আপনাকে কতবার সতর্কবার্তা দেওয়া হলে আপনি ভুল কাজ থেকে বিরত হবেন? ভাবুন তো, আপনার কর্মস্থলের প্রধান যদি কোনো কাজ নির্দিষ্ট সময়ে সম্পন্ন করতে বা ভুল এড়াতে বারবার সতর্ক করেন তাহলে কতবার সতর্ক করলে আপনি নিজেকে সংশোধন করবেন? নতুবা চাকুরিচ্যুত হওয়ার প্রস্তুতি নিতে হবে।
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনও তাঁর বান্দাদের ঠিক এভাবেই সতর্ক করেন। পবিত্র কোরআনে তিনি ঘোষণা করেছেন, "আমি ভয় দেখানোর জন্যই নিদর্শনগুলো পাঠাই।" (সুরা বনি ইসরাইল: ৫৯) আপনি স্বীকার করেন যে আল্লাহই একমাত্র পালনকর্তা এবং তিনি ইহকালের প্রতিটি কাজের হিসাব নেবেন পরকালে। অথচ অন্তরে দৃঢ় বিশ্বাস না থাকার কারণে আপনি সেই সতর্কবার্তাগুলোকে যথাযথভাবে গ্রহণ করতে পারছেন না। কোনো গর্হিত কাজে লিপ্ত হওয়ার মুহূর্তে ভুলে যান- আপনাকে সারাক্ষণ কেউ পর্যবেক্ষণ করছেন। আপনার প্রতিটি কথা, কাজ ও চিন্তা লিপিবদ্ধ হচ্ছে। আপনি মনে করেন আপনার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেওয়ার মতো কেউ নেই। আল্লাহ তায়ালা বলেন: "আজ আমি তাদের মুখে মোহর এঁটে দেব, তাদের হাত আমার সাথে কথা বলবে এবং তাদের পা তাদের কৃতকর্মের সাক্ষ্য দেবে।" (সুরা ইয়াসিন: ৬৫)
যিনি সামান্য মাটি থেকে আপনাকে অপূর্ব দেহ-কাঠামো দিয়েছেন, তাঁর পক্ষে কি সম্ভব নয় সেই দেহেরই অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে বাকশক্তি দান করা? চোখ বর্ণনা দেবে তার দেখা দৃশ্যগুলোর, হাত সাক্ষ্য দেবে তার কর্মের, আর ঠোঁট জানাবে উচ্চারিত প্রতিটি শব্দের হিসাব। আমরা পৃথিবীতে বেঁচে থাকার জন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করি। অথচ মৃত্যু-পরবর্তী অনন্ত জীবনের জন্য পরিকল্পনা করতে আমাদের অদ্ভুত অনিহা। দুর্যোগের মুহূর্তে আমরা সাময়িকভাবে ভয় পাই, আল্লাহকে স্মরণ করি, কিন্তু সবকিছু একটু স্বাভাবিক হলেই ভুলে যাই সতর্কবার্তা ফিরে যাই সেই পুরনো গুনাহের জগতে।
মিথ্যা, দুর্নীতি, খুন, চাঁদাবাজি, লুটতরাজ, ব্যভিচার, প্রতারণা- এগুলোর কোনোটাই আল্লাহর পছন্দনীয় নয়। তারপরও আমরা বারবার সেগুলোতে লিপ্ত হই। রাসুল (সা.) বলেছেন: "যখন অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জিত হবেং যখন গচ্ছিত আমানত আত্মত্মসাৎ করা হবে; জাকাতকে দেখা হবে জরিমানা হিসেবে; জ্ঞান অর্জিত হবে ধর্মীয় উদ্দেশ্য ছাড়া: স্বামীরা স্ত্রীর বাধ্য হয়েও মায়ের প্রতি বিরূপ আচরণ করবে; বন্ধুকে কাছে টেনে নিয়ে পিতাকে দূরে সরিয়ে দেবে; মসজিদে উচ্চস্বরে শোরগোল হবে; আর যখন সমাজের সবচেয়ে দুর্বল মানুষটি শাসকের আসনে বসবে- তখন তোমরা অপেক্ষা করো রক্তিম ঝড়, ভূমিকম্প, ভূমিধস, রূপবিকৃতি, পাথরবৃষ্টি এবং সুতা ছেঁড়া দানার মতো একটির পর একটি নিদর্শনের।" (তিরমিজি: ১৪৪৭)
আজ আমাদের সমাজে কি এসব বাস্তব রূপ নিচ্ছে না? ভুলের সীমা যখন অসহনীয় হয়ে ওঠে, তখনই দয়াময় আল্লাহ সতর্কবার্তা পাঠান যেন মানুষ ফিরে আসে সত্যের পথে। পূর্ববর্তী অনেক জাতি যেমন- নুহ (আ.) এর জাতি, লুত (আ.) এর জাতি, ফেরাউন, আদ, সামুদ-তাদের ধ্বংস করা হয়েছিল তাদের পাপের কারণে। কিন্তু আমাদের জন্য রয়েছে এক বিশেষ দয়া রাসুল (সা.)-এর উন্নত হওয়ার সৌভাগ্য। তাই আল্লাহ ধ্বংসের আগে সতর্কবার্তা পাঠান- যেন আমরা ফিরে আসি।
বিখ্যাত ইসলামী পণ্ডিত আল্লামা ইবনু কাইয়্যিম (রহ.) বলেছেন: "আল্লাহ মাঝে মাঝে পৃথিবীকে জীবন্ত হয়ে ওঠার অনুমতি দেন। তখন বড় ভূমিকম্প হয়, মানুষ আল্লাহর দিকে ফিরে আসে, তাওবা করে, গুনাহ ত্যাগ করে।"
আগের যুগে ভূমিকম্প হলে সৎকর্মশীল মানুষরা বলতেন-"আল্লাহ আমাদের সতর্ক করেছেন। ফিরে আসি তাঁর দিকে।"
ইতিহাসে আছে- ভূমিকম্পের সময় উমর ইবনে আবদুল আজিজ (রহ.) তাঁর গভর্নরদের দান-সদকা বাড়ানোর নির্দেশ দিতেন। কারণ দান-সদকা, অন্যায়-অবিচার রোধ এবং পাপ থেকে বিরত থাকাই আজাব থেকে বাঁচার অন্যতম উপায়।
তাই বলি- বেশি বেশি দান করুন। যাদের উপর আপনার হক আছে- তাদের ন্যায্য অধিকার দিন। অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে দাঁড়ান। আর সর্বক্ষণ আল্লাহকে স্মরণ করুন।
বলতেই হয়- আরও বড় ভূমিকম্প ধেয়ে আসছে। তাই সময় থাকতে নিজেকে শুধরে নেওয়া উচিত। সতর্ক থাকুন, প্রস্তুত থাকুন, কিন্তু আতঙ্কিত হবেন না। দয়াময় আল্লাহর ওপর ভরসা রাখুন। আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করুন, কোরআনের আলোকে জীবন পরিচালনার তাওফিক দিন এবং তাঁর সকল বান্দাকে রক্ষা করুন ও নিরাপদ রাখুন। আমিন।
লেখক : শিক্ষার্থী, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

