
ঢাকাই সিনেমার এক সময়ের জনপ্রিয় নায়িকা বনশ্রী জীবনের শেষ সময়টা কাটিয়েছেন অভাব–অভিযোগ আর দুঃখ–কষ্টে। নব্বইয়ের দশকে সোহরাব রুস্তম, মহা ভূমিকম্প, নেশাসহ একাধিক ছবিতে নায়িকা চরিত্রে অভিনয় করে আলোচনায় এসেছিলেন তিনি। ইলিয়াস কাঞ্চন, মান্না, আমিন খান প্রমুখ জনপ্রিয় নায়কদের বিপরীতে অভিনয় করে নিজের জায়গা পাকাপোক্ত করেছিলেন।
কিন্তু ব্যক্তিজীবনের টানাপোড়েন আর চলচ্চিত্র অঙ্গনের দ্বন্দ্ব তাকে একসময় পর্দার বাইরে ছুড়ে ফেলে। স্বামী মাসুদ চৌধুরীর সঙ্গে বিচ্ছেদ ও কন্যাসন্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর তিনি ক্রমেই একা হয়ে পড়েন। খুনের মামলায় তার ঘণিষ্ঠ প্রযোজক ফারুক জেলে গেলে বিতর্কের কারণে তার হাতে কাজও কমে আসে।
অভিনয় জীবনের অবসান হলে শুরু হয় দারিদ্র্যের নির্মম বাস্তবতা। এক সময় রাস্তায় দাঁড়িয়ে ফুল আর বই বিক্রি করতে দেখা যায় তাকে। তখনই গণমাধ্যমে উঠে আসে তার অসহায় জীবনের চিত্র।
সেসময় বনশ্রী জানিয়েছিলেন, চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির কাছে বারবার সাহায্য চেয়েও কোনো সহযোগিতা পাননি তিনি। এমনকি ব্যক্তিগতভাবে সে সময়ের চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি শাকিব খান ও সাধারণ সম্পাদক মিশা সওদাগরের সহায়তাও চেয়েছিলেন। কিন্তু তাদের কাছ থেকেও কোনো সাড়া মেলেনি বলে অভিযোগ করেছিলেন তিনি।
পরে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বনশ্রীর জন্য এগিয়ে আসেন। ২০ লাখ টাকার সঞ্চয়ী তহবিল করে দেন তিনি। কিন্তু তাতেও জীবনের কষ্ট ঘোচেনি। নানা রোগ–শোক আর আর্থিক অনটনেই কেটে যায় শেষ সময়।
১৬ সেপ্টেম্বর (মঙ্গলবার) মাদারীপুরে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই নায়িকা। বনশ্রীর মৃত্যুতে চলচ্চিত্রপ্রেমীরা স্মরণ করছেন এক উজ্জ্বল তারকাকে, যার জীবন ছিল সিনেমার মতোই উত্থান–পতনে ভরা।