মহান রাব্বুল আলামিন সমস্ত পৃথিবীর পালনকর্তা। পৃথিবীতে যা কিছু আছে, সকলই তাঁর সৃষ্টি। তাঁর হুকুম পালনে সবাই বাধ্য। তিনি সকল ক্ষমতার অধিকারী। তিনি যখন যা ইচ্ছে করেন, তাই ঘটান। তিনি হও বললেই সব হয়ে যায়। মহাবিশ্বের মহামহিম রব তিনি। তাঁর হুকুম ব্যতিত একটা গাছের পাতাও নড়ে না। প্রকৃতির যতো পরিবর্তন, পরিবর্ধন বা আকষ্মিক ঘটনা, সকলই তার ইচ্ছায় হয়ে থাকে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ সে তো রবের হুকুমের অংশ, কুদরতি ইশারা, এসবের পিছনের হেকমত কেবল তিনিই জানেন।
মহাবিশ্বের অধিপতি কখনো সখনো বান্দাদেরকে কুদরতি নির্দশন সম্পর্কে জ্ঞাত করেন, কখনো বা জগৎবাসীর পাপের আধিক্যতার কারণে সতর্ক বার্তা পাঠান। পবিত্র কোরআনে এরশাদ আছে, “আমি নিদর্শনসমূহ (প্রাকৃতিক বিপর্যয়) পাঠাই শুধুমাত্র ভয়-সতর্কতা প্রদর্শনের জন্য।” (সুরা আল-ইসরা: আয়াত ৫৯) দয়ালু রব আমাদের বড় কোন ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার আগে ছোট ছোট সতর্কতা প্রদান করেন। বান্দা হিসেবে আমরা তাঁর শরণাপন্ন হওয়া, পাপ থেকে সরে আসা, ইবাদতে মনোনিবেশ করা, ব্যক্তি জীবন, পরিবার এবং সমাজ থেকে পাপের আধিক্য মুছায় সচেষ্ট হওয়ার সবক আমরা এসব বিপর্যয় থেকে নিতে পারি।
ভূমিকম্প প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কঠিন একটা দিক। কখন কবে ভূমিকম্প ঘটতে পারে তার আগাম সংকেত সম্পর্কে বিজ্ঞান এখনো অজ্ঞ। তাই ভূমিকম্পের পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে থাকা প্রায় অসম্ভব। মহান সৃষ্টিকর্তা ভূমিকম্প দিয়ে পাপিষ্ঠ জাতীকে শাস্তি দেওয়ার নজির ইতিহাস পাঠে আমরা পাই। সামুদ জাতি পাপ করতে করতে যখন সীমালঙ্ঘন করে ফেলে, তখন তাদের উপর আজাব এসেছিল ভূমিকম্প’র রূপে। আল কোরআনের বর্ণনা, ‘অতঃপর ভূমিকম্প তাদের গ্রাস করল, আর তারা নিজ গৃহে উপুড় হয়ে পড়ে রইল।’ (সুরা আল-আরাফ: আয়াত ৭৮)।
মানুষের করা সকল পাপ-ই ভয়ংকর। পাপের কারণেই তারা কঠিন বিপদের সম্মুখীন হয়। বান্দার ছোট বড় যেকোনো পাপ-ই বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। তবে অশ্লীলতা, বেহায়াপনা এবং সমাজ বিধ্বংসী পাপ যখন দেশ ও জনপদে ছড়িয়ে পড়ে, ভূমিকম্পের মতো ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয় তখন বেশি বেশি ঘটিত হয়। বিশ্ববিখ্যাত হাদিসগ্রন্থ তিরমিজি শরিফে এসেছে, ভূমিকম্প সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘এ উম্মত ভূমিকম্প, বিকৃতি এবং পাথর বর্ষণের মুখোমুখি হবে। একজন সাহাবি জিজ্ঞাসা করলেন, কখন সেটা হবে হে আল্লাহর রাসুল? তিনি বলেন, যখন গায়িকা এবং বাদ্যযন্ত্রের প্রকাশ ঘটবে এবং মদপানের সয়লাব হবে।’ (তিরমিজি: ২২১২)। হাদিসের ভাষ্য যে বিষয়গুলো উঠেছে সেই সমস্ত পাপকাজ আজকাল সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে আছে। সমাজব্যবস্থায় আমাদের এগুলোর প্রতিকারের পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মাধ্যমে মহান আল্লাহ পাক, পাপিদের শাস্তির পাশাপাশি সতর্কতা ও সুপথে ফিরে আসার ইশারা দিয়ে থাকেন। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, “মানুষের কৃতকর্মের ধরুন জলে-স্থলে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে; যাতে ওদের কোনো কোনো কর্মের শাস্তি ওদের আস্বাদন করানো হয়। যাতে ওরা সৎপথে ফিরে আসে।’ (সুরা : রুম, আয়াত : ৪১)
রব্বে করীম আমাদের অগাধ ভালোবাসেন। তিনি তার কুদরতি নিদর্শন দিয়ে সতর্ক করেন মহাবিপদের। আমাদের উচিৎ ভূমিকম্পের ভয়ে বিচলিত না হয়ে রবের আশ্রয় কামনা করা। স্বীয় পাপের ক্ষমা প্রার্থনা করা। সমাজ বিধ্বংসী পাপ, অশ্লীলতা ও বেহায়াপনা প্রতিরোধে কাজ করা। এভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করে গেলে ইনশাআল্লাহ মহাবিশ্বের মহামহিম রব আমাদের এই ভূমিকে বড় ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে হেফাজত রাখার প্রত্যাশা করা যায়।
লেখক: কবি, গীতিকার ও প্রাবন্ধিক, রাজনগর, মৌলভীবাজার।

