মাদরাসায় সম্পূর্ণ নকলমুক্ত পরীক্ষা চাই
মুহাম্মদ হেদায়ত উল্লাহ
প্রকাশ: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬:৫০
শিক্ষা মানুষের জীবনে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। শিক্ষা ছাড়া ব্যক্তি যেমন আলোকিত হতে পারে না, তেমনি একটি জাতিও উন্নতির শিখরে পৌছাতে পারে না। ইসলামি শিক্ষাব্যবস্থায় দাখিল, ফাজিল ও কামিল স্তর অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ। বিশেষ করে ফাজিল ও কামিল পর্যায় হলো উচ্চতর ইসলামি জ্ঞান অর্জনের স্তর, যেখানে একজন শিক্ষার্থী ভবিষ্যতে আলেম, মুফতি, শিক্ষক, ইমাম কিংবা দাঈ হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, বর্তমান সময়ে ফাজিল ও কামিল পরীক্ষায় নকলের প্রবণতা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ অবস্থায় ফাজিল কামিলে নকলমুক্ত পরীক্ষা নিশ্চিত করা একান্ত জরুরি হয়ে পড়েছে।
নকল হলো শিক্ষা ও নৈতিকতার পরিপন্থী একটি কাজ। নকলের মাধ্যমে শিক্ষার্থী সাময়িকভাবে ভালো ফলাফল অর্জন করলেও প্রকৃত জ্ঞান থেকে সে বঞ্চিত থাকে। এতে তার চিন্তাশক্তি ও সৃজনশীলতা বিকশিত হয় না। ফলস্বরূপ সে বাস্তব জীবনে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়। ইসলাম ধর্মে প্রতারণা, মিথ্যাচার ও অসততাকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সুতরাং নকল শুধু শিক্ষাগত অপরাধ নয়, এটি একটি গুরুতর নৈতিক ও ধর্মীয় অপরাধও বটে।
ফাজিল ও কামিল স্তরের শিক্ষার্থীরা সমাজের পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করেন। তারা মসজিদ, মাদরাসা ও বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন। যদি এই স্তরের শিক্ষার্থীরা নকলের মাধ্যমে সনদ অর্জন করে, তাহলে সমাজে অযোগ্য নেতৃত্ব সৃষ্টি হয়। এতে ইসলামি শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা কমে যায় এবং ধর্মীয় মূল্যবোধ দুর্বল হয়ে পড়ে।
নকল বৃদ্ধির পেছনে নানা কারণ বিদ্যমান। পরীক্ষাকেন্দ্রে দুর্বল তদারকি, দায়িত্বহীন পরীক্ষক, অসাধু কেন্দ্র পরিচালনা, প্রশ্নফাঁস, রাজনৈতিক বা প্রভাবশালী মহলের হস্তক্ষেপ এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে নৈতিকতার অভাব-এসবই নকলের প্রধান কারণ। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, কিছু শিক্ষার্থী পরিশ্রম না করে সহজে পাশ করার মানসিকতা নিয়ে নকলের আশ্রয় নেয়, যা তাদের ভবিষ্যৎ জীবনকে অন্ধকারে ঠেলে দেয়।
এই সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। প্রথমত, পরীক্ষাকেন্দ্রগুলোতে কঠোর নজরদারি নিশ্চিত করতে হবে। সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন, ভিজিল্যান্স টিম গঠন এবং দায়িত্ববান কেন্দ্র সচিব নিয়োগ করতে হবে। দ্বিতীয়ত, নকলের সঙ্গে জড়িত শিক্ষার্থী, শিক্ষক বেদ শো কর্মচারীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নিতে হবে। তৃতীয়ত, প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও সরবরাহ ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষা জোরদার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
শিক্ষকরা যদি শিক্ষার্থীদের সততা, পরিশ্রম ও আল্লাহভীতির শিক্ষা দেন, তাহলে নকলের প্রবণতা অনেকাংশে কমে যাবে। অভিভাবকদেরও সন্তানদের নকল থেকে বিরত থাকার বিষয়ে সচেতন হতে হবে এবং তাদের নিয়মিত পড়াশোনায় উৎসাহ দিতে হবে। পরিশেষে বলা যায়, ফাজিল কামিলে নকলমুক্ত পরীক্ষা নিশ্চিত করা শুধু একটি দাবি নয়, বরং এটি জাতির ভবিষ্যৎ রক্ষার একটি অপরিহার্য শর্ত। নকলমুক্ত পরীক্ষাই পারে প্রকৃত জ্ঞানী, যোগ্য ও চরিত্রবান আলেম তৈরি করতে। তাই শিক্ষা বোর্ড, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সমাজ- সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই ফাজিল কামিলে নকলমুক্ত পরীক্ষা বাস্তবায়ন সম্ভব।
লেখক : প্রভাষক- ইসলামিক স্টাডিজ, দশমিনা ইসলামিয়া কামিল এমএ মাদরাসা, পটুয়াখালী-বরিশাল

