শিক্ষা সংস্কার প্রস্তাবনা : ১০
মাদরাসায় ধর্মসমূহ পড়ানো হোক
লাবীব আব্দুল্লাহ
প্রকাশ: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬:৩৩
এ ই যুগ বিজ্ঞানের যুগ। তথ্য প্রযুক্তির যুগ। গ্লোবালাইজনের। বিশ্বায়নের। এই বিশ্বায়নের আগ্রাসনে অনেক জাতি গোষ্ঠীর কালচার হুমকির মুখোমুখী। বেলাল্লাপনার জয়জয়কার। ডুগডুগি বাজে অশ্লীলতার। পৃথিবী জন্মের পর এতো পংকিল সময় মনে হয় পৃথিবী দেখেনি। হত্যাযজ্ঞ, হত্যা উৎসব, দেশ দখল, আগ্রাসন, ভ্যাবিচারের নানামুখী আয়োজন, ব্যক্তি থেকে রাষ্ট্রের সন্ত্রাস কি ছিলো পৃথিবীতে এর আগে?
মানবসভ্যতা টিকিয়ে রাখতে, মানুষের জীবনকে সভ্য, সুন্দর করার জন্য আল্লাহ অপার সুন্দর এই পৃথিবীতে নবী রাসুল পাঠিয়েছেন। নবীগন যুগের চাহিদা যাই থাক তাঁরা মামুষকে আখেরাতমুখী, আল্লাহমুখী করার দাওয়াত দিয়েছেন। আল্লাহর পথে মানুষকে আহবান করেছেন। তাওহীদ রেসালাত ও আখেরাতের দাওয়াত দিয়েছেন। আল্লাহ আসমান থেকে ফিরিস্তার মাধ্যমে কিতাব অবতীর্ণ করেছেন। নাযিল করেছেন তাওরাত, ইনজিল, যাবুর ও কোরআনুল কারীম।
সব নবীই মুসলিম ছিলেন। সব নবী নিষ্পাপ ছিলেন। সব নবীই শ্রেষ্ট মানব ছিলেন। নবীদের মুজেযা ছিলো। নবী শেষ মুজেযাও শেষ। কিন্তু একটি মুজেযা তাকিয়ামত থাকবে সেটি কোরআনুল কারীম। নবীজী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হলেন খাতামুন নবী। নববী প্রসাধের সর্বশেষ ইট তিনি। তাঁর উপর অবতারিত কোরআন সর্বশেষ আসমানী কিতাব। বিজ্ঞানময়, প্রজ্ঞাময়, সকল কিতাবের নির্যাস, ইসলামের সর্বশেষ বানীগ্রন্থ, বিশুদ্ধ, অবিকৃত, সংরক্ষিত, সর্বোত্তম ভাষা আরবীতে নাযিল করা হয়েছে।
দুই
বিশ্বায়নের এই যুগে নানা ধর্মের জন্ম হচ্ছে। মামুষের প্রয়োজনে ধর্ম তৈয়ার করছে। প্রাচীন ধর্মের বিকৃতরুপের প্রচার করছে। এই ধর্মের বিশ্বাস বিকৃত হলেও যেহেতু ধর্ম তাই মানুষ মেনে নিয়ে বিভ্রান্ত হচ্ছে। পৃথিবীতে ধর্ম হাজার হাজার। অধিকাংশই বিকৃত ও ব্যবসায়ী মাধ্যম।
একদল কোনো ধর্মই মানতে রাজি নয়। একদল সব ধর্মের সমন্বয়ে একধর্ম মানতে রাজি। একদল শুধুই ইসলাম ধর্ম অন্যকোনো ধর্ম ধর্মই নয়।
কোরআন সে কথাই বলে। ইসলাম ছাড়া অন্যকোনো দীন আল্লাহর কাছে গ্রহনীয় নয়। পৃথিবীতে সাতশ কোটি মানুষ। দেড়শ কোটি মুসলিম। বাকী সাড়ে পাঁচশ কোটি অমুসলিম।
তিন
ইসলাম শান্তির পথ। মুক্তির মহা সড়ক। কোরআন সবার জন্য। নবীজী সবার। কিন্তু আমরা এই কথা সবাইকে বুঝাতে পারি নাই। কোরআন পড়ার অধিকার সব ধর্মের লোকরই আছে। নবীজীর সিরাত পড়ার অধিকার সব ধর্মের লোকরই আছে। নবীজী তাদেরও নবী।
বিজ্ঞানের কথা বলে ধর্মের বিরোধীতা করা এখন ফ্যশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু ইসলাম বিজ্ঞানময় দীন। সময়ের প্রয়োজন প্রসিদ্ধ ধর্মগুলো জানা, দর্শনগুলো বুঝা, আন্তঃধর্মীয় বিষয়গুলো না জেনে ইসলামকে কীভাবে প্রাধান্য দেবে দাঈগণ ইসলামকে গালেব করতে হলে অন্যধর্মের মৌলিক বিষয়গুলো জানতে হবে। তুলনামূলক আলোচনা করে ইসলামের সৌন্দর্য ও যৌক্তিকতা প্রমাণ করতে হবে।
খসড়া প্রস্তাব:
কওমি মাদরাসার পাঠ্যক্রেমে মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিক লেভেল থেকে মুকানাতুল আদয়ান বিষয়ে একটি কিতাব রাখা যেতে পারে।
কোনো কিতাবের অনুবাদ না করে বা উর্দু আরবীতে না পড়িয়ে বাংলা ভাষায় ধর্মের তুলনামূলক আলোচনা করে একটি বই সংকলন ও রচনা করে পড়ানো যেতে পারে। একদল গবেষকদের সমন্বয়ে বইটি রচনা হতে পারে।
উল্লেখ্য, কওমি মাদরাসায় আবার একাই সব বই কিতাব লেখে ফেলে এই প্রবণতা থাকলে প্রয়োজন নেই এই বইয়ের। টিমওয়ার্কের বিষয়কে একাই সব করে কওমি সেলেবাসের বারোটা বাজানো হয়েছে। সাধারণ শিক্ষার পাঠ্যবই নির্বাচন প্রক্রিয়া দেখলেই বুঝা যাবে আমরা কওমিরা কত শত বছর পেছনে।
লেখক : শিক্ষাবিদ, গবেষক, লেখক ও পরিচালক, ইবনে খালদুন ইনস্টিটিউট ময়মনসিংহ

