Logo

শিক্ষা

মাদরাসার উস্তাদ-ছাত্রের সম্পর্ক

Icon

হাফেজ মাওলানা ক্বারী মেহেদী হাসান

প্রকাশ: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬:৪২

মাদরাসার উস্তাদ-ছাত্রের সম্পর্ক

মাদরাসার উস্তাদ ও ছাত্রের সম্পর্ক কেবল একজন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এটি একটি রূহানি বা আত্মিক বন্ধন। এই সম্পর্কটি দ্বীনি ইলম এবং আমলের (আচরণ) মেলবন্ধনে তৈরি হয়। নিম্নে এ সম্পর্কের কিছু ধাপ উল্লেখ করা হল।

১. রূহানি পিতা ও আদর্শ সন্তানের সম্পর্ক

ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে উস্তাদ হলেন ছাত্রের রূহানি পিতা। জন্মদাতা পিতা সন্তানকে দুনিয়ায় আসার পথ দেখান, আর উস্তাদ তাকে জান্নাতের পথ দেখান।

উস্তাদের ভূমিকা: একজন পিতা যেমন তার সন্তানের অকল্যাণ সইতে পারেন না, উস্তাদও তেমনি ছাত্রের ইহকাল ও পরকালের মঙ্গলের জন্য সর্বদা চিন্তিত থাকবেন।

ছাত্রের ভূমিকা: একজন অনুগত সন্তানের মতো উস্তাদকে মান্য করা এবং তাঁর সম্মান রক্ষা করা ছাত্রের প্রধান কাজ।

২. আদব ও ইহতিরাম (শিষ্টাচার ও শ্রদ্ধা)

ইলম বা জ্ঞান অর্জনের প্রধান শর্ত হলো আদব। বলা হয়, "আদব ইলমের চেয়েও মূল্যবান।" উস্তাদের সামনে কথা বলা, বসা এবং হাঁটাচলার ক্ষেত্রে অত্যন্ত বিনয়ী হওয়া। উস্তাদ কোনো বিষয়ে ভুল করলেও বা কঠোরতা করলেও তাঁর সামনে তর্কে লিপ্ত না হওয়া। উস্তাদের ইশারা বা ইঙ্গিত বুঝে তাঁর প্রয়োজন পূরণ করার চেষ্টা করা।

৩. স্নেহ ও দয়ার বহিঃপ্রকাশ

উস্তাদ ছাত্রের ওপর অহেতুক কঠোরতা করবেন না। রাসুল (সা.) ছিলেন চরম ধৈর্যশীল শিক্ষক। ছাত্র পড়া না বুঝলে উস্তাদ বিরক্ত না হয়ে দয়ার সাথে বারবার বুঝিয়ে দেবেন। ছাত্রের ব্যক্তিগত সমস্যা বা মনের অবস্থা বোঝার চেষ্টা করবেন। শাসন করার প্রয়োজন হলে তা যেন হয় সংশোধনের উদ্দেশ্যে, প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে নয়।

৪. নিঃস্বার্থ কল্যাণকামিতা (নাসিহত)

উস্তাদ ও ছাত্রের সম্পর্ক হবে সম্পূর্ণ ইখলাস বা নিষ্ঠার ওপর ভিত্তি করে।

উস্তাদের পক্ষ থেকে: ছাত্রকে কেবল কিতাব পড়ানোই নয়, বরং তাকে একজন মুত্তাকী (আল্লাহভীরু) মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার নিরন্তর চেষ্টা করা।

ছাত্রের পক্ষ থেকে : উস্তাদের উপদেশগুলোকে নিজের জীবনের পাথেয় হিসেবে গ্রহণ করা।

৫. উস্তাদের খেদমত ও দোয়া

মাদরাসার পরিবেশে উস্তাদের খেদমত করাকে বরকতের কারণ মনে করা হয়। উস্তাদের জুতো সোজা করে দেওয়া, তাঁর প্রয়োজনীয় জিনিস এগিয়ে দেওয়া বা তাঁর ছোটখাটো কাজে সাহায্য করা ছাত্রের জন্য সৌভাগ্যের বিষয়। উস্তাদের মন থেকে আসা 'দোয়া' একজন ছাত্রের জীবন বদলে দিতে পারে। তাই সর্বদা উস্তাদের সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করা।

৬. ইলমের আমানত রক্ষা

উস্তাদ যে ইলম ছাত্রের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন, তা একটি বিশাল আমানত। ছাত্রের দায়িত্ব হলো উস্তাদের শেখানো পথ অনুযায়ী আমল করা এবং সেই জ্ঞান অন্যের কাছে পৌঁছে দেওয়া। উস্তাদের ইন্তেকালের পরেও তাঁর জন্য দুআ করা এবং তাঁর পরিবারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা এই সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

মাদরাসার ছাত্র-উস্তাদ সম্পর্কটি হলো "ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার এক অপূর্ব সমন্বয়"। উস্তাদ যখন স্নেহের চাদর দিয়ে ছাত্রকে আগলে রাখেন এবং ছাত্র যখন শ্রদ্ধায় অবনত হয়ে উস্তাদের আনুগত্য করে, তখনই সেখানে আল্লাহর রহমত নাজিল হয় এবং ইলমের প্রকৃত নূর বিচ্ছুরিত হয়।

লেখক : চেয়ারম্যান, মাশকুল কুরআন ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক, অনলাইন হিফজ মাদরাসা

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

মাদরাসা শিক্ষা

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর