Logo

বিনোদন

চিত্রনায়িকা থেকে নিঃস্ব হয়ে যেভাবে বস্তিতে ঠাঁই হয়েছিল বনশ্রীর

Icon

বিনোদন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২০:১৭

চিত্রনায়িকা থেকে নিঃস্ব হয়ে যেভাবে বস্তিতে ঠাঁই হয়েছিল বনশ্রীর
ঢাকাই সিনেমার ঝলমলে দুনিয়ায় এক সময় জ্বলে উঠেছিলেন এক উজ্জ্বল নক্ষত্র— নায়িকা বনশ্রী। তার পুরো নাম ছিল সাহিনা আকতার বনশ্রী। নব্বইয়ের দশকে প্রথম ছবিতেই দর্শক মাত করেছিলেন তিনি। খ্যাতি, অর্থ, সৌন্দর্য— কোনো কিছুরই অভাব ছিল না তার জীবনে। কিন্তু সেই স্বপ্নলোক থেকে ধীরে ধীরে নামতে নামতে একদিন তিনি পৌঁছান বাস্তবের কঠিন মাটিতে…যেখানে বেঁচে থাকার জন্য বিক্রি করতে হতো ফুল আর বই।

বনশ্রীর গল্প শুরু হয়েছিল মাদারীপুরের শিবচর থেকে। শৈশবে বাবার সঙ্গে চলে আসেন ঢাকায়। ছোট থেকেই গান-অভিনয়ের প্রতি তার অদম্য টান ছিল। সবাই বলত— তুমি দেখতে নায়িকা সুচরিতা বা দিতির মতো। সেই প্রশংসাই একদিন তাকে টেনে নিয়ে যায় এফডিসিতে।

১৯৯৪ সালে মুক্তি পায় তার প্রথম ছবি ‘সোহরাব রুস্তম’। নায়ক ছিলেন ইলিয়াস কাঞ্চন। ছবিটি হিট হওয়ার পর হাতে আসতে থাকে একের পর এক সিনেমা। মহা ভূমিকম্প, নেশা— প্রায় সবখানেই তিনি ছিলেন আলোচনায়। সেই সময় বনশ্রীর নাম উঠে আসে ঢাকাই চলচ্চিত্রের সম্ভাবনাময় নায়িকার তালিকায়।

কিন্তু পর্দার সাফল্যের আড়ালে চলছিল এক জটিল ব্যক্তিজীবন। 

কৈশোরেই প্রেম করে বিয়ে করেছিলেন শ্যামল কুমার কণ্ঠ নামের এক বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছেলেকে। যিনি বনশ্রীর প্রেমে পড়ে  ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে শ্যামল থেকে হয়ে গিয়েছিলেন মাসুদ চৌধুরী। দু’জনের সংসারে জন্ম নেয় কন্যা শ্রাবন্তী। কিন্তু একসময় সেই স্বামী-ই বনশ্রীকে ছেড়ে চলে যান, আর মেয়েকেও নিয়ে যান সাথে। এর পেছনেও রয়েছে এক করুণ ঘটনা। যে কারণে বনশ্রীর পেশাগত জীবনেও নেমে আসে দুর্ভাগ্য। 

বনশ্রীর হিট সিনেমা ‘সোহরাব রুস্তম’ ছবির প্রযোজক মোহাম্মদ ফারুক ঠাকুরের সঙ্গে প্রেমের গুঞ্জনে জড়িয়ে পড়েন বনশ্রী। প্রযোজক ফারুক খুনের মামলায় জড়িয়ে জেলে যান, আর সেই ঘটনা বনশ্রীর জীবনেও ফেলে কালো ছায়া। কেউ তাকে ফারুকের রক্ষিতা বলে দাবি করে, আবার কেউ তাকে প্রেমিকা বলে দাবি করে সংবাদ প্রকাশ করতো। সেই অপবাদের কারণে তাকে কাজ দেওয়া বন্ধ করে দেন অনেক পরিচালক-প্রযোজক। শোবিজ দুনিয়ার দোরগোড়া তার জন্য ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যায়।

এরপর শুরু হয় দারিদ্র্য আর সংগ্রামের দিন। শিল্পী সমিতির কাছে বারবার সাহায্য চেয়েও সাড়া পাননি তিনি। সেসময় শাকিব খান ও মিশা সওদাগর ছিলেন শিল্পী সমিতির নেতৃত্বে। বনশ্রীকে খালি হাতেই ফিরিয়ে দিয়েছিলেন শাকিব ও মিশা। একসময় বাধ্য হয়ে নেমে যান পথে। ফুটপাতে বই বিক্রি করেছেন, আবার কখনো বিক্রি করেছেন ফুল।

২০১৯ সালে গণমাধ্যম তাকে আবিষ্কার করে একজন ফুল বিক্রেতা হিসেবে। অনেকের মনে হয়েছিল— এ যেন সিনেমার গল্প! কিন্তু সেটি ছিল নিষ্ঠুর বাস্তব। প্রচারের আলোয় এলেও শান্তিতে দিন কাটাতে পারেননি তিনি। মিডিয়ার দৌড়ঝাঁপে বিরক্ত হয়ে আবার আড়ালে চলে যান।

পরে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার পাশে দাঁড়ান। ২০ লাখ টাকার সঞ্চয়ী তহবিল পেয়ে কিছুটা স্বস্তি এলেও বাকি জীবন কাটে নানা রোগ-শোক ও অভাবের সঙ্গে লড়াই করে।

অবশেষে, জীবনের সব সংগ্রামের ইতি টেনে মাদারীপুরে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বনশ্রী। পেছনে রেখে যান সিনেমার মতো নাটকীয় জীবনের এক গল্প— যেখানে ছিল ভালোবাসা, খ্যাতি, বিশ্বাসঘাতকতা আর টিকে থাকার নির্মম লড়াই।

তিনি হয়তো চলে গেছেন, কিন্তু রূপালি দুনিয়ার হারিয়ে যাওয়া নায়িকাদের আলোচনায় বনশ্রীর নাম চিরকাল বেঁচে থাকবে।

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

বিনোদন চলচ্চিত্র

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর