। (সুরা বাকারা: ২৮২)
পরিশেষে বলা যায়, প্রধান শিক্ষক কেবল একজন প্রশাসক নন; তিনি একজন পথপ্রদর্শক, অভিভাবক ও আদর্শ মানুষ গড়ার কারিগর। তাঁর দক্ষ নেতৃত্ব, নিষ্ঠা ও সততার মাধ্যমে একটি প্রতিষ্ঠান আলোকিত মানুষ গড়ে তুলে জাতির অগ্রযাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে।
লেখক : মুহাদ্দিস, দিলু রোড মাদ্রাসা, নিউ ইস্কাটন ঢাকা।

