নববর্ষ আসে কোনো শব্দ না করেই। ক্যালেন্ডারের পাতায় তারিখ বদলায়, কিন্তু মানুষের ভেতরে বদল আসতে সময় লাগে তবু এই বদলের ক্ষুদ্র ইশারা নিয়েই নববর্ষ আমাদের দরজায় দাঁড়ায়। পুরোনো বছরের ধুলো জমা স্মৃতি ঝেড়ে ফেলার এক নীরব আহ্বান নিয়ে সে বলে- চাও, আবার নতুন করে চাও।
আমার প্রত্যাশা খুব বড় নয়, আবার খুব ছোটও নয়। আমি চাই সকালগুলো একটু শান্ত হোক। সংবাদ শোনার আগে হৃদয়টা যেন ভেঙে না যায়। রাস্তায় নামলে মানুষের চোখে চোখ রাখার সাহস থাকুক- অবিশ্বাস নয়, কৌতূহল থাকুক। হাত বাড়ালে হাত ফিরিয়ে নেওয়ার ভয় নয়, বরং ভরসা জন্মাক।
নববর্ষে আমি চাই শব্দগুলো সৎ হোক। মিথ্যা প্রতিশ্রুতি, কাগুজে আশ্বাস আর মুখোশধারী ভাষার ভিড় থেকে আমরা বেরিয়ে আসি। কথা বললে যেন তা দায়বদ্ধ হয়, নীরব থাকলেও যেন তা কাপুরুষতা না হয়। কলমে লেখা শব্দ হোক বিবেকের প্রতিনিধি, আর কণ্ঠে উচ্চারিত বাক্য হোক মানবিকতার সাক্ষ্য।
আমি প্রত্যাশা করি শিক্ষা হোক কেবল সনদের দৌড় নয়, চরিত্র গঠনের আলো। ঘরে ঘরে বই থাকুক, কিন্তু তার চেয়েও বেশি থাকুক প্রশ্ন করার সাহস। শিক্ষক কেবল পাঠদানকারী নন, পথদর্শক হোন; আর শিক্ষার্থী কেবল শ্রোতা নয়, চিন্তাশীল মানুষ হয়ে উঠুক।
নববর্ষে আমার চাওয়া- শ্রমের মর্যাদা। যিনি মাঠে কাজ করেন, যিনি কারখানায় ঘাম ঝরান, যিনি অফিসে সময় দেন- সবাই যেন সম্মানের সমান বাতাস পান। কাজের মূল্য নির্ধারিত হোক ন্যায্যতায়, পরিচয়ে নয়। ক্ষুধা যেন কোনো মানুষের পরিচয় না হয়।
আমি চাই রাজপথে ন্যায়বোধ ফিরুক। শক্তির ভাষা নয়, যুক্তির ভাষা শোনা যাক। মতভিন্নতা যেন শত্রুতা না হয়, বরং উন্নতির সেতু হোক। আইন কাগজে নয়, জীবনে কার্যকর হোক। দুর্বল যেন শক্তের দয়ার অপেক্ষায় না থাকে।
নববর্ষে প্রত্যাশা করি সম্পর্কগুলো সহজ হোক। পরিবারে সময়ের অভাব কমুক, সন্তানের চোখে ফোনের আলো নয়, মায়ের হাসি প্রতিফলিত হোক। বন্ধুত্বে হিসাব নয়, আন্তরিকতা থাকুক। ভুল হলে ক্ষমা চাওয়ার সাহস আর ক্ষমা করার উদারতা- দুটোই যেন বাড়ে।
সবশেষে, আমি চাই মানুষ নিজেকে ফিরিয়ে নিক। ভিড়ের মধ্যে হারিয়ে যাওয়া সত্তাটাকে আবার আবিষ্কার করুক। প্রতিদিন একটু ভালো হওয়ার চেষ্টা করুক-এই ছোট্ট চেষ্টা থেকেই বড় পরিবর্তন জন্মায়।
নববর্ষ তাই আমার কাছে উৎসবের আতশবাজি নয়, একটুখানি আলো। সেই আলোয় আমরা শব্যাজ নয়, একটুখা যদি নিজেদের মুখটা পরিষ্কার করে দেখতে শিখি, তাহলেই বছরটি সার্থক।
লেখক : সম্পাদক, প্রতিভা

