Logo

ইসলাম

নববর্ষের ভাবনা

Icon

উবায়দুল হক খান

প্রকাশ: ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:৩১

নববর্ষের ভাবনা

সময় এক অবিরাম স্রোত। সে থেমে থাকে না, অপেক্ষা করে না কারও জন্য। পুরোনো বছরের শেষ প্রহরে দাঁড়িয়ে মানুষ তাই স্বভাবতই ফিরে তাকায় পেছনের পথে-কী হারালাম, কী পেলাম, কী শিখলাম। আর নববর্ষ আসে সেই আত্মসমীক্ষার দুয়ার খুলে দিয়ে। নববর্ষ কেবল ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টে যাওয়ার নাম নয়; এটি নতুন করে ভাবার, নতুন করে গড়ার এবং নিজেকে সংশোধনের এক গুরুত্বপূর্ণ উপলক্ষ।

নববর্ষের প্রথম আলো আমাদের মনে করিয়ে দেয়- প্রতিটি সূর্যোদয়ই নতুন সম্ভাবনার বার্তা নিয়ে আসে। গত বছরের ভুল, ব্যর্থতা, হতাশা যদি আমাদের পথরোধ করে দাঁড়ায়, তবে নববর্ষ সেই জড়তা ভাঙার ডাক দেয়। মানুষ ভুল করে, পিছলে পড়ে; কিন্তু মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব এখানেই যে সে ভুল থেকে শিক্ষা নিতে পারে। নববর্ষের ভাবনায় তাই অনুশোচনা যেমন থাকে, তেমনি থাকে আশার দীপশিখা।

ব্যক্তিজীবনে নববর্ষের গুরুত্ব অপরিসীম। আমরা অনেকেই বছরের শুরুতে সংকল্প করি- সময়কে ভালোভাবে কাজে লাগাব, সত্যের পথে থাকব, অন্যায়ের সাথে আপস করব না। কিন্তু বছর যত এগোয়, সংকল্প তত ঝাপসা হয়ে যায়। নববর্ষ আমাদের আবার স্মরণ করিয়ে দেয় আত্মশুদ্ধির প্রয়োজনীয়তা। নিজের চরিত্র, আচরণ, নৈতিকতা ও দায়িত্ববোধের দিকে নতুন করে তাকানোর সুযোগ এনে দেয় এই সময়।

নববর্ষের ভাবনায় পরিবারও একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। ব্যস্ততার জীবনে আমরা অনেক সময় পরিবারকে অবহেলা করি। অথচ পরিবারই মানুষের প্রথম পাঠশালা, ভালোবাসা ও সহমর্মিতার নিরাপদ আশ্রয়। নববর্ষে তাই পারিবারিক সম্পর্কগুলোকে নতুন করে উষ্ণ করার, ভুল বোঝাবুঝি দূর করার এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা বাড়ানোর অঙ্গীকার থাকা উচিত।

সামাজিক জীবনেও নববর্ষ বহন করে নতুন প্রত্যাশা। সমাজে বৈষম্য, হিংসা, অসহিষ্ণুতা ও অন্যায় আমাদের অগ্রযাত্রাকে বারবার বাধাগ্রস্ত করে। নববর্ষের ভাবনায় তাই সমাজকে সুন্দর করার দায় আমাদের সবার। দুর্নীতিমুক্ত, ন্যায়ভিত্তিক ও মানবিক সমাজ গড়ার স্বপ্ন নববর্ষে আরও দৃঢ় হওয়া প্রয়োজন। একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে নিজের অবস্থান থেকে সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ানোর শপথই হতে পারে নববর্ষের শ্রেষ্ঠ উপহার।

শিক্ষার্থীদের জীবনে নববর্ষের তাৎপর্য আরও গভীর। জ্ঞানার্জন, শৃঙ্খলা ও সময়ানুবর্তিতা-এই তিনটি গুণ একজন শিক্ষার্থীকে সফলতার পথে এগিয়ে নেয়। নববর্ষ শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন অধ্যায় শুরুর প্রতীক। অতীতের অবহেলা, অলসতা ও ব্যর্থতাকে পেছনে ফেলে মনোযোগী ও লক্ষ্যনিষ্ঠ হওয়ার আহ্বান জানায় এই সময়। নববর্ষের ভাবনায় ধর্মীয় ও নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিও গুরুত্বপূর্ণ।

প্রতিটি নতুন বছর আমাদের আয়ু থেকে একটি বছর কমিয়ে দেয়। এই উপলব্ধি মানুষকে দায়িত্বশীল করে তোলে। স্রষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ, ইবাদতে মনোযোগ বৃদ্ধি এবং মানবসেবার মানসিকতা জাগ্রত করা নববর্ষের অন্যতম শিক্ষা। আত্মশুদ্ধি ও নৈতিক উন্নয়ন ছাড়া কোনো নতুন বছরই সত্যিকার অর্থে নতুন হয়ে ওঠে না। জাতীয় জীবনে নববর্ষ মানে নতুন স্বপ্ন, নতুন পরিকল্পনা ও নতুন চ্যালেঞ্জ। উন্নয়ন, শান্তি ও স্থিতিশীলতার পথে এগিয়ে যেতে হলে অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে বাস্তবভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ জরুরি। নববর্ষ আমাদের শেখায় ঐক্যবদ্ধ থাকলে অসম্ভবও সম্ভব হয়। বিভক্তি নয়, ঐক্যই জাতির শক্তি। এই চেতনাই নববর্ষের মূল বার্তা হওয়া উচিত।

নববর্ষ কোনো উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা মাত্র নয়; এটি একটি মানসিক প্রস্তুতির নাম। পুরোনোকে ঝেড়ে ফেলে নতুন করে নিজেকে গড়ে তোলার সুযোগই নববর্ষের প্রকৃত সৌন্দর্য। যদি আমরা নববর্ষের ভাবনাকে শুধু শুভেচ্ছা বিনিময়ে সীমাবদ্ধ না রেখে জীবনঘনিষ্ঠ পরিবর্তনের অঙ্গীকারে রূপ দিতে পারি, তবেই নববর্ষ সার্থক হবে।

নববর্ষ আমাদের জীবনে ফিরে ফিরে আসে এই আশাবাদ নিয়ে মানুষ পারলে বদলাতে পারে, সমাজ পারলে সুন্দর হতে পারে। সেই বিশ্বাসকে বুকে ধারণ করেই আমরা এগিয়ে যাই নতুন বছরের পথে।

লেখক : সম্পাদক, প্রতিভা

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

ইসলাম ধর্ম

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর